গাজায় মানবিক সংকটের মধ্যে অবশেষে আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করেছে ইজরায়েল। তবে সেই ত্রাণই নতুন করে বিপদের কারণ হয়ে উঠেছে বহু ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে। শনিবার রাত থেকে গাজায় আকাশপথে খাবার ও ত্রাণসামগ্রী ফেলা শুরু করেছে ইজরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। কিন্তু কিছু বস্তা সরাসরি পড়েছে জনবসতির উপর। সেই বস্তার আঘাতেই অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলি।
ত্রাণ ফেলা হয়েছে গাজার উত্তরের বেইট লাহিয়া, দেইর আল-বালাহ্ এবং আল-মাওয়াসির মতো এলাকায়। তবে গাজাবাসীর অভিযোগ, যে সাতটি ত্রাণের বস্তা ফেলা হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র পাঁচটি পৌঁছেছে সাধারণ মানুষের কাছে। বাকি দুটি এমন জায়গায় পড়েছে, যেখান থেকে সংগ্রহ করা কার্যত অসম্ভব।
এদিকে, পরিস্থিতির সামান্য উন্নতির আশায় রবিবার থেকে গাজায় ‘সামরিক বিরতি’র ঘোষণা করেছে ইজরায়েল। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট এলাকায় সামরিক অভিযান বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছে আইডিএফ। পাশাপাশি, ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কিছু রাস্তা ত্রাণবাহী গাড়ির জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে সেনাবাহিনীর তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এই সাময়িক বিরতির অর্থ যুদ্ধ বন্ধ নয়, সেনা অভিযান জারি থাকবে।
ইজরায়েলের তরফে দাবি করা হয়েছে, গাজায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট নিরসনে তারা নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। গাজার একমাত্র জল বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সরবরাহ রবিবার থেকে চালু করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে আইডিএফ। তবে বাস্তবে সেই উদ্যোগ কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে।
ত্রাণ সাহায্যকারী আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি ইজরায়েলের এই উদ্যোগকে ‘অপর্যাপ্ত ও প্রতীকী’ বলে অভিহিত করেছে। তাদের অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে গাজায় খাদ্য সংকট তৈরি করা হয়েছে। শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে, বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন না খেতে পেয়ে। রাষ্ট্রসঙ্ঘ, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স সহ বহু দেশের পক্ষ থেকেই এই নীতির তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি অ্যালবানিজ প্রকাশ্যে নিন্দা করেছেন ইজরায়েলের ভূমিকার।
ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর যুক্তি, রাষ্ট্রপুঞ্জের পাঠানো ত্রাণসামগ্রী হামাসের হাতে পড়ছে, তাই গাজায় সরাসরি ত্রাণ প্রবেশ রুদ্ধ করা হয়েছে। বক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধের মুখে কিছুটা নমনীয় হয়েছে তেল আভিভ। তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ‘আকাশপথে ত্রাণ ফেলা’ কার্যত ক্ষুধার্ত জনতার সঙ্গে উপহাসের শামিল। এ যেন ক্ষুধার্তদের সামনে একফোঁটা জল ছুড়ে দেওয়া, যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল।
গাজার পরিস্থিতি এখনও সঙ্কটজনক। একদিকে অল্প কিছু ত্রাণসামগ্রী, অন্যদিকে ক্রমাগত সামরিক অভিযানে বিপর্যস্ত জনজীবন। মানবিক বিপর্যয় এড়াতে এখন প্রয়োজন স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও নিরবচ্ছিন্ন ত্রাণ সরবরাহ – এই আবেদনই জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।