ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্সে গত শনিবার যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, তাতে ক্ষতি হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার। এর জেরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের রপ্তানি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। বিভিন্ন দেশে রপ্তানির জন্য তৈরি বিপুল পরিমাণ পোশাক মজুত ছিল এই কমপ্লেক্সে। ঢাকার এক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর জেরে সাময়িকভাবে উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। পাশাপাশি, এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর বিমানবন্দরের নিরাপত্তা, পরিকাঠামো ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হাজার হাজার কোটি টাকার বলে মনে হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, অসামরিক বিমান পরিবহণ সংস্থা কী এই ধরণের ঘটনা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত ? এই ধরণের সংবেদনশীল স্থানে এমন দুর্ঘটনা কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি কোনও নাশকতা তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন।’ বিকেএমইএ-র কার্যকরী সভাপতি ফাজ়ল শামিম এহসান জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের ওই কার্গো ভিলেজে আগুন লাগায় অনেক কাঁচামালও পুড়ে গিয়েছে। ফলে উৎপাদন ধাক্কা খেতে পারে।
ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগুন লাগে শনিবার। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভানোর জন্য ৩৭টিরও বেশি দমকলের ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়। যে সব পণ্য আমদানি বা রপ্তানি করা হয়, তা রাখা থাকে বিমানবন্দরের কার্গো কমপ্লেক্স চত্বরে। সেই পণ্যের তালিকায় রয়েছে রেডিমেড পোশাক, বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম, ফুল, ওষুধ, কৃষিজ দ্রব্য, কুরিয়রের জিনিস। সামগ্রিকভাবে যার মূল্য কোটি টাকার বেশি। এই কার্গো ভিলেজ থেকে রোজ কয়েক হাজার টন পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আবার বিদেশ থেকে রোজ আসেও প্রায় হাজার টন পণ্য। সেই সমস্ত পণ্য অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে যাওয়ায় বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে বহু সংস্থা। বিমানবন্দরের এক আধিকারিক বলেন, ‘শুধু পণ্য পুড়ে যাওয়াই নয়, আমদানি-রপ্তানির শৃঙ্খলকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে এই দুর্ঘটনা। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।’ মনে করা হচ্ছে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে কয়েকশো কোটি বাংলাদেশি টাকার পণ্য।
এই অগ্নিকাণ্ডে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের বিপুল ও দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্যিক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভারতীয় মূল্যে প্রায় ৮ হাজার ৭৯১ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অনুমান। অগ্নিকাণ্ডের জেরে সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের রেডিমেড পোশাক শিল্পের। অগ্নিকাণ্ডের জেরে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং রপ্তানির ধারাবাহিকতা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের বিশেষজ্ঞরা।
চিনের পরই বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এই শিল্পে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয় এবং দেশের ডিজিপির ১০ শতাংশেরও বেশি অবদান রয়েছে পোশাক শিল্পখাতের। কিন্তু যে ক্ষতি হয়েছে তাতে রপ্তানি বাণিজ্যও বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে পারে, ধাক্কা আসতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও।