রোম সফর ছিল রাজার বিয়ের বরযাত্রীর মত!

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রবীর ঘোষাল

সে যেন রাজার বিয়ের বরযাত্রী! ইতালির রাজধানী রোমে বসেছিল জি-সামিট। ২০০৩ সালের জুলাই মাস। দেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে তখন ড. মনমোহন সিং। কলকাতার অফিস থেকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হওয়ার অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হল। রোমাঞ্চিত হলাম। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আমার নামে পাঠানো চিঠির কপি হাতে এল, তখন মনে যে কী আনন্দ হচ্ছিল, সেটা বলে বোঝাতে পারব না। আগে ভারতের দু’জন প্রধানমন্ত্রীর সফর প্রত্যক্ষ করেছি, কিন্তু সঙ্গী হইনি। আগেই লিখেছি, অটলবিহারী বাজপেয়ী এবং দেবেগৌড়ার বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সফরের কথা।

দিল্লিতে চিঠি জমা পড়ার পরের দিনই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে আমার কাছে ফোন এল। ওরা পাসপোর্ট জমা দিতে বলল। সেদিন সন্ধ্যায় ক্যুরিয়রে আমাদের দিল্লির অফিসে পাসপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হল। আবার ফোন এল প্রধানমন্ত্রীর অফিসের। প্রধানমন্ত্রীর সফরের দিনক্ষণ জানিয়ে দেওয়া হল। দিল্লি থেকে ওরা ওইদিন আমাকে পিকআপ করবে। আমি দিল্লি পৌঁছে গেলাম। নির্দিষ্ট সময়ে বিদেশ দপ্তরের গাড়ি এল। ব্যাগ-সুটকেস সহ আমাকে গাড়িতে তুলে সোজা দিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।


প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী আমলা, সাংবাদিক সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলির প্রতিনিধিরা সেখানে হাজির। কিছুক্ষণ অপেক্ষা। আমাদের ব্যাগ-সুটকেস নিয়ে গিয়ে সিকিউরিটির লোকেরাই তুলে দিল সেনা বাহিনীর বিশেষ বিমানে। আমরাও বাসে করে গিয়ে সোজা উঠে গেলাম বিমানে। একটা করে ‘স্পেশাল টিকিট’ আমাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর ফিতে দিয়ে লটকানো বুকে ল্যামিনেশন করা ব্যাচ। ব্যাচে নিজের নিজের ছবিও আছে। ওটাই প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের পরিচয়পত্র। কোনও সিকিউরিটি চেকের বালাই নেই।
বিমানটি বিশাল। আসনগুলি দু’পাশে ভাগ করা। সিটগুলো বেশ চওড়া, পা ছড়ানোর জায়গাটাও বড়। সামনের দিকে আমলা এবং সরকারি লোকজনের আসন। মাঝখানে বেশ বড়সড় একটা স্যুট। দুটো বিলাসবহুল ঘর আছে স্যুটে। সেখানেই এসে ঢুকে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর পরিবার। আমাদের আসন সেই স্যুট পার করে বিমানের পিছনের দিকে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব ঘরে বসবেন। ইচ্ছা হলে বেরুবেন। আর তাঁর স্যুটের পাশ দিয়ে করিডরের সরু রাস্তা। আমরা ইচ্ছা করলে সামনে যেতে পারি, আবার কেউ পিছনেও আসতে পারে। দু’দিকেই খাবার-দাবার এবং পানীয়ের অঢেল ব্যবস্থা। বিমানে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে স্ন্যাকস এবং ড্রিঙ্কস সার্ভ করা হচ্ছে। যে যত পারো খাও, পান করো!

