বিতর্কিত টুইট ইভাঙ্কার

জো বাইডেন ও ডােনাল্ড ট্রাম্প (Photo:Xinhua/IANS)

মেয়াদের আগেই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্পকে। ক্যাপিটলে হামলার পরেই বৃহস্পতিবার এ নিয়ে আলােচনা বসল খােদ ট্রাম্পেরই মন্ত্রিসভা। আর মাত্র দু’সপ্তাহ পরেই সরকারিভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসবেন প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট জো বাইডেন।

কিন্তু তার আগে আমেরিকার সময় অনুযায়ী বুধবার ক্যাপিটলে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ট্রাম্পকে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত, বুধবার আমেরিকার সংসদ ভবন ক্যাপিটলে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। বিক্ষোভকারী ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালাতে হয় পুলিশকে। অন্তত চার জনের মৃত্যু হয় ওই ঘটনায়। ট্রাম্পের উস্কানিতেই এই হামলা হয়েছে বলে জল্পনা।

আর এই ঘটনার পরেই ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার সদস্যরা আলােচনায় বসেন। ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল পেন্সও। উল্লেখ্য, এই ঘটনার পর হামলাকারীদের আমেরিকার দেশপ্রেমিক আখ্যা দেন ইভাঙ্কা ট্রাম্প। পাশাপাশি হামলাকারীদের পাশে দাড়িয়ে তাঁদের শান্ত হওয়ার পরামর্শ দেন ট্রাম্প কন্যা। ইভাঙ্কার টুইট ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধে। শেষ পর্যন্ত ওই টুইট মুছে দেন তিনি।


বিতর্কিত টুইটে ইভাঙ্কা লেখেন, “আমেরিকার দেশপ্রেমিকরা নিরাপত্তা ভঙ্গ করা অথবা দেশের আইনের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন মেনে নেওয়া হবে না। এই হিংসা বন্ধ হওয়া দরকার। দয়া করে আপনারা শান্ত হন। ইভাঙ্কার এই টুইট নিয়ে তােলপাড় শুরু হয়ে যায়। শুরু হয় নিন্দাও। দ্রুত ওই টুইট মুছে দিলেও তার স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে সােস্যাল মিডিয়ায়। এক সাংবাদিক ইভাঙ্কার ওই টুইটটির স্ক্রিনশট পােস্ট করেন।

সেই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, বাখ্যা দিন, কেন আপনি এদের দেশপ্রেমিক বলছেন? ইভাঙ্কা অবশ্য উল্টো সুরে বলেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদই দেশপ্রেমের পরিচয়। হিংসা মেনে নেওয়া যায় না এবং এর তীব্র নিন্দা করা উচিত। অভিযােগ ওঠে আমেরিকার কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে জো বাইডেনকে নির্বাচনের জয়ের শংসাপত্র পেতে বাধা দিতে ক্যাপিটল বিল্ডিংয়ে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা।

আমেরিকার বুকে ওই ঘটনাকে ঘিরে গােটা দুনিয়া জুড়ে তােলপাড় শুরু হয়েছে। নির্বাচনে কারচুপির ভুয়াে অভিযােগ তােলার দায়ে ইতিমধ্যেই ডােনাল্ড ট্রাম্পের ফেসবুক এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট সাময়িক ভাবে ব্লক করা হয়েছে। হিংসার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৫২ জনকে। আর এরপরেই বৈঠকে বসেন ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা।

সূত্রের খবর, আমেরিকার সংসন্দ্রে ২৫ তম সংশােধনী নিয়ে আলােচনা হয়েছে। এই সংশােধনী অনুযায়ী। কোনও প্রেসিডেন্ট ‘ দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে মেয়াদ শেষের আগেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া যায়। তবে তার জন্য ভাইস প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে ভােটাভুটি করতে হয়।

জো বাইডেনের ডেমােক্র্যাটিক পার্টির তরফেও একই দাবি তুলে বলা হয়েছে, ২৫ নম্বর সংশােধনী প্রয়ােগ করে ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হােক। সংসদের আইন বিষয়ক কমিটি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে চিঠি পাঠিয়ে ট্রাম্পকে সরাতে পদক্ষেপ করতে বলেছেন ডেমােক্র্যাট সেনেটররা। চিঠিতে তাঁরা লিখেছেন, হামলা চালিয়ে গণতন্ত্রের অবমাননা করেছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট।

হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য ক্যাথলিন রাইস টুইটারে লিখেছেন, “ক্যাপিটলের উপর দেশীয় সন্ত্রাসবাদী হামলার কথা বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট ( ট্রাম্প )। গণতন্ত্রের পক্ষে উনি বিপজ্জনক অবিলম্বে তাঁকে পদ থেকে সরানাে দরকার। মন্ত্রিসভার উচিত ২৫ নম্বর সংশােধনী কার্যকর করা। অবশ্য হিংসার আবহেই শেষ হয়েছে আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা পর্ব।

এ দিন আমেরিকার কংগ্রেসের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনে জয়ের শংসাপত্র পেয়েছেন জো বাইডেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কমলা হ্যারিসের জয়কেও দেওয়া হয়েছে স্বীকৃতি। কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন ডােনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ২০ জানুয়ারি আমেরিকার ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বাইডেন।