ক্রমশই জটিল হচ্ছে ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি। সেই আবহে এবার ইজরায়েলের পাশে থেকে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শামিল হতে পারে আমেরিকা, তেমনই আশঙ্কা করা হচ্ছে। আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে খবর। যদিও হোয়াইট হাউজের তরফে কোনও ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। তবে জল্পনা বাড়িয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য।
মঙ্গলবারই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ করতে বলেছিলেন ট্রাম্প। পাশাপাশি ট্রাম্প জোরের সঙ্গে বলেছিলেন, খামেনেই কোথায় লুকিয়ে রয়েছেন তা তিনি জানেন। ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ মাধ্যমে লেখেন, ‘আমরা জানি সে কোথায় লুকিয়ে রয়েছে, চাইলে এখনই আঘাত হানতে পারি, কিন্তু আপাতত সেটা করছি না’।
ট্রাম্প দাবি করেছেন, শুধুমাত্র আমেরিকার নাগরিক ও সেনাদের বিরুদ্ধে পাল্টা হামলা আটকাতেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যা করছে না যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা চাই না, সাধারণ নাগরিক বা আমাদের সেনাদের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হোক। ধৈর্য হারাচ্ছি আমরা।’ ট্রাম্প বিস্ফোরক এই মন্তব্যগুলি এমন সময়ে করেছেন যখন তিনি ৯.৫ মিলিয়ন ইরানি বাসিন্দাকে দেশ ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে জি ৭ সম্মেলন মাঝপথে ছেড়ে ওয়াশিংটনের দিকে রওনা হন। ইরানকে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরই হোয়াইট হাউসে মার্কিন গোয়েন্দাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। বৈঠকে আমেরিকার পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলবার সকালে এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি কোথাও বলিনি, আমি যুদ্ধবিরতি চাইছি। আমরা যুদ্ধবিরতির চেয়েও ভালো কিছু চাইছি।’ তিনি বলেন, ‘ওরা চুক্তি করল না। আমি বলেছিলাম, ‘চুক্তিটা করে ফেলো। এখন আমি বেশি আলোচনার মুডে নেই।’ তবে কূটনৈতিক বিকল্প এখনও রয়েছে। ট্রাম্প এমনও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে ইরানে আলোচনার জন্য পাঠানো হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ ষষ্ঠ দিনে পড়ল। দুই দেশের হামলায় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন আরও অনেকে। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারই তেহরান খালি করার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। জি-৭ বৈঠক থেকে এক দিন আগেই ফিরে গিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলি ধ্বংস করতে ইজরায়েলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন ট্রাম্প।
ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে প্রথম থেকেই ইজরায়েলের পাশে রয়েছে আমেরিকা। ইরানের দাবি, ইজরায়েলকে সব রকম ভাবে সাহায্য করছেন ট্রাম্প। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করে আসছেন, তিনি যুদ্ধ নয়, শান্তি চান। ইরানকে হামলা বন্ধ করা বার্তাও দেন ট্রাম্প। মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর ফোনে কথা হয়। দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে কী কথা হয়েছে তা অবশ্য জানা যায়নি।
হোয়াইট হাউসের তরফে জানানো হয়েছে, ইরান-ইজরায়েল সংঘাতে তারা যোগ দিচ্ছে না। তবে নেতানিয়াহু চান, আমেরিকা এই যুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ করুক, যাতে ইরান তাদের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করে। আমেরিকাও ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বার বার এই বিষয়ে ইরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এই বিষয়ে আমেরিকার সঙ্গে কোনও আলোচনা চায় না ইরান।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার থেকেই ইরানকে হুমকি দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। তাঁর হুঁশিয়ারি ছিল, ইরান যদি কোনও ভাবে আমেরিকার উপর হামলা চালানোর চেষ্টা করে, তা হলে ‘তছনছ’ করে দেওয়া হবে। এক ধাপ এগিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভান্স মঙ্গলবার সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের বার্তা দিয়েছিলেন।সেই আবহেই দেখা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে গোয়েন্দাদের সঙ্গে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেন।