বাংলাদেশে ইউনূসের শাসনকালে মানুষের বাকস্বাধীনতা বিপন্ন হয়েছিল অনেক আগেই। এবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। গোপালগঞ্জের হিংসা নিয়ে সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদী মন্তব্য করে বরখাস্ত হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। প্রায় দুই দশক ধরে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ওই অধ্যাপিকার নাম নীলিমা আখতার।
প্রসঙ্গত, সংখ্যালঘু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় প্রভু থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী এমনকি প্রশাসনিক স্তরের সরকারি কর্মীদেরও বর্তমান সরকার বিরোধী মন্তব্যের জন্য বিভিন্নরকম সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের উপরেই নেমে এসেছে শাস্তির খাড়া। নীলিমা আখতারকে বরখাস্ত তাঁরই একটি সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত।
জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া হিংসা প্রসঙ্গে ইউনূস সরকার এবং তাঁর পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ফেসবুকে সরব হয়েছিলেন নীলিমা। ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শ ও ভূমিকার কথা তুলে ধরেছিলেন। পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছিলেন জুলাই আন্দোলন নিয়েও। এর পরই তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষেপে যায় বর্তমান শাসকপন্থীরা। সেই বদলা নিতেই তাঁকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের পর তথ্যটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন অধ্যাপিকা নীলিমা। তিনি শুক্রবার সমাজমাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার প্রিয় প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাকে সকল প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক দায়িত্ব থেকে বিরত করা হয়েছে। আমার অপরাধ, আমি ফেসবুকে মত প্রকাশ করেছি! আমি ২০ বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি! আমার বিরুদ্ধে কোনও দিন একটি ছোট্ট অভিযোগও ওঠেনি। শুধু একটি ফেসবুক পোস্টের কারণে আমাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’
নীলিমা আরও লেখেন, ‘আমার অপরাধ আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। ২০২৪ সালের আজকের দিনে প্রোফাইল পিকচারে লাল রং না রেখে আমি শোকের মাসের কালো রং রেখেছিলাম, বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়েছিলাম। জুলাই আন্দোলনকে প্রতিক্রিয়াশীলদের আন্দোলন হিসাবে আখ্যায়িত করে বক্তব্য রেখেছিলাম! বলেছিলাম, মৌলবাদী শক্তি তরুণদের ব্যবহার করছে। আমার অপরাধ — আমি মধ্যপন্থী এবং প্রগতিশীল বাংলাদেশে বিশ্বাস করি, যেখানে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। আমার অপরাধ — আমি দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কথা বলি।’
গত বছর জুলাই মাসে শেখ হাসিনার পতনের সূচনা হয়েছিল। সেই কারণে এই বছরের ১ জুলাই থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করে এনসিপি। মাসব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোপালগঞ্জেও পদযাত্রা করে দলটি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জেও একটি জন সমাবেশ করে। ওই পদযাত্রা ঘিরেই ছড়িয়ে পড়ে অশান্তির আগুন। শেখ হাসিনার পতন উদযাপনের অনুষ্ঠান হিসেবেই এই সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশের শাসকপন্থীরা। পাশাপাশি, তাঁরা মুজিবুরের কবর ভাঙার কর্মসূচিরও ডাক দিয়েছিলেন বলে খবরে প্রকাশ। জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি’র এই সমাবেশ ঘিরে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। মৃত্যু হয় ৩ জনের। আহত হন আরও অনেকে।