দ্বাদশতম আইপিএলে হারের ডবল হ্যাটট্রিকে আরসিবির কোয়ালিফায়ারে খেলা অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপে

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন দিল্লি ক্যাপিটলসের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়র (Photo: IANS)

বেঙ্গালুরু – এটা কি স্বাভাবিক ব্যাপার! টানা ছয়টি ম্যাচে পরাজয়… হারের ডবল হ্যাটট্রিক এটা কিছুটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। কোথায় ভুলত্রুটি রয়েছে সেটা এখনাে ঠিক করে বুঝেই উঠতে পারছে না রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দল। তবে বুঝে ওঠার আগেই দ্বাদশতম আইপিএলে হারের ডবল হ্যাটট্রিকের সুবাদে বিরাটদের কোয়ালিফায়ারে খেলা যে প্রায় অনিশ্চয়তার ঘেরাটোপের মধ্যে পড়ে গেল সেটা বলাই বাহুল্য। নাইটদের কাছে ঘরের মাঠে অস্বাভাবিক ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর ঠিক একদিন বাদেই রবিবার আবারও দিল্লি ক্যাপিটালস দলের কাছে বিরাটের রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দল সাত বল বাকি থাকতে চার উইকেটে পরাজিত হল। এদিকে ঘরের মাঠে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দলের কাছে ঘরের মাঠে পরাজিত হওয়ার পর অ্যাওয়ে ম্যাচে খেলতে নেমে শ্রেয়স আইয়ের দিল্লি ক্যাপিটালস দল অসাধারণ জয় তুলে নিল, এবং মূল্যবান দু’পয়েন্ট সংগ্রহ করে ছয় ম্যাচে ছয় পয়েন্ট সংগ্রহ করে পয়েন্ট টেবলে পঞ্চম স্থানে উঠে এল। রবিবার টসে জিতে দিল্লির অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়র প্রথমে আরসিবিকে ব্যাট করার জন্য আহ্বান জানান। ব্যাট করতে নেমে আরসিবি বিরাটের ৪১ ও মঈন আলির ৩২ রানের উপর ভর করে কোনরকমে মান বাঁচিয়ে কুড়ি ওভারে আট উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান তােলে। ১৫০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে দিলি ক্যাপিটালস দলের অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়রের ৬৭, পৃথ্বির ২৮, কোলিন ইনগ্রামের ২২ ও ঋষভের ১৮ রানের উপর ভর করে দিল্লি সাত বল বাকি থাকতে ছয় উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায় ১৫২ রান।

নাইটদের বিরুদ্ধে দুশাের বেশি রান তােলার পরেও আরসিবিকে পরাজিত হতে হয়েছিল রাসেলঝড়ের সামনে পড়ে। কিন্তু, রবিবার বিরাট কোহলিরা মাঠে নেমেছিল দিল্লি ক্যাপিটালস দলের বিরুদ্ধে প্রথম জয় তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং কোয়ালিফায়ারে যাওয়ার রাস্তাটা কিছুটা হলেও জিইয়ে রাখার জন্য। কিন্তু, এই কাজেও ব্যর্থতার মুখে পড়তে হল আরসিবির ক্রিকেটারদের। কোনও সময়ের জন্য ঘরের মাঠের সুবিধা নিতে পারল না বিরাট কোহলির দলের ক্রিকেটাররা। দিল্লির কাছেও মুখ থুবড়ে পড়তে হল আরসিবিকে। এবং প্রতিযােগিতায় হারের ভবল হ্যাটট্রিকের মুখে পড়ে আরসিবি দল কার্যত কোয়ালিফায়ারে যাওয়ার রাস্তাটা অনিশ্চিয়তার মধ্যে ফেলে দিল। এগারাে বার আইপিএলে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে, আর দ্বাদশতম আইপিএলেও যে বিরাটদের খালি হাতে ফিরতে হবে তবে কোথায় শেষ করে সেটা এখন জানা নেই কারাের। কতটা লজ্জার মধ্যে পড়তে হতে পারে আরসিবিকে সেটাই দেখার। তবে, একটা কথা বলে রাখা ভালাে ক্রিকেট সবসময় অঘটনের খেলা। এখানে যখন খুশি যখন তখন সব কিছু বদলে যেতে পারে। এখন বিরাটদের ভাগ্য এবং বড়সড় কোনও অঘটনের সুবাদেই বিরাটদের কোয়ালিফায়ারের রাস্তা খুলতে পারে। না হলে বারাে বছরে আরসিবির সমর্থকরা বুকের মধ্যে যে কষ্ট পেয়ে এসেছে সেটাই তাদের বয়ে নিতে হবে এবারও সেটা এখন থেকে বলে দেওয়া যেতে পারে।

