ভারতের সঙ্গে দূরত্ব কমাতে উদ্যোগী ঢাকা

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে সাম্প্রতিক দূরত্ব কাটাতে উদ্যোগী হয়েছে বাংলাদেশ। এমনই দাবি করলেন মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী প্রশাসনের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আর খারাপের দিকে যাবে না। সেই লক্ষ্যেই কাজ করছে বর্তমান প্রশাসন। এই বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অবগত রয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও।

সালেহউদ্দিনের মতে, দু’দেশের সম্পর্কের অবনতির নেপথ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চলতে থাকা ভারতবিরোধী প্রচার বড় ভূমিকা নিয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই দিল্লি ও ঢাকার সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। এর প্রভাব পড়েছে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে। আমদানি-রপ্তানিতেও দু’দেশের প্রশাসনের তরফে কাটছাঁট করা হয়।

তবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের দাবি, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এখনও স্বাভাবিক রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আলাদা করে দেখা উচিত। রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য সরকার কাজ করছে।’ এই প্রেক্ষাপটেই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে মঙ্গলবার ভারত থেকে ৫০ হাজার টন সেদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে বলে জানান সালেহউদ্দিন। তাঁর মতে, এটাই দু’দেশের সম্পর্ক উন্নতির স্পষ্ট ইঙ্গিত। তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি হোক বা স্বাস্থ্য— ভারত সব সময়ই বাংলাদেশের পাশে থাকে।’


চাল আমদানি প্রসঙ্গে তিনি যুক্তি দেন, ‘ভারত ছেড়ে যদি ভিয়েতনাম থেকে চাল আনতে হয়, তাহলে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেশি খরচ পড়বে। ভারত থেকে যদি ঠিকঠাক দামে চাল পাওয়া যায়, তবে অন্য দেশে যাওয়ার দরকার কী?’ একই সঙ্গে তিনি পেঁয়াজ আমদানির প্রসঙ্গও তোলেন। তাঁর আফসোস, ‘ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। আগে নিলে দেশে পেঁয়াজের দাম আরও কম হত।’

ভারতের ভূমিকা নিয়ে সালেহউদ্দিন স্পষ্ট করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত হস্তক্ষেপ করে না। তাঁর কথায়, ‘ওরা (ভারত) হয়তো কিছু কিছু বক্তব্য রাখে, আমরাও রাখি।’ তিনি জানান, ইউনূস আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাস করেন। ভারত বাংলাদেশের বড় প্রতিবেশী হলেও, নেপাল, ভুটান এবং পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নের কথা ভাবছে ঢাকা। তাঁর মন্তব্য, ‘নেপাল, ভুটানের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক। পাকিস্তানের সঙ্গে আস্তে আস্তে সম্পর্ক হচ্ছে। আমরা শুধু বাংলাদেশ নিয়ে কখনওই থাকতে পারব না।’

উল্লেখ্য, নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশে বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা বাড়ছে। ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান জুলাই আন্দোলনের অন্যতম মুখ ওসমান হাদি। তাঁর মৃত্যুর পর গত বৃহস্পতিবার থেকে ফের উত্তাল হয়ে ওঠে পরিস্থিতি— ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং তাণ্ডবের ঘটনা সামনে আসে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বাংলাদেশি নেতার মুখে ভারতবিরোধী মন্তব্য শোনা গিয়েছে, যা দু’দেশের সম্পর্কে নতুন করে চাপ সৃষ্টি করেছে।

এই ভারতবিরোধী প্রচারকে ভালো চোখে দেখছেন না সালেহউদ্দিন। তাঁর মতে, ‘এগুলো যারা করছে, তাঁরা আমাদের জন্য বিষয়টা আরও জটিল করে তুলছে। আমরা এসব চাই না। আমাদের জাতীয় মনোভাবও এমনটা নয়।’ তিনি স্পষ্ট করে জানান, শুধু প্রতিবেশী দেশ নয়— কোনও দেশের সঙ্গেই খারাপ সম্পর্ক চায় না বাংলাদেশ।