বিকাল সাড়ে চারটা নাগাদ বিমান টেকঅফ করল। উড়ানটি বেশ নীচ দিয়েই যাচ্ছিল। আমরা একে একে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরস্ক, গ্রীসের মতো দেশগুলি জানালায় চোখ রেখে প্রায় পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিলাম। সুন্দর সাজানো সব দৃশ্য। ছবির মতো। সবুজ পাহাড়। কোথাও কোথাও পাহাড়ের চূড়ায় বরফ। সীমাহীন নীলসমুদ্র। আবার ঘন জনবসতির শহরগুলিও দেখছি। ঠিক সাড়ে সাত ঘণ্টা লাগল। হ্যাঁ, বিমানে একবার প্রধানমন্ত্রী এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন। মিনিট কুড়ি ঘরোয়া আলোচনায় ছিলেন।
আমাদের ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে দশটা, বিমান মাটি ছুঁলো। সুয্যি মামার আলোয় চারিদিক ঝকঝকে। কোথায় রাতের অন্ধকার? রোমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমাদের একটু অপেক্ষা করতে হল। নিজেদের আসনেই বসে রইলাম। ডাক এল। সোজা বিমানের সিঁড়ি দিয়ে নেমে বিলাসবহুল বাস। কোনও সিকিউরিটি চেকিং কিংবা ইমিগ্রেশনের বালাই নেই। বাস হুটার বাজিয়ে হইহই করে বেরিয়ে পড়ল।

কিছুক্ষণের মধ্যেই সাংবাদিকদের বাস পৌঁছে গেল একটি বিলাসবহুল হোটেলে। আমি যে রুম পেলাম, সেটা একেবারে শহরমুখী। রাত বারোটা বেজে গিয়েছে। বুফে ডিনার। কিন্তু বিমানে এমন সেবা হয়েছে যে আর খাবারে রুচি নেই। আমার ডবল বেডরুমের পার্টনার কেরলের একটি দৈনিকের মাঝবয়সী সাংবাদিক শ্রীনিবাসন। শুয়ে পড়লাম। ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙে গেল। প্রাতঃভ্রমণের রুটিন রোমেও কাজ করছে। এতো সকালে সূর্যিমামার অবস্থান বেশ সতেজ। তাহলে রোমের রাত মানে অন্ধকার কতক্ষণ হয়? সারাদিনই তো রোদ ঝলমলে আকাশ। মনে রাখতে হবে, কলকাতার চেয়ে সময়ের বিচারে সাড়ে তিনঘণ্টা পিছিয়ে।
সোজা বেরিয়ে পড়লাম হাঁটতে। সামনেই একটা সুন্দর পার্ক। জুলাই মাসের সকাল। সামান্য শিরশিরে আবহাওয়া। আদতে গরমকাল। আর আমরা গরমে যেমন হাঁসফাস করি ওখানে দেখলাম ঠিক উল্টো। আমরা যেরকম শীতে মজা নিই, রোমে গরমকাল হল সাধারণ মানুষের আনন্দের কাল। অবশ্য এখন ইউরোপে যেমন গরম পড়ছে, মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হচ্ছে, তখন কিন্তু আবহাওয়ার এরকম উষ্ণায়ন হয়নি।

গরম যে ইতালিয়ানদের কিরকম ফূর্তির মরশুম, সেটা মালুম হল পার্কে হাঁটতে গিয়ে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রাতঃভ্রমণ চলছে। আর পার্কের বেঞ্চগুলি একটাও খালি নেই। সেখানে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা স্বল্পপোশাকে জমিয়ে প্রেম, মানে একেবারে নিবিড়ভাবে নিজেদের মধ্যে তারা ডুবে রয়েছে। তবে, তাদের নিয়ে কারও কোনও আলাদা কৌতূহল নেই। আমি অবাক হচ্ছিলাম, এত সকালে কী আমাদের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে এত যুগলকে এভাবে দেখা যায়?

