শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মেলিসার তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড জামাইকা। গত ১৭৪ বছরে এমন ভয়ানক ঘূর্ণিঝড় প্রত্যক্ষ করেনি। ল্যান্ডফলের সময় এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৯৫ কিলোমিটার। আমেরিকার ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টার এই ঘূর্ণিঝড়কে ক্যাটাগরি -৫ বলে চিহ্নিত করেছে। মেলিসার তাণ্ডবে বহু গাছে উপড়ে পড়ে একাধিক রাস্তা বন্ধ। বহু এলাকা বিদ্যুৎহীন। প্রশাসন ও উদ্ধারকারী দল যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজে নামলেও প্রবল বৃষ্টির কারণে বহু জায়গায় পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে ল্যান্ডফলের আগেই হ্যারিকেন মেলিসার প্রভাবে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এঁদের মধ্যে ৩ জন জামাইকার বাসিন্দা। হাইতিতে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।ডমিনিকান রিপাবলিক-এ ১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আহত হয়েছেন ১৩ জন। জামাইকা প্রশাসনের তরফে সেখানকার বাসিন্দাদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে। জামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রিউ হোলনেস জানিয়েছেন, ‘দেশের কোনও পরিকাঠামোই এই ঝড় সামলানোর উপযোগী নয়। তাই সবাইকে অনুরোধ জানানো হচ্ছে নিজেরা সুরক্ষিত থাকুন।’
মঙ্গলবার জামাইকার উপকূলে ২৯৫ কিলোমিটার গতিবেগে আছড়ে পড়ে মেলিসা। প্রবল বৃষ্টি, বন্যা, এবং ঝড়ের তাণ্ডবে তছনছ এই দেশ। আছড়ে পড়ার পর তার গতিপথে থাকা ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট তছনছ করে এগিয়ে যায় মেলিসা। প্লাবিত বহু এলাকা, ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি, ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু এলাকা। কিংস্টন ও মন্টেগো উপসাগরের প্রধান রাস্তাগুলি প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গিয়েছে বহু গাড়ি, ধসে পড়েছে ভবন।
জামাইকার দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে সেন্ট এলিজাবেথ প্যারিশ সম্পূর্ণভাবে জলবন্দি। এর বহু এলাকা এখন জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। জামাইকার মন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জির কথায়, ‘এলাকার পরিকাঠামো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তিনি এও বলেন যে, ব্ল্যাক রিভার হাসপাতাল বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে ৭৫ জন রোগীকে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে।
আমেরিকার ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টার জানিয়েছে, ল্যান্ডফলের পরে মেলিসা ক্যাটেগরি-৫ এর শক্তি হারিয়ে ক্যাটেগরি-৩ এর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। তবে আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি এবং মেঘের ঘনঘটা দেখে মনে করা হচ্ছে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করে ক্যাটেগরি-৪ এর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এরও রূপ হতে পারে ধ্বংসাত্মক। ঝড়ের জেরে প্রায় ৪ মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ে জামাইকার উপকূল এলাকায়। জামাইকায় আছড়ে পড়ার পর শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ ছিল কিউবা হয়ে বাহামাসের দিকে।
মেলিসা আছড়ে পড়ার পর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় খোলা হয়েছিল প্রায় ৮০০ আশ্রয়কেন্দ্র। আগে থেকেই বহু মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে। দক্ষিণ-পূর্ব এবং মধ্য বাহামায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বারমুডাতেও হ্যারিকেন সতর্কতা জারি করা হয়েছে।