প্রবাসে বাঙালি: দুর্গা পূজার ২৫ বছর উদযাপন করল হিউস্টনের দুর্গাবাড়ি

নিজস্ব চিত্র

হিউস্টনে দুর্গা পূজার একটি মাইলফলক স্পর্শ করলেন সেখানকার প্রবাসী বাঙালি তথা ভারতীয়রা। এই বছর হিউস্টন দুর্গাবাড়ি তাদের দুর্গা পূজার ২৫তম বর্ষ উদযাপন করল। এ বছরটি ছিল আরও ‘স্পেশ্যাল’। কারণ ১৯৭৫ সালে হিউস্টনে প্রথম দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় এটি ৫০তম বার্ষিকীরও পালা। এই যুগান্তকারী অনুষ্ঠান মনোমুগ্ধকর আয়োজন, ভক্তি ও সাংস্কৃতিক বৈভবে উদযাপিত হয়, যা দুর্গাবাড়ির ইতিহাসে স্মরণীয় অধ্যায় রচনা করল।

নবরাত্রির উৎসব শুরু হয়েছিল পূজার নির্দিষ্ট তিথিতে। এরপর সপ্তাহান্তে শুরু হয়েছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যেখানে স্থানীয় প্রতিভা ও খ্যাতনামা শিল্পীদের মেলবন্ধন ঘটেছিল। অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত ছিল জয়-লোপা, নন্দী বোনেরা ও কিংবদন্তি কবিতা কৃষ্ণমূর্তির মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পীদের প্রাণবন্ত আয়োজন। এ বছরের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ২৫০ ফুট লম্বা আলপনা, যা ভারতের বাইরে দুর্গা পূজায় সবচেয়ে দীর্ঘ আলপনা হিসেবে নাম উঠে এসেছে।

উৎসবের অন্যতম আধ্যাত্মিক মুহূর্ত ছিল ‘সন্ধি পূজা’, যা সোমবার রাত ২:৫১ মিনিটে অনুষ্ঠিত হয়। পূজা মণ্ডপে ভক্তদের ভিড় ছিল ব্যাপক। চণ্ডীপাঠের মন্ত্রোচ্চারণে, ১০৮ প্রদীপের আলোয়, ধূপের সুবাসে, ঢাক ও তালের তালে পূজামণ্ডপ ভরে ওঠে এক অনন্য আধ্যাত্মিকতায়। ১০৮টি পদ্ম ফুলের নিবেদন, দেবীর আলোকিত মুখমণ্ডল এবং গভীর ভক্তির মন্ত্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রতিটি জনের হৃদয়ে এক অবিস্মরণীয় ছাপ ফেলল। হিউস্টন দুর্গাবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ও স্বেচ্ছাসেবী পুরোহিত পার্থ সরথি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘সন্ধি পূজা ছিল এক সত্যিই আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা’।


অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন ভারতের হিউস্টন কনস্যুলেটের জেনারেল ডি.সি. মানজুনাথ, দুর্গাবাড়ির সভাপতি সন্দীপ ভট্টাচার্য, সম্পাদক অর্ণেন্দু বোস, পূজা সভাপতি সুবাস দাস ও শান্তনু মুখোপাধ্যায় এবং পুরোহিতরা।

হিউস্টন দুর্গাবাড়ি শুধুমাত্র একটি পূজামণ্ডপ নয়; এটি শাক্তির দেবী দুর্গাকে উৎসর্গীকৃত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি মন্দিরের মধ্যে একটি, যা ভারতীয় ঐতিহ্য রক্ষায় ও সম্প্রসারণে একটি শক্তিশালী প্রতীক। ২০১৫ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার হিউস্টন দুর্গাবাড়িকে ‘শারদ সম্মান’ প্রদান করে আন্তর্জাতিক দুর্গা পূজার শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি দিয়েছে।

উৎসবের সমাপ্তি ঘটে বিসর্জন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, যেখানে ঢাকের বাদ্যি ও ভক্তদের মন্দির ঘিরে তিনবার পরিক্রমার পরে পুকুরে ভাসান। তারপর অনুষ্ঠিত হয় রঙিন সিন্ধুর খেলা ও জ্বালামুখী ধুনুচি নাচ, যা এক আনন্দময় উৎসবের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে।

ধর্মীয় তাৎপর্যের বাইরে, দুর্গাবাড়ি হিউস্টনের সমাজে ভারতীয় সংস্কৃতি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ভারতের বাইরে বসবাসকারী ভারতীয়দের পরিচিতি ও কৃতিত্বকে সামনে এনেছে।

হিউস্টন দুর্গাবাড়ির দুর্গা পূজার ২৫তম বার্ষিকী শুধুমাত্র একটি উৎসব নয়, এটি ঐতিহ্য, ঐক্য ও সেই জেগে থাকা সম্প্রদায়ের আত্মার এক অনবদ্য প্রতিফলন।