শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক মন্তব্য ঘিরে কূটনৈতিক টানাপড়েন

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারতে আত্মগোপন করে রাজনীতিতে লাগাতার উস্কানিমূলক মন্তব্য করার অভিযোগে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঘিরে নতুন করে দুই দেশের কূটনৈতিক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের অভিযোগ, শেখ হাসিনা তাঁর দল আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডে জড়াতে প্রকাশ্যে আহ্বান জানাচ্ছেন এবং এর মাধ্যমে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছেন। আর এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে ভারত সরকার পরোক্ষভাবে সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছে ঢাকা। এই প্রেক্ষিতেই ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মাকে তলব করল বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রক।

রবিবার বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রকের তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারতে বসে শেখ হাসিনার ধারাবাহিক উস্কানিমূলক বক্তব্য বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। নির্বাচনের মুখে এই ধরনের মন্তব্য ও আহ্বান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এই পরিস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে ভারত সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক।

ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যে সাজা হয়েছে, তা কার্যকর করতে তাঁদের দ্রুত বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের দাবি জানানো হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের বক্তব্য, এই দু’জন আসন্ন নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্তে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন।


বিদেশমন্ত্রকের বিবৃতিতে স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘এই ব্যক্তিরা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়ার উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে মদত দিচ্ছেন। এই ধরনের তৎপরতা বন্ধ করতে অবিলম্বে ভারতে কার্যকর পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রের সুরক্ষায় দিল্লির দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ।’

এই ইস্যুতেই রবিবার সকালে ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় বর্মাকে ঢাকার বিদেশমন্ত্রকে ডেকে পাঠানো হয়। বৈঠকে আরও একটি বিষয় উত্থাপন করেছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক নেতা এবং ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির উপর সাম্প্রতিক হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা যাতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে না পারে, সে ক্ষেত্রেও ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

ঢাকার কূটনৈতিকমহল সূত্রের খবর, বৈঠকে ভারতীয় হাইকমিশনার বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক— এটাই চায় ভারত। এই বিষয়ে দিল্লি প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তবে শেখ হাসিনার ভূমিকা এবং তাঁর বক্তব্য ঘিরে যে কূটনৈতিক চাপ বাড়ছে, তা স্পষ্ট বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।