নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশে একের পর এক অস্থিরতার ছবি সামনে আসছে। রাস্তায় উত্তেজনা, রক্তপাত এবং ভাঙচুরের ঘটনার মধ্যেই আগামী সাধারণ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের উপর বাড়তে থাকা ‘ব্যর্থতার’ অভিযোগ ঘোচাতে উদ্যোগী হল কমিশন নিজেই।
মঙ্গলবার ঢাকার নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বাংলাদেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এমএম নাসিরউদ্দিন স্পষ্ট জানান, নির্বাচন কমিশনকে পরিকল্পিতভাবে দায়ী করার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে, তা থেকে মুক্তি পেতে চান তাঁরা। তাঁর কথায়, ‘নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার দায় আমাদের ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। কিন্তু আমরা প্রমাণ করতে চাই, আমরাও সঠিক ও সুন্দর ভোট করাতে পারি। তবে তার একমাত্র শর্ত হল আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।’
প্রসঙ্গত, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে নতুন করে দেশজুড়ে যে হিংসা ও উত্তেজনা ছড়িয়েছে, তাতে নির্ধারিত সময়ে ভোট সম্ভব কি না, তা নিয়ে সংশয় ক্রমশ বাড়ছে। এই প্রেক্ষিতেই নির্বাচন ব্যবস্থার নিরাপত্তা, প্রশাসনিক প্রস্তুতি এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন সিইসি। ওই বৈঠকে পুলিশ কমিশনার, ডিআইজি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং আঞ্চলিক নির্বাচন আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর, বৈঠকে প্রশাসন ও পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকদের কড়া নির্দেশ দিয়ে সিইসি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পালনে কোনও রকম গাফিলতি হলে তা ইতিহাস মনে রাখবে। তিনি সতর্ক করে জানান, ‘দেশের বর্তমান অবস্থা আপনারা সবাই জানেন। এই সময়ে যদি আমরা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে জবাব দিতে পারব না।’
উল্লেখ্য, নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনা ঘটেছে। ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ওসমান শরীফ হাদির। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিভিন্ন এলাকায় অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর এবং তাণ্ডবের ছবি সামনে এসেছে। একই সঙ্গে কিছু নেতার মুখে ভারতবিরোধী বক্তব্য উঠে আসায় ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েও নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এই অস্থিরতার মধ্যেই নির্বাচন কমিশন বার্তা দিতে চাইছে, সমস্ত প্রতিকূলতার পরেও তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করাতে বদ্ধপরিকর। এখন দেখার, বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর করা যায়।