একদিনের বিশ্বকাপে ভারতের মেয়েরা এই মুহূর্তে ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে অপেক্ষায় রয়েছে। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপ ভারতীয় মাটিতে স্পর্শ করেনি। ফাইনালে খেললেও প্রতিপক্ষ দলের কাছে হেরে গিয়ে চলে এসেছেন ভারতের মেয়েরা। কিন্তু এবারে সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে সমীক্ষার শেষ নেই। সেই কারণেই হরমনপ্রীত কৌরদের পাখির চোখ দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্বকাপ তুলে নেওয়া। রবিবার সেই লক্ষ্যেই মাঠে নামবেন ভারতীয় দলের ক্রিকেটাররা। যদি ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, তাহলে সব ক্রিকেটার কোটিপতি হয়ে যাবেন। অর্থাৎ ভারতীয় বোর্ড ইতিমধ্যেই প্রচুর আর্থিক মূল্যের পুরস্কার ঘোষণা করে দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, আইসিসি থেকেও মোটা অঙ্কের টাকা পাবেন জেমাইমা রদ্রিগেজরা। ভারতীয় দল জিতলেই ৩৭ কোটি টাকা পেয়ে যাবে। আর হেরে গেলে পাবে ২০ কোটি টাকা। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ছেলেদের বিশ্বকাপে এত অঙ্কের আর্থিক পুরস্কার ছিল না। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতীয় দল মুখোমুখি হয়েছিল ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ফাইনাল খেলার আগে ভারত প্রতিটি ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে শুধু ধাক্কা খেল না, হেরে যাওয়ায় রোহিত শর্মাদের আশা পূর্ণ হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে জেতার জন্য ৩৫ কোটি টাকা আর্থিক পুরস্কার পেয়েছিল। আর এবারে মেয়েদের সেই পুরস্কারের অঙ্কটা ২ কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, সেমিফাইনালে হেরে যাওয়ায় অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ৯.৩ কোটি টাকা আর্থিক পুরস্কার পাচ্ছে। এবারের বিশ্বকাপে মোট পুরস্কারের মূল্য হল ১১৬ কোটি টাকা। গত বারে ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। আর্থিক পুরস্কারের অঙ্কটা দেখলে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, গত বারের থেকে তিনগুণ অর্থ বেড়ে গিয়েছে। এবারই প্রথম পুরুষ ও মহিলাদের জন্য একই আর্থিক পুরস্কার থাকছে।
রবিবার ম্যাচ জেতার জন্য ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা অবশ্যই লড়াকু ভূমিকা নিয়ে মাঠে নামবেন। এখন দেখার বিষয় সেমিফাইনাল ম্যাচে ভারত যেভাবে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে, তা তো নজির। সেই আত্মবিশ্বাসেই ভারতের প্রত্যেক ক্রিকেটার জেতার জন্য মানসিকভাবে তৈরি রয়েছেন। শুধু হরমনপ্রীত কৌর নন, স্মৃতি মান্ধানা থেকে শুরু করে রিচা ঘোষ, জেমাইমা রদ্রিগেজ, শেফালি ভার্মা সহ অন্যান্য ক্রিকেটাররাও অঙ্গীকারবদ্ধ দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপের মধ্যে রেখে দেওয়ার জন্য। ভারতের কাছে দুর্বলতা বলতে ফিল্ডিং। সেমিফাইনাল ম্যাচেও বেশ কয়েকটি ক্যাচ ফেলে দিয়ে ম্যাচের পরিস্থিতি কঠিন করে ফেলেছিল। সেই কারণে ফিল্ডারদের সতর্ক করে দিয়েছেন কোচ অমল মজুমদার। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে বাংলার রিচা ঘোষকে সচেতন করে বলা হয়েছে ফাইনাল খেলায় যে সুযোগটা আসবে, সেই সুযোগটাকে কার্যকরী করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নেমে তিনটি স্ট্যাম্প আউট হাতছাড়া করেছেন রিচা। আধুনিক ক্রিকেটে উইকেটরক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ফাইনালে ভারতীয় দলকে অত্যন্ত সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে। রেণুকা সিং ঠাকুর ও ক্রান্তি গৌড়রা নিজেদের খেলা সেইভাবে খেলতে পারেননি। ব্যাট হাতে ক্রিকেটারদেরও উপলব্ধি করতে হবে ভালো স্কোরবোর্ড উপহার দিতে না পারলে ম্যাচ কঠিন হয়ে যায়। আমনজ্যোত সিং ভালো বল করেছেন।
এমনকি জেমাইমার সঙ্গে সেমিফাইনাল ম্যাচে জুটি বেঁধে আমনজ্যোত নটআউট থেকে গেছেন। এটা মনে রাখতে হবে ওয়াইড বল করে প্রতিপক্ষ দলকে সুযোগ করে দেওয়ার কোনও কারণ নেই। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা সেইভাবে ব্যাটিংয়ে নজর কাড়তে পারেননি। সেই সুযোগটা ভারতকে নিতে হবে। তাই বোলাররা যদি আগুনে বল করেন, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকা ঝলসে যাবে। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক উলভার্ট ছাড়া ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার নিদর্শন অন্য কেউ রাখতে পারেননি। ভারতের হাতে যখন দীপ্তি শর্মা, স্নেহ রানা, শ্রীচরণি ও রাধা যাদবের মতো স্পিনার রয়েছেন, তখন ঘরের মাঠে বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। উলভার্টের এখনও পর্যন্ত মুম্বইয়ের উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। সেই কারণেই ভারতের স্পিনাররা তাঁদের সমস্যায় ফেলতে পারেন। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার ননকুলুলেক, এমলাবা ছাড়া সেইভাবে স্পিনাররা নজর কাড়তে পারেননি। কিছুটা ভালো খেলার তালিকায় রয়েছেন ক্লো ট্রায়ন।
ভারতীয় দলের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনাল ম্যাচে পাঁচজন দক্ষ খেলোয়াড় ছিলেন, যাঁরা ব্যাটে ওস্তাদিপনা দেখাতে পারেন। আর চারজন বোলারকে রাখা হয়েছিল। আর দু’জন ছিলেন অল রাউন্ডার। ফাইনালে দল পরিবর্তন করা ঠিক হবে না ভারতের পক্ষে। সবাই যখন ফিট রয়েছে, তাহলে সেখানে এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়, যা ভাবনার মধ্যে থেকে যাবে। সেক্ষেত্রে এমনও হতে পারে, স্নেহরানা, অরুন্ধতী রেড্ডি, উমা ছেত্রী ও হারলিন দিওল্ডকে অতিরিক্ত তালিকায় রেখে দেওয়া হবে। তবে, মাঠে নামার আগে চূড়ান্ত দল ঘোষণা করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হয়েছে, হাইভোল্টেজ ম্যাচের আগে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কখনও হালকা চালে আবার কখনও মুষলধারে বা মাঝারি বৃষ্টি হওয়ার কথা জানা গিয়েছে। এমনকি বজ্রপাতের সম্ভাবনা হতে পারে। ফাইনাল খেলা বৃষ্টির জন্য ভেস্তে গেলে রিজার্ভ ডে হিসাবে সোমবারকে রাখা হয়েছে।