দুর্যোগে কেন্দ্র টাকা দেয়নি তোপ মুখ্যমন্ত্রীর, উত্তরবঙ্গে ম্যানগ্রোভ লাগানোর পরামর্শ

বিপর্যস্ত এলাকা পরিদর্শনের জন্য উত্তরবঙ্গে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, বুধবার দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলাকে নিয়ে লালকুঠিতে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে আরও একবার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি।‘দুর্যোগে ৭০ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। এক পয়সাও কেন্দ্র দেয়নি।‘ ক্ষোভ উগড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দার্জিলিংয়ের মিরিক-সহ একাধিক জায়গা ধসে বিপর্যস্ত। বহু রাস্তা ভেঙে গিয়েছে। জোরকদমে ত্রাণ ও উদ্ধারকাজ চলছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিপর্যয়ে ৭০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। উত্তরবঙ্গে মোট ৩২ জন মানুষ এই বিপর্যয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। বৃষ্টি-ধস ও হড়পা বানে ভেসে গিয়েছে দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারের বিস্তীর্ণ এলাকা।

বিপর্যয়ের পর থেকেই প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা ত্রাণ ও উদ্ধারকাজের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাঁদের জন্যই বহু দুর্গতকে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে বলে মত মুখ্যমন্ত্রীর। এদিন প্রশাসনের আধিকারিক, কর্মী, বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীদের স্যালুট জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লির কোনও সাহায্য নয়, রাজ্য সরকারই সাধারণ মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছে। জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।


দুর্যোগে বিঘার পর বিঘা চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে ফসল। বাড়ি, বাড়ি গিয়ে বা ত্রাণ শিবিরে থাকা চাষিদের কাছে গিয়ে বিমার ফর্ম ফিলাপের কাজ শুরু হয়েছে বলে দার্জিলিংয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়। পাশাপাশি,  তিনি জানিয়েছেন, ডিএম, বিডিওরা সার্ভে রিপোর্ট পাঠাবে, এগ্রিকালচার বিভাগ নিজেরাও খতিয়ে দেখবে। দ্রুত সেই টাকা চাষিরা পাবেন বলে জানান তিনি।

পাহাড়ে দুর্যোগ সামাল দিতে এবার প্রকৃতির হাত ধরেই প্রকৃতিকে রক্ষার ডাক দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার দার্জিলিংয়ে প্রশাসনিক বৈঠকে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সাফ বার্তা, ‘কংক্রিটে আর কাজ হবে না। প্রকৃতি দিয়ে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে।‘ তাঁর পরামর্শ, পাহাড়ি নদীর পারে লাগাতে হবে ম্যানগ্রোভ আর ভেটিভার। সুন্দরবনের অনুকরণে এবার পাহাড়েও গড়ে তোলা হবে প্রাকৃতিক বাঁধ।

মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, ‘আপনারা যদি গঙ্গাসাগরে ৫ কোটি গাছ লাগাতে পারেন, তাহলে উত্তরবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতেও লাগানো যাবে না কেন? কংক্রিট ছয় মাসেই ভেঙে যায়। কিন্তু গাছ লাগালে তা অনেক বেশি টেকসই। জলে টাকা ঢেলে আর চলবে না। স্থায়ী সমাধান করতে হবে।‘

এদিন প্রশাসনিক সভা থেকে ভুটানের জল নিয়েও সুর চড়ান মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘ভুটানের জল কমাতে হবে। আমাদের সব ভেঙে গেছে, ওদেরকেও আমাদের সাহায্য করতে হবে। ওদের বাঁধের জল যাতে উত্তরবঙ্গকে ডোবাতে না পারে তার জন্য একটা রাস্তা বের করতে হবে। প্রত্যেক বার আমরা কেন ভুগব?’

অন্যদিকে পুজোর মুখে কলকাতায় অতিবৃষ্টিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান ১২ জন। মৃতদের পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দিতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১৭ অক্টোবর, বিকেল ৫টায়, কলকাতায় কালীপুজোর উদ্বোধন মঞ্চ থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে থাকছে কর্মসংস্থানের আশ্বাসও।

বুধবার উত্তরবঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, উত্তরবঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃতদের পরিবার পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তাঁদের পরিবারের একজনকে হোমগার্ডের চাকরিও দেওয়া হচ্ছে। ওই বৈঠক থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কলকাতায় ফিরে জমা জলে মৃত পরিবারগুলির হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হবে।‘

তবে উত্তরবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ম্যানগ্রোভ লাগানোর যে পরামর্শ দিয়েছেন তা নিয়েই ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ম্যানগ্রোভ মূলত নোনা জলের গাছ। উপকূলীয় এলাকাকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য এই গাছের ভূমিকা আছে। সাধারণত ম্যানগ্রোভ যেখানে বন তৈরি করে, ভেটিভার সেখানে সহায়ক উদ্ভিদ হিসেবে ভূমিকা নেয়। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় ম্যানগ্রোভ কীকরে লাগানো সম্ভব তা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেই সন্দেহ তৈরি হয়েছে।