জইশ ও লস্কর-ই-তৈবার ৫ জঙ্গির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘের নিষেধাজ্ঞা আটকে দিল চিন

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ফের পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে চিন। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী হিসাবে ৫ জন সন্ত্রাসবাদীকে নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবগুলি ফের আটকে গিয়েছে চিনের হস্তক্ষেপে। চিন এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করায় ওই জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী তালিকাভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ন্যাশনাল এজেন্সি ফর ইনভেস্টিগেশন তথা এনআইএ একটি নথি প্রস্তুত করেছে যা ভারতে বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী হামলায় এই সন্ত্রাসবাদীদের সক্রিয় ভূমিকা তুলে ধরেছে।
 
পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর সম্প্রতি রাষ্ট্রসংঘে লস্কর জঙ্গি আবদুল রউফ আসগর, সাজিদ মির, আবদুর রহমান মাক্কি, তালহা সইদ এবং শাহিদ মেহমুদ রহমতুল্লাকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণার প্রস্তাব পেশ করা হয়। তবে সেই প্রস্তাব পেশ হওয়ার পরই তাতে আপত্তি জানিয়ে ভেটো প্রয়োগ করে চিন। পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্কের জেরে কূটনৈতিক স্বার্থে চিন এই পদক্ষেপ করেছে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল। সন্ত্রাসবাদের মতো একটি গুরুতর সমস্যা যখন সমগ্র বিশ্বের সামনে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তখন চিনের এই  চিনের এই অসহযোগিতা স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে।

তবে এই ঘটনা প্রথমবার নয়, চিন বরাবরই কোনও জঙ্গিকে ‘আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী’ ঘোষণা করতে গেলে ভারতের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এসেছে।  বিশেষ করে যেখানে পাকিস্তানের যোগ থাকার প্রমাণ মিলেছে। এর আগেও যখন ভারত ও আমেরিকা রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে  আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসাবে  এদের ঘোষণা করার প্রস্তাব দেয়, তখনও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল চিন।

ভারতে হামলায় জড়িত জইশ-ই-মহম্মদ এবং লস্কর-ই-তৈবার ৫ পরিচিত সন্ত্রাসবাদীদের একজন আবদুল রউফ আসগর।  জইশ-ই-মহম্মদের এই নেতা  ২০০১ সালের ১৩ ডিসেম্বর দিল্লির সংসদে সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী। ১৯৯৯ সালে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের আইসি-৮১৪ বিমান বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এছাড়া ২০১৬ সালে পাঠানকোটের বিমান ঘাঁটিতে হামলার পিছনে মস্তিষ্ক হিসাবেও পরিচিত। ২০১৯-এর পুলওয়ামা হামলায় তাঁর ভূমিকা ফোন থেকে পাওয়া প্রমাণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছিল।
সাজিদ মীর পাকিস্তান ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈবার একজন সিনিয়র কমান্ডার এবং মুম্বাইয়ের ২৬/১১ সন্ত্রাসী হামলার অন্যতম প্রধান পরিকল্পনাকারী। ২০২২ সালে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু চীন ২০২৩ সালে তাতে বাধা দেয় । এই বছরের শুরুতে সহ-ষড়যন্ত্রকারী তাহাবুর হুসেন রানাকে নির্বাসনের পর হামলায় মীরের জড়িত থাকার বিষয়ে এনআইএ-র কাছে আরও প্রমাণ রয়েছে।

আবদুর রহমান মাক্কি হাফিজ সঈদের খুড়তুতো ভাই। তিনি লস্কর-ই-তৈবার রাজনৈতিক বিষয়ক বিভাগের প্রধান ছিলেন। তিনি লস্কর-ই-তৈবার বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগের প্রধান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চীন ২০২২ সালে প্রস্তাবটি স্থগিত করে এবং ২০২৩ সালে এটি তুলে নেয়, যার ফলে মাক্কিকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে, সরকারি সূত্রগুলি যুক্তি দেখায় যে পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘকে জানিয়েছে যে মাক্কি মারা গেছে, যা নিরাপত্তা সংস্থাগুলির মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। মাক্কি লস্কর-ই-তৈবার জন্য তহবিল সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ।

লস্কর-ই-তৈবা নেতা হাফিজ সঈদের ছেলে তালহা সঈদ লস্কর-ই-তৈবা ফ্রন্টের প্রধান সহযোগী শহীদ মেহমুদের বিরুদ্ধে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব ২০২২ সাল থেকে চীন আটকে রেখেছে। তালহা তহবিল সংগ্রহ, নিয়োগ,  ভারতে লস্কর-ই-তৈবার দ্বারা হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। 

শহীদ মেহমুদ রহমতুল্লাহ পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার অন্যতম সংগঠন ফালাহ-ই-ইনসানিয়াত ফাউন্ডেশনের সদর দপ্তরের উপ-প্রধান। শহীদ ভারতে ঘাঁটি তৈরি ও ভারতবিরোধী কার্যকলাপে ধর্মীয় কাজের নামে তহবিল পাঠানোর ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন।

নিরাপত্তা পরিষদ এখনও বিশ্ব সন্ত্রাসবাদীদের তালিকায় রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট তথা টিআরএফ-এর নাম অন্তর্ভুক্ত করেনি। অনুমান, ২২ এপ্রিল পহেলগামে হামলার পিছনে লস্কর-ই-তৈবার একটি বাহিনী টিআরএফ রয়েছে।
 
চিনের এই পাকিস্তানপ্রীতি ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ। ভারত চিনকে তাদের এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে। একইভাবে, জইশ-ই-মহম্মদের প্রধান মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করার প্রস্তাবের সময়ও চিনের বাধায় জটিলতা দেখা গিয়েছিল, যদিও পরে তা অনুমোদন লাভ করে।