হোটেলে ফিরে তাড়াতাড়ি স্নান সেরে বুফে ব্রেকফাস্টের টেবিলে গেলাম। সেখানেও মেনুর কমতি নেই। কত খাবে খাও। আলাপ হল ইতালির ইন্ডিয়ান এমব্যাসির অফিসারদের সঙ্গে। ব্যাগগুলো পেয়ে গেলাম। এক বাঙালি অফিসারের নাম সমীরণ চৌধুরি। আইএফএস অফিসার। মধ্যপ্রদেশের গুনা জেলায় তাঁদের পরিবারের বসবাস। তবে বাংলায় আত্মীয়স্বজন আছে। মাতৃভাষায় ঝরঝরে কথা বলেন। তিনি জানিয়ে দিলেন, আমাদের একটা আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেন। সেই গাড়িতে আমরা রোম ঘুরে দেখে নিতে পারব। আর কোনও অসুবিধা হলেই যেন তাঁকে জানাই। বলা বাহুল্য, সেই সফরে সমীরণবাবু আমাদের কাছে দেবতার দূত হয়েই যেন আবির্ভূত হলেন!

জি-সামিট সম্মেলন হচ্ছে রোম থেকে ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে কপিটো নামের একটা ছোট্ট শহরে। শহরে হাজার তিনেক মানুষের বসবাস। ঘণ্টা দেড়েক লাগল সেখানে পৌঁছতে। কিছুদিন আগেই কপিটো শহরে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। বিদেশি অতিথিদের দেখানোর জন্যই হয়তো বেশ কিছুটা অঞ্চলে ভূমিকম্পের ভগ্নাবশেষ সরানো হয়নি। আসলে ইতালি সরকার বোঝাতে চেয়েছে, এরকম ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপেক্ষা করেও, কীভাবে সম্মেলনের জন্যে কপিটোকে নতুন চেহারায় গড়ে তোলা হয়েছে। এবং এত অল্প সময়ে।

তবে কপিটোর মতো এরকম ফাঁকা জায়গা জি-সামিটের জন্য নির্বাচন করার জন্যে প্রধান কারণটি বলেছিলেন সমীরণবাবু। ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসের ওই অফিসারের কাছে শুনেছিলম, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট সহ ৬টি দেশের প্রধান আসবেন। তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টি আগে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। কোনও জনবহুল অঞ্চল নিরাপত্তার পক্ষে নিরাপদ নয়, বরং বিপজ্জনক। তার ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হলেন এই সামিটের মধ্যমণি। মধ্যমণিই বটে।

পাঁচটি কালো লম্বা মডেলের লিমুজিন কার। জানালার সব কাঁচ কালো। একসঙ্গে কনভয় ঢুকছে। সবকটি গাড়ি হুবহু একই দেখতে। ফলে বোঝা সম্ভব নয়, ঠিক কোন গাড়িতে পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাশালী দেশের প্রধান শাসক আছেন। সম্মেলন হলের সামনে বাকি গাড়িগুলি থেকে কালো পোশাকের নিরাপত্তারক্ষীর দল তৎপরতার সঙ্গে প্রথমে নেমে জায়গাটা ঘিরে ফেলছে। তারপর অবতরণ করছেন ওবামা। একেবারে সিনেমার মতো আর কি!

