ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন মামলায় আপাতত স্বস্তি মহুয়ার, লোকপালের নির্দেশ খারিজ দিল্লি হাইকোর্টের

সংসদে ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন মামলায় আপাতত স্বস্তি পেলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। সিবিআইকে চার সপ্তাহের মধ্যে চার্জশিট জমা দিতে বলেছিল লোকপাল। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ। শুক্রবার লোকপালের নির্দেশ খারিজ করে দিল দিল্লি হাইকোর্ট। বিষয়টি নতুন করে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত।

বিচারপতি অনিল ক্ষেত্রপাল এবং বিচারপতি হরিশ বৈদ্যনাথন শঙ্করের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, লোকপালের নির্দেশের  ক্ষেত্রে লোকপালের কিছু ত্রুটি রয়েছে। বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে দেখার পাশাপাশি এক সপ্তাহের মধ্যে লোকপালকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে দিল্লি হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য,‘ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন’ মামলায় মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল লোকপাল। তদন্ত শেষ করে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট লোকপালের দপ্তরে জমা দেয় সিবিআই। রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে সিবিআই আদালতে চার্জশিট দাখিল করে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি চায়। গত ১২ নভেম্বর লোকপালের ফুল বেঞ্চ সিবিআইয়ের আবেদন মঞ্জুর করে। চার সপ্তাহের মধ্যে চার্জশিট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় লোকপাল। এই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টের আবেদন জানিয়েছিলেন মহুয়া।


আদালতে লোকপালের নির্দেশ বাতিলের আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশও চান। দিল্লি হাইকোর্টে মামলা চলাকালীন সিবিআই যাতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে না পারে সে বিষয়ে আর্জি জানান তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। গত ২১ নভেম্বর মহুয়ার আর্জির পরেও লোকপালের নির্দেশে কোনও অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেয়নি দিল্লি হাইকোর্ট। ওই দিন রায়দান স্থগিত রাখা হয়। শুক্রবার অবশ্য লোকপালের চার্জশিট সংক্রান্ত নির্দেশ খারিজ করে দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

২০২৪ সালের গোড়ার দিকে কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ঘুষের বিনিময় প্রশ্ন তোলার অভিযোগ আনা হয়। দুবাইয়ের শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ ওঠে। সেই টাকা নিয়ে শিল্পপতি গৌতম আদানিকে নিশানা করা হয় বলে অভিযোগ করেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে অস্বস্তিতে ফেলতে মহুয়া এই কাজ করেছেন অভিযোগ জানিয়ে লোকসভার স্পিকারকে চিঠি দেন তিনি। মহুয়াকে সাংসদপদ থেকে বরখাস্ত করার দাবিও তুলেছিলেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত। এ ছাড়া, তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তাঁর প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহাদ্রাইও।

ঘুষ নিয়ে মোট ৬১টি প্রশ্ন করা হয়েছিল বলে রিপোর্টে জানিয়েছিল সিবিআই। তার মধ্যে তিনটি প্রশ্ন সামনাসামনি, অফলাইনের মাধ্যমে করা হয়েছিল বলে খবর। বাকি প্রশ্নগুলি অনলাইনে আপলোড করা হয়েছিল। হীরানন্দানি নিজেই হলফনামায় জানিয়েছিলেন, মহুয়ার সংসদের লগ ইন আইডি জেনে তাতে প্রশ্ন পোস্ট করতেন তিনি। এই ঘটনায় এথিক্স কমিটির সুপারিশ মেনে লোকসভার ভোটের আগেই মহুয়ার সাংসদপদ খারিজ করে দেওয়া হয়। পরে ওই কেন্দ্র থেকে জিতেই আবার সাংসদ হন মহুয়া মৈত্র।