গত ম্যাচে নাইটদের বিরুদ্ধে আরসিবির ব্যাটসম্যানরা দুশাের বেশি রান করেছে, এবং দিল্লি ক্যাপিটালস দলের অধিনায়কও টসে জিতে প্রথমে বিরাটদের ব্যাট করার জন্য আহ্বান জানান। দর্শকরা মাঠে এসেছিল রবিবার ছুটির দিনে দলের প্রথম জয়টা দেখার জন্য। এতােগুলাে ম্যাচে পরাজিত হওয়ার পর তারা যেভাবে বিরাটদের সমর্থন করে চলেছে তা অসাধারণ। কিন্তু, আরসিবির ক্রিকেটাররা তাদের মন ভরিয়ে দিতে পারছে কখনােই। টসে হেরে নিয়মিত ব্যাটিং বিপর্যয়, একের পর এক উইকেট হারিয়ে চাপের মধ্যে পড়তে থাকে বিরাটদের দল। অবশ্য বিরাটদের দলের ব্যাটিংয়ের শিরদাঁড়া ভেঙে দেওয়ার কাজটা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কিসাগাে রাবাডা একাই। চার ওভারে একুশ রান খরচ করে চারটি উইকেট সংগ্রহ করে আরসিবির ইনিংস থামিয়ে দেয় আট উইকেট ১৪৯ রানে। বিরাট দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করেছে। তবে, শেষদিকে মঈন আলি আঠারাে বলে ৩২ রান যদি না করতে পারতেন তা হলে হয়তাে এই জায়গাতেও পৌছাতে পারত না আরসিবি।


১৫০ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে দিল্লি ক্যাপিটালস দল শুরুটা মােটেই ভালাে করতে পারেনি। শুরুতেই কোনও রান করতে না পেরে শিখর ধাওয়ান আউট হয়ে যান। শুরুতেই উইকেট তুলে নেওয়ার পর বিরাটদের মনে আশা জাগিয়েছিলেন সাউদি। কম রান করেও এই ম্যাচে জয় তুলে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে তারা। কিন্তু, তরুণ পৃথির মারকুটে ব্যাটিং এবং অধিনায়ক শ্রেয়স আইয়রের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস বিরাটদের আশায় জল ঢেলে দিয়ে যায়। তবে আরসিবির বােলিং শক্তি যে একেবারে নিম্নমানে গিয়ে ঠেকেছে সেটা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল। কারণ আরসিবি দলে কোনও ম্যাচ উইনিং বােলার নেই। যেখানে শনিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বিরাটদের থেকে কম রান তুলেও, বােলারদের সহায়তায় হায়দরাবাদের মতন শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপে ঘেরা দলকে একশাে রানের গন্ডি টপকাতে না দিয়ে জয় তুলে নিল সেখানে বিরাটদের দলের বােলাররা সেই কাজটা করে দেখাতে পারল না। আর তাই আরাে একটা হারের মুখ দেখতে হল আরসিবিকে। এদিকে পৃথি আঠাশ রান করে আউট হয়ে গেলেও দিল্লির অধিনায়ক আইপিএল কেরিয়ারে এগারােতম অর্ধশতরান করে দলকে জয়ের মুখে পেীছে দেন। কিন্তু তিনি ৬৭ রান করে আউট হয়ে গেলেও, শেষদিকে কোলিন ইনগ্রামের ২২ পন্থের ১৮ রানের উপর ভর করে দিল্লি ক্যাপিটালস দল সাত বল বাকি থাকতে ছয় উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌছে যায় ১৫২। অসাধারণ বােলিং পারফরমেন্স করে দেখিয়ে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন দিল্লি ক্যাপিটালস দলের প্রােটিয়াস পেসার কিসাগাে রাবাডা।

একটানা ছয়টি ম্যাচে হারের পর কিছুটা রাগ ও ক্ষোভের মধ্যে দেখা গেল আরসিবির অধিনায়কের সুরে। খেলার পর সাংবাদিকদের মুখােমুখি হয়ে বিরাট কোহলি পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘প্রতিদিন হারের কারণ দিতে নারাজ। রােজ এর উত্তর আমার কাছে নেই। আমরা ভেবেছিলাম ১৬০ রানটাই এই পিচে সুবিধা হবে। কিন্তু আমরা সেই কাজে অসফল হয়েছিল কারণ নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারিয়েছি। তবে, আমরা দেড়শাে রানে পৌছাতে পেরেছিলাম একটা সুযােগ ছিল জয় তুলে নেওয়ার। আমরা অনেক চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা কার্যকরী ভূমিকা নেয়নি। তাে সেই অর্থে আমাদের প্রতিদিন কিছু না কিছু অসুবিধা থেকে যাচ্ছে তাই এর কারণটা আর আলাদা করে বলতে পারছি না’।