ভাবগম্ভীর সম্মেলন। জি-সামিটের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির সমস্যা, কিছু পরিস্থিতি, এইসব নিয়ে আলোচনা। কিন্তু সেই গম্ভীর পরিবেশকে অনেকটা ভেঙে দিয়েছিলেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভা। এখনও তিনি একই চেয়ারে আছেন। আমরা জানি, ব্রাজিলের খ্যাতি সারা বিশ্বে ফুটবলে। পেলের দেশের প্রেসিডেন্ট মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগে ঘোষণা করলেন, মঞ্চে উপস্থিত রাষ্ট্রপ্রধানদের তিনি সংবর্ধিত করবেন। মঞ্চের দিকে সবাই তাকিয়ে রইলাম। ব্রাজিল ফুটবল দলের জার্সি হলুদ-সবুজ গেঞ্জি বের করে তিনি একে একে অতিথিদের পরাতে শুরু করলেন। লুলা আটকে গেলেন মনমোহন সিংহের সামনে এসে। আরে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তো মাথায় পাগড়ি। কী করে মাথা গলিয়ে পাঞ্জাবি মানুষটিকে তিনি গেঞ্জি (জার্সি) পরাবেন? অবশ্য সমস্যা সমাধানে মনমোহনজি নিজেই সক্রিয় হলেন। হাসিমুখে তিনি লুলার হাত থেকে ব্রাজিলের জার্সিটি নিলেন এবং নিজের বুকের সামনে মেলে ধরলেন। তারপর ৬ জন রাষ্ট্রপ্রধানের ব্রাজিলের জার্সিওয়ালা ফটোসেশন হল। সে ছবি সেদিনের জি-সামিটের লাইভ হিসেবেই মিডিয়ায় পরের দিন প্রতিবেদনে এসেছিল।

সম্মেলন হলের লাগোয়া ব্যাঙ্কোয়েটে খাবার-দাবারের বিশাল আয়োজন। বিকাল হতেই আমরা ফিরে এলাম কপিটো থেকে রোমে। শহর ঘোরা শুরু হল। একটা মার্কেট দেখতে পেলাম। বেশ ভিড়। জমজমাটও বটে। সমীরণবাবু সাবধান করে দিয়েছিলেন, ‘রোমের বাজারগুলিতে ভীষণ পকেটমারের উৎপাত।’ আমরা তো মার্কেটে পৌঁছেই, পকেটমারের সাক্ষাৎ পেলাম। পুলিশ তাদের পাকড়াও করে নিজেদের ছোট গাড়িতে এনে বসিয়ে দিল। কাছে যেতেই দুই পকেটমারের গায়ে কেমন বাঙালির গন্ধ পেলাম। বাংলায় জানতে চাইলাম, ‘তোমরা কি বাঙালি?’ ওরা বলল, ‘হ্যাঁ দাদা, বাংলাদেশি।’ ‘কী করেছো যে পুলিশ তোমাদের ধরে আনল?’ প্রশ্নটা শুনে বেশ সাবলীলভাবে জবাব দিল যুবক। বলল, ‘আরে পকেট মারসি! তাই পুলিশ ধরসে। তবে, পুলিশ খুব ভালো। ধরসে বটে, বেশিক্ষণ আটকায়ে রাখে না।’ পরিচয় দিয়ে ওই বাংলাদেশি নিজের নাম বলল মন্টু। দিনের বেলায় একটা দোকানে চাকরি করে। সন্ধ্যার পর পকেট মারতে বেরোয়। ধরা পড়া অপর যুবকও বাংলাদেশি। তারও প্রায় একই রোজনামচা।

মার্কেটে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে অবাক হলাম, সাদা বাংলায় সাইনবোর্ডে লেখা, ‘এখানে ইলিশ মাছ পাওয়া যায়!’ ফুটপাত লাগোয়া কাউন্টারে বসা সরাসরি রেস্টুরেন্ট মালিকের সঙ্গে আলাপ হল। কথা বললাম, তিনি নদিয়ার তেহট্টের বাঙালি। দীর্ঘদিন ইতালির নাগরিক। বিয়ে-শাদিও করেছেন ওদেশের মেমসাহেবকে। তিনি তো নিজের বাড়িতে আমাদের ভারত আর ইলিশ মাছ খাওয়ার আমন্ত্রণও জানালেন।

