হাসিনার ১৫ সেনাকর্তাকে হেফাজতে নিল বাংলাদেশের সেনা, সমর্থন বিএনপি, জামায়াতের

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল চিত্র

হাসিনার আমলের ১৫ জন সেনাকর্তাকে হেফাজতে নিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। যদিও তাঁরা এখনও সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। শেখ হাসিনার আমলে ‘গুম করে নির্যাতন’ এবং গত বছর ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এ মানবতাবিরোধী অরপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে আনা হয়েছে ওই সেনাকর্তাদের বিরুদ্ধে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সেনাকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল। তার পরেও তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। কেন সেনাকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এই ঘটনায় সেনাবাহিনীর সমর্থন জানিয়েছে বিএনপি এবং জামায়েত ইসলামি। এই ‘অপরাধ’-এর দায় ‘ব্যক্তি’র কোনও প্রতিষ্ঠানের নয় বলে জানিয়েছে তারা।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তিনটি মামলায় বাংলাদেশের ২৫ জন সেনাকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন এখনও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। এক জন অবসরের আগে ছুটিতে রয়েছেন। এই ১৬ জনের মধ্যে হাসিনার আমলের সামরিকসচিব মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ছাড়া বাকি সবাইকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে শনিবার জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনা। সেনার অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান সাংবাদিক বৈঠক করে এই তথ্য দেন। কবীর বর্তমানে ‘আত্মগোপন’ করে আছেন বলে জানান তিনি।

বাকি ১৫ জনকে হেফাজতে নিয়েছে সেনাবাহিনী। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে সেনাকর্তাদের হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। পরোয়ানা তাদের কাছে না থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে জানানো হয়েছে। ৮ অক্টোবর ১৬ সেনাকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়। ৯ অক্টোবরের মধ্যে সেই নির্দেশ কার্যকর করতে বলে সেনা। ছুটিতে থাকা আধিকারিক-সহ ১৫ জন সেনাকর্তাকেই নির্দেশ মেনে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান।


সেনাকর্তাদের হেফাজতে নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী জানিয়েছেন, কিছু ব্যক্তির ‘অপকর্ম’-এর দায় প্রতিষ্ঠানের উপরে চাপানো ঠিক নয়। তিনি আরও বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব রক্ষায় সংশ্লিষ্ট অপরাধের সুষ্ঠু ও নির্মোহ বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ন্যায়বিচার শুধু অতীতের ঘটনাগুলির শাস্তির নিশ্চয়তা দেয় না বরং ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন অন্যায় আর না করে তা নিশ্চয়তাও দেয়।’

একই সুর শোনা গিয়েছে জামায়াতের গলাতেও। ১৫ জনকে হেফাজতে নেওয়ার ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে সমাজমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান। শফিকুর লিখেছেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বাহিনীর কতিপয় সদস্য দেশের বিদ্যমান আইন ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন।’ হাসিনা সরকারকে ‘ফ্যাসিস্ট’ বলেও তোপ দেগেছেন তিনি। ১৫ জনকে হেফাজতে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান তিনি।

হাসিনার আমলের সামরিক সচিব কবীরকে সেনা হেফাজতে নেওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী। ৯ অক্টোবর আইনজীবীর পরামর্শ নিতে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরোন কবীর। তার পরে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। তাঁর সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা।

মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান জানান, কবীরকে ‘ফেরার’ ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর খোঁজ চলছে। দেশত্যাগ যাতে করতে না পারেন, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে। এর পরেই তিনি জানান, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ন্যায়বিচারের পক্ষে। ‘গুম’  হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সেনার সমবেদনা রয়েছে। অভিযোগপত্রে অপরাধ উল্লেখ হওয়ার পর অভিযুক্তরা কেউই আর সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরাসরি কমান্ডের অধীনে ছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। র‌্যাব বা অন্য বাহিনীর অধীনে ছিলেন। অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তাদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হবে, সেই নিয়েও বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাহিনী।