বাড়ির পথে মুক্ত শ্রমিকরা, আনন্দাশ্রুতে ভাসলেন মুক্তিদাতারা

One of the trapped workers is checked out after he was rescued from the collapsed tunnel site in Uttarkashi in the northern state of Uttarakhand, India, November 28, 2023. Uttarkashi District Information Officer/Handout via REUTERS THIS IMAGE HAS BEEN SUPPLIED BY A THIRD PARTY. EDITORIAL USE ONLY. NO RESALES. NO ARCHIVES.

  দেরাদুন, ৩০ নভেম্বর – ১৭টি আঁধার রাতের ঝড়-ঝাপটা সামলে অবশেষে বাড়ির পথ ধরলেন উত্তরকাশীর শ্রমিকরা। ধসে পড়া টানেলের অন্ধকূপ থেকে তাঁদের উদ্ধার করার পর চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয় ঋষিকেশের এইমস-এ। বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।  রাজ্যগুলির নোডাল অফিসারদের সঙ্গে সমস্ত শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার বন্দোবস্ত করা হয়। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার আগে শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করেন উত্তরাখণ্ডের রাজ্যপাল লেফটেন্যান্ট গুরমিত সিং। তিনি ঋষিকেশ এইমস-এ গিয়ে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যের খবর নেন। এইমস-এর অধিকর্তা মিনু সিং সমস্ত শ্রমিকদের সঙ্গে রাজ্যপালের পরিচয় করিয়ে দেন।  সবার সঙ্গেই বার্তালাপ করেন রাজ্যপাল। চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা হয় রাজ্যপালের।  
উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেল থেকে উদ্ধার করার পর ৪১ জন শ্রমিককে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় চিনিয়ালিসৌর কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে।  সেখানে তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ২৯ নভেম্বর বিমানে নিয়ে যাওয়া হয় ঋষিকেশের এইমস-এ।  সেখানে চিকিৎসকেরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।  বেশ কিছু ঘন্টা তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখেন চিকিৎসকেরা। বৃহস্পতিবার, শ্রমিকদের মেডিকেল বুলেটিনে চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে ভর্তি সব শ্রমিকই সুস্থ রয়েছেন। তাঁদের এদিনই মুক্তি দেওয়া হবে।  হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই বাড়ি ফেরার পথ ধরেছেন শ্রমিকেরা। 
 
এদিকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় সমস্ত শ্রমিককে উদ্ধার করার আনন্দে আত্মহারা উদ্ধারকারী দলের প্রতিটি সদস্য। উদ্ধার অভিযানের পর আনন্দে নৃত্য করতে শুরু করেন তাঁরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ছবি পোস্ট করেছেন আন্তর্জাতিক টানেল বিশেষজ্ঞ আর্নল্ড ডিক্স।এক্স হ্যান্ডেলে আর্নল্ড এসডিআরএফ কর্মীদের নাচের একটি ভিডিও পোস্ট করেন। সেই ভিডিওয় এসডিআরএফ কর্মীদের দেখা যায় একটি বড় ভেঙে পড়া গাছের মোটা ডালের উপর  দাঁড়িয়ে নাচ করতে। ক্যাপশনে আর্নল্ড লেখেন, “কখনও কী ভেবেছেন উদ্ধারকারীদের কেমন অনুভূতি হয়, যখন সকলকে সুরক্ষিতভাবে উদ্ধার করে আনা যায় ? উত্তরাখণ্ডের এসডিআরএফ-এর উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে এই আনন্দ উদযাপনে যোগ দিন।”

আর্নল্ড এদিন বলেন, “আমাদের উদ্ধারকাজের গতি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু আমাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে সুরক্ষিতভাবে উদ্ধার করে আনা। উদ্ধারের জন্য একাধিক পথ তৈরি করেছিলাম আমরা। প্রতিটি ধাপে আমরা অত্যন্ত সতর্ক ছিলাম, যাতে সাধারণ মানুষের জনজীবনে কোনও প্রভাব না পড়ে।”

উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে ‘ইঁদুর-গর্ত’ খুঁড়ে বার করে আনা হয়েছে ৪১ জন শ্রমিককে। শাবল-গাঁইতি দিয়ে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে উদ্ধারকাজে সফল হয়েছেন খনিশ্রমিকেরা। তাঁরা হাত যা করে দেখিয়েছে, যন্ত্র তা পারেনি। ১০ মিটার ধ্বংসস্তূপ তাঁরা খুঁড়ে ফেলেছেন মাত্র ২৬ ঘণ্টায়। একভাবে, একটানা  ২৬ ঘন্টার পরিশ্রম শেষে যখন একশো শতাংশ সাফল্য আসে, তখন আনন্দে চোখে জল এসে যায় তাঁদের। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সকলেই। কারণ  গোটা দেশের নজর ছিল তাঁদের দিকেই। সেই আবেগ আর সাফল্যের ঢেউ আনন্দে ভাসিয়ে নিয়ে যায় উদ্ধারকারী দলকে।