জুলাই মাস যে রোমে গরমকাল সেটা তো আগেই বলেছি। এসি রেস্টুরেন্টে বসে খেলে খরচ কম। কিন্তু ফুটপাতে পাতা টেবিল-চেয়ারে বসলে একস্ট্রা চার্জ। আমরা একটা রেস্টুরেন্টে বসে সেটা জানতে পারলাম। আসলে ওরা গরমকালটা এনজয় করে। বছরে ১০-১১ মাস কঠিন শীত কাটিয়ে ওদেশের মানুষ গরমে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। খাবারের অর্ডার দিতে গিয়ে আর এক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। আমরা দলে ছিলাম পাঁচজন। আমাদের তো প্রচুর খাবার-দাবার পেটে সর্বদা থাকছে। কেবল সময় কাটানো এবং ওদের রেস্টুরেন্টের ব্যপারটা বোঝবার জন্যে বসেছি। পাঁচজনের জন্যে তিনটি পিৎজা অর্ডার দিলাম। ওয়েটার যুবতী অর্ডার না লিখে বিড়বিড় করে কী বলতে বলতে চলে গেল। ফিরে এল আরও সুন্দরী লম্বাচওড়া আর এক মহিলাকে নিয়ে। দুর্বোধ্য ইংরাজিতে সেই মহিলা কার্যত ধমকের সুরে আমাদের যা বোঝালেন, সেটা হল, ‘তোমরা কী ভেবেছো? পাঁচটা চেয়ার দখল করেছো, আর তিনটি পিৎজার অর্ডার দিচ্ছো? চলবে না। তোমরা রাস্তা দেখো!’ বলা যায়, আমাদের ওই মহিলা খেদিয়েই দিল।

পরের দিন আমাদের ভ্যাটিকান সিটি দর্শনের ব্যবস্থা করেছিল ইতালির বিদেশ মন্ত্রক। সকাল থেকেই ব্রেকফাস্ট টেবিলে এলাহি খাদ্যপানীয়ের ব্যবস্থা। যে যার পছন্দমতো খাদ্য গ্রহণ করে বিলাসবহুল বাসে উঠলাম। সকাল তখন দশটা। মাত্র ৬ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে পৌঁছে গেলাম ভ্যাটিকান সিটিতে। বস্তুত রোম শহরের মধ্যে পোপ পলের ছোট্ট দেশ ভ্যাটিকান সিটির অবস্থান। মাত্র হাজার খানেক মানুষের বসবাস। বিখ্যাত কয়েকটি চার্চ আর মিউজিয়াম পর্যটকদের আকর্ষণ করে। তবে, আমরা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের যে বিশাল লাইন দেখলাম, সেটা পোপ পলের চার্চ দর্শনের তাগিদ। আমাদের জন্য ৩০ সাংবাদিকের জন্য সর্বত্র অবারিত দ্বার। ভিআইপি ব্যবস্থা করেছে সরকার।

সেদিনই বেলার দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামারও ভ্যাটিকান সিটি দর্শনের কথা। সকাল থেকে পুলিশ তৎপর। ছোট্ট, স্বাধীন দেশটিকে নিরাপত্তার মোড়কে মুড়ে ফেলার কাজে। তার মধ্যে ফুটপাত থেকে ভিখারি বিতাড়ন ছিল পুলিশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রোম এবং ভ্যাটিকান সিটির ফুটপাতে প্রচুর ভিখারি দেখেছি। আর আমাদের দেশের কত স্ট্রিট ফুডের দোকানের ছড়াছড়ি। আর একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, ওরা খুব ফুটবল প্রিয় মানুষ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রিয় ফুটবল ক্লাবের জার্সি পরে অনেককে অফিসে যেতেও দেখেছি। ফুটবলের বিখ্যাত ক্লাব রোমা এবং তখন রোমের ওই ক্লাবের তারকা খেলোয়াড় টোট্টির জার্সির নম্বর ছিল ১০। সেই জার্সি বেশি সমর্থকের গায়ে।

তিনদিন ধরে খাওয়া-দাওয়া আর রাজকীয় মর্যাদায় বেড়ানো চিরকাল মনে রাখবো। ফেরার পথে আবার ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের এক ব্যাগ দামি উপহার। মনে হচ্ছিল, সত্যি করেই যেন রাজার বিয়ের বরযাত্রী হয়েছি।