অবাক হলেও সত্যি। পুরুষ সিনিয়র দলের মধ্যে থেকে বড়জোর একজন কী দু-জন জাতীয় দলে ডাক পান। অথচ মেয়েদের দল থেকে দশজন এবার জাতীয় স্কোয়াডে ডাক পেলেন। যা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কাছে নিঃসন্দেহে গর্বের। ২৩ জুন থেকে ৫ জুলাই থাইল্যান্ডের চিয়াং মাইতে-তে এএফসি মহিলা এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের খেলা হবে। ভারত আছে গ্রুপ বি-তে। থাইল্যান্ড, মঙ্গোলিয়া, পূর্ব তিমুর ও ইরাকের বিরুদ্ধে খেলতে হবে ভারতকে। সেইজন্য ৩৯ জন মহিলা ফুটবলারকে ডেকে নিয়েছেন জাতীয় দলের কোচ ক্রেসপিন ছেত্রী। ১ মে থেকে বেঙ্গালুরুতে পাড়ুকোন-দ্রাবিড় সেন্টার ফর স্পোর্টস এক্সিলেন্সে শুরু হবে মেয়েদের শিবির। সেই শিবিরে দশজন মহিলা ফুটবলার ডাক পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত ইস্টবেঙ্গল কোচ অ্যান্টনি অ্যান্ড্রু। কোনও রাখঢাক না রেখে অ্যান্টনি জানিয়ে দিলেন, ‘একজন কোচ হিসেবে নিঃসন্দেহে গর্বের। একটা দল থেকে যদি দশজন জাতীয় দলে ডাক পায় তাহলে কোচ হিসেবে খুবই আনন্দের হয়ে দাঁড়ায়। যে কোনও দলের কাছেও নিঃসন্দেহে বড় খবর। আমার মনে হয়, ইস্টবেঙ্গলের কাছেও ব্যাপারটা ভালোই হবে।’
পুরুষ দল যখন ব্যর্থতার নামাবলী গায়ে দিয়ে আসমুদ্র হিমাচলে খেলে বেড়াচ্ছে তখন ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল দেখিয়ে দিল, কীভাবে সাফল্যের সিঁড়ি ধরে উঠতে হয়। একের পর এক দলকে হারিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, পুরুষ দলের কোচ অস্কার ব্রুজো গোল না পাওয়ার জন্য হা হুতাশ করছেন তখন মহিলা দল গোলের বান ডেকেছে। একা সৌম্য গুগুলথ কিনা করেছেন ৯টা গোল। ভারতীয় ফুটবলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোলদাতা। দলের অপর ঘানার স্ট্রাইকার করেছেন ১০টা গোল। তাই বলে সৌম্যা গুগুলথকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য সিংহভাগ কৃতিত্ব দিতে নারাজ অ্যান্টনি। তাঁর মতে, ‘মেয়েটাকে আমি তিন বছর ধরে চিনি। তাকে কাছ থেকে দেখার সূত্রে বলতে পারি, তার কোন দিকটা শক্তিশালী আর কোন দিকটা দুর্বল, তা আমার নখদর্পণে। সৌম্যা নিঃসন্দেহে একটা দলের কাছে সম্পদ। তবু বলব, সৌম্যা কিন্তু দলকে চ্যাম্পিয়ন করেনি। গোলকিপার থেকে সৌম্যা প্রত্যেকেই দলকে শিখরে পৌছবার অবদান রেখে গিয়েছে।’ এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে এবার যোগ দেবে ইস্টবেঙ্গলের মহিলা দল। এই দল নিয়ে যে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কিছু করা অসম্ভব তা বুঝে গিয়েছেন অ্যান্টনি। তাই ইস্টবেঙ্গল কোচ ঠিক করে ফেলেছেন, দলের খোলনলচে পাল্টে ফেলবেন। ‘এই দল নিয়ে এএফসি মহিলা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ভালো কিছু করা অসম্ভব। এখন থেকে বলে দিতে পারে, দলে পরিবর্তন ঘটাতেই হবে। কাদের নিয়ে দল গড়ব তা এখনও ঠিক করিনি। ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে বসব। আমার কিছু প্রস্তাব আছে তা তুলে ধরবার চেষ্টা করব। তারপর বুঝে শুনে এগোতে হবে। সোজা কথা, ভাল কিছু করতে হলে দলে পরিবর্তন না করে উপায় নেই।’
সামনেই আছে কন্যাশ্রী কাপ। আইএফএ পরিচালিত কন্যাশ্রী কাপ সম্ভবত ২৪ এপ্রিল থেকে শুরু হবে। সেখানে বর্তমান দলকে যে খেলতে দেখা যাবে না তাও বলে দেওয়া যায়। তার কারণ জাতