হাসিনার পদত্যাগের পর ১৩ মাসে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার ৪৪ হাজার

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বাংলাদেশে পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। এরপর তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তারপর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করতে শুরু করে পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের রিপোর্ট বলছে, গত ১৩ মাসে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে দেশে মোট ৪৪ হাজার ৪৭২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে প্রায় সবাই কোনও না কোনওভাবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত।

এই বিপুল সংখ্যক গ্রেপ্তার হওয়া মানুষের মধ্যে এখনও পর্যন্ত জামিন পেয়েছেন ৩২ হাজার ৩৭১ জন। অর্থাৎ, ধৃতদের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ এখন জামিনে মুক্ত। তবে এখনও জেলেই রয়েছেন ২৭ শতাংশ, যা সংখ্যায় প্রায় ১২ হাজার ১০১ জন। এত জনকে একসঙ্গে গ্রেপ্তারের ঘটনাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলেই দাবি করেছে শেখ হাসিনার দল। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, সরকার বদলের পর নতুন প্রশাসন তাদের দলকে দুর্বল করতে পরিকল্পনা করে মামলা ও গ্রেপ্তার চালাচ্ছে।

শুধু রাজধানী ঢাকা নয়, দেশের বিভিন্ন বড় শহর যেমন চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সব জায়গা থেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী। এমনকি, হাসিনার দল নিষিদ্ধ হওয়ার পর রাস্তায় যে সব ঝটিকা মিছিল বা হঠাৎ প্রতিবাদ হয়েছিল, সেখান থেকেও বহু কর্মীকে ধরে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশ অবশ্য বলছে, তারা কেবলমাত্র আইন মেনেই পদক্ষেপ করছে। পুলিশের মতে, যাঁরা ‘ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যুক্ত’ কিংবা আইনভঙ্গ করেছে, তাঁদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।


তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফেও স্বীকার করা হয়েছে, অনেক সময় পুলিশের তদন্তে প্রমাণের ঘাটতি থাকায়, আদালত অভিযুক্তদের জামিন দিয়ে দিচ্ছে। সেই কারণেই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি দেখবে, কোনও দোষী ব্যক্তি যেন পুলিশের গাফিলতির কারণে জামিন না পেয়ে যায়। গ্রেপ্তার হওয়া বহু মানুষ এখনও জামিন পাননি, কেউ কেউ দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন অবস্থায় জেলেই রয়েছেন। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই পরিস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কমিটির একজন সদস্য বাংলাদেশের একটি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রকে বলেন, ‘কাউকে জামিন দেওয়া হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেবে আদালত। তবে অপরাধ থাকার পরও সংশ্লিষ্ট কারও গাফিলতির কারণে প্রকৃত অপরাধীদের জামিনের সুযোগ তৈরি হচ্ছে কি না, কমিটি সেটিই দেখবে।’