হাসিনাকে হত্যা মামলার সব আসামি নির্দোষ, রায় ঢাকার আদালতের

বাংলাদেশে বহু আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় সব আসামিকে নির্দোষ ঘোষণা করল ঢাকা হাইকোর্ট। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ মৃত্যুদণ্ড-যাবজ্জীবন পাওয়া সব আসামিকে খালাস ঘোষণা করেছে আদালত। এই মামলায় বিএনপির কার্যকরী চেয়ারম্যান তারেক জিয়া সহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত।

বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এই রায় দেন। রায় ঘোষণার পর বিএনপির আইনজীবীরা বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানকে সাজা দেয়া হয়েছিল। বিএনপির অন্যতম আইনজীবী এবং দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেছেন, চারটি চার্জশিটের মধ্যে প্রথম তিনটিতে তারেক রহমানের নাম ছিল না। হাসিনা ক্ষমতায় এসে চতুর্থ চার্জশিটে তাঁর নাম তোলে। অবশেষে প্রমাণিত হল, এই চার্জশিট আইন বহির্ভূত ছিল।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা দায়ের হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও প্রাক্তন শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া দেয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-সহ ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১১ জনকে কারাদণ্ড-অর্থদণ্ডের ঘোষণা করে আদালত।


২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লিগের অফিসের বাইরে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছোড়া হয়। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী হাসিনা সেই সময় ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন। ট্রাকের নীচে আশ্রয় নেন তিনি। হাসিনা কোনওক্রমে প্রাণে বাঁচলেও নিহত হন ৩০ জন। শেখ হাসিনা সহ আহত হন প্রায় তিনশো কর্মী। ২০০৫ সাল থেকে ওই দিনটি গ্রেনেড হামলা দিবস পালন করে আসছে আওয়ামী লিগ।

শেখ হাসিনার ওপর হামলা চালানোর সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। খালেদার অভিযোগ ছিল, হাসিনা ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলেন। গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। বিএনপি-জামাত জোট সরকার মামলা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। ২০০৭ সালে নতুন করে এই মামলার তদন্ত শুরু হয়। সিআইডি ২২ জনকে আসামি হিসেবে চিহ্নিত করে।

সিআইডি চার্জশিট দাবি করে, বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যেই হামলা চালানো হয়। হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। বাংলাদশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মামলার গতি বৃদ্ধি পায়। তারেক রহমান-সহ ৩০ জনকে আসামি চিহ্নিত করে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেওয়া হয়। ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর হাইকোর্টে গত ৩১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়।

বিএনপির সিনিয়র আইনীজীবী জয়নুল আবেদীন এই রায় সম্পর্কে বলেন, ওই দিন একটি ময়দানে আওয়ামী লীগকে জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনকে না জানিয়েই তারা সভার স্থান পরিবর্তন করে। তৎকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য শেখ হাসিনা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে এই কাজ করেছেন। সরাসরি প্রমাণ ছাড়া কাউকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দেওয়া যায় না বলে জানিয়ে দিয়েছে আদালত।