মানিকগঞ্জের প্রখ্যাত বাউল শিল্পী আবুল সরকারের গ্রেপ্তারের ঘটনায় উত্তেজনা তুঙ্গে। ২০ নভেম্বর মাদারিপুরের এক গানের আসর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তাঁর মুক্তির দাবিতে মানিকগঞ্জ জুড়ে প্রতিবাদের ঢেউ। রবিবার বিজয় মাঠের পাশে মানববন্ধনে যোগ দিতে গেলে বাউল সমর্থকেরা ‘তৌহিদি জনতা’র হামলার মুখে পড়েন। ঘটনায় অন্তত চার জন বাউল গুরুতর আহত হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, মানববন্ধনে হামলা হওয়ার সময় পুলিশ উপস্থিত থাকলেও হামলাকারীদের আটকাতে তৎপরতা দেখা যায়নি। হঠাৎ আক্রমণ শুরু হতেই অনেকে পাশের নদীতে ঝাঁপিয়ে প্রাণ বাঁচান। আক্রান্ত বাউলরা দাবি করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হেনস্থার চেষ্টা করা হয়েছে।
শিল্পী আবুল সরকারের গ্রেপ্তারের পর থেকেই বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তাঁর কণ্ঠে বাউল দর্শন শুধু বিনোদন নয়, মুক্তির ভাষা, মানবতার আধ্যাত্মিক স্বর। এমন মানুষকে ধর্ম অবমাননার আসামি বানানোটা ভয়ানক অন্যায়। এ যেন অন্ধকারের জয়োৎসব।’
জানা গিয়েছে, গত ৪ নভেম্বর মানিকগঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে বাউল সঙ্গীত পরিবেশন করার পর থেকেই মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলির আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। ‘ইসলাম ধর্মের অবমাননা’র অভিযোগ তুলে তাঁরা ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে রাস্তায় নামেন। পরবর্তী সময়ে আবুল সরকারের বিরুদ্ধে ‘ধর্ম অবমাননা, কটূক্তি ও দাঙ্গায় উস্কানি’র অভিযোগও তোলা হয়।
বাউল, সুফি ও লোকসংস্কৃতির চর্চার ওপর ক্রমাগত এই আক্রমণ নিয়ে সমাজের বিশিষ্টজনেরা ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মাজার ভাঙা, গানের আয়োজন বন্ধ করা, শিল্পীদের ওপর হুমকি— এই ধারাবাহিক ঘটনাগুলি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিপন্থী এবং বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। লেখক ও গবেষক ফরহাদ মজহার বলেন, ‘বাউল গ্রেপ্তারের মতো ঘটনায় দেশে অসহিষ্ণুতার চেহারা আরও স্পষ্ট হয়েছে।’
উল্লেখ্য, আবুলের আশু মুক্তির দাবিতে শুক্রবার ঢাকায় মানববন্ধন করেন তাঁর অনুরাগীরা। রবিবার মানিকগঞ্জেও কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কর্মসূচি হামলার মুখে পড়ায় সাংস্কৃতিক মহলে ক্ষোভ আরও বেড়েছে। তাঁদের দাবি, ধর্মের নামে শিল্প-সংস্কৃতি ও মানবিকতার ওপর আঘাত বাংলাদেশের ঐতিহ্যের পরিপন্থী। এই প্রবণতা রোধে রাষ্ট্রের দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন।