অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়ল ঘূর্ণিঝড় মন্থা, বৃষ্টির পূর্বাভাস বঙ্গে

 প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে মঙ্গলবার রাতে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে ‘মন্থা’। এদিন রাতে মছলিপত্তনম ও কলিঙ্গপত্তনমের মধ্যে কাঁকিনাড়া সংলগ্ন এলাকায় মন্থা আছড়ে পড়ে। এই সময় মন্থার সর্বোচ্চ গতি ছিল ৯০-১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। এর জেরে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশার উপকূলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়। সন্ধের পর তা ব্যাপক আকার ধারন করে। মন্থার প্রভাবে ওড়িশা ও তামিলনাড়ুতেও দুর্যোগ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় বৃষ্টি হচ্ছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইওয়েগুলিতে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষ। মানুষকে বিপদ থেকে রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিকেলের পর থেকে অন্ধ্রপ্রদেশের চিলাকালাপুরী গ্রাম সহ বিভিন্ন এলাকায ভারী বৃষ্টিপাত হয়। ঘূর্ণিঝড় মন্থার প্রভাবে উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ৩০ অক্টোবর দার্জিলিং ও কালিম্পং–এ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ৩১ অক্টোবর দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহার–সহ উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেই দিন এই জেলাগুলিতে কমলা সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলাতেও বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। মঙ্গলবার কয়েকটি জেলায় রাতের দিকে বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত এই সব জেলায় বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, বীরভূমে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় মন্থা। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে আগে থেকেই অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশার একাধিক জায়গায় পর্যাপ্ত ত্রাণ শিবির খোলা হয়। কারণ মন্থার প্রভাবে এই দুই জেলার উপকূল এলাকা সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলে অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলীয় এলাকায়। প্রশাসনকে সব রকমভাবে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। দুর্যোগ মোকাবিলার কাজ শুরু করে দিয়েছেন রাজ্যের বিধায়ক–সাংসদরাও।
অন্ধ্রপ্রদেশে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সময় ও পরে মোট ৩৯টি জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের আগেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কাঁকিনাড়া এবং উপ্পাডার সমুদ্র সৈকতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ত্রাণ শিবিরগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও খাবার মজুত করে রেখেছে প্রশাসন।
 মঙ্গলবার থেকেই অন্ধ্রপ্রদেশের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দর থেকে বেশ কিছু উড়ান বাতিল করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের সমুদ্র উত্তাল হয়েছিল। এই দুই রাজ্যের পাশাপাশি তামিলনাড়ুর উপকূলবর্তী এলাকাতেও মঙ্গলবার ঝড়বৃষ্টি হয়। টানা বৃষ্টির কারণে চেন্নাইয়ের একাধিক এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পাম্প বসিয়ে দ্রুত জল বের করার চেষ্টা করছে প্রশাসন। এছাড়াও কন্যাকুমারী, রানিপেট, টেনকাসি, কাঞ্চিপুরম, তিরুপথুর, তিরুভাল্লুর, থুথুক্কুডি, ভেলোর, ভিলুপ্পুরম, তিরুভান্নামালাই, বিরুধুনগরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা এবং তেলেঙ্গানায় রেলের প্রস্তুতি জানতে মঙ্গলবারই বৈঠক করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ২৮ ও ২৯ অক্টোবর বেশ কয়েকটি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। পাশাপাশি অনেক ট্রেনের গতিপথও পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলি ট্রেন হাওড়া ও শালিমার থেকে ছাড়ার কথা রয়েছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে ওয়ার রুম খুলে নজরদারি চালাচ্ছে রেলের আধিকারিকরা।
টাটানগর-এর্নাকুলাম এক্সপ্রেস, ভুবনেশ্বর-জগদলপুর এক্সপ্রেস এবং রাউরকেলা-জগদলপুর এক্সপ্রেস ইত্যাদির গতিপথ পরিবর্তন করা হয়েছে। পাশাপাশি ভুবনেশ্বর-জগদলপুর এক্সপ্রেস এবং রাউরকেলা-জগদলপুর এক্সপ্রেস সহ আরও কয়েকটি ট্রেনের গতিপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে একাধিক ট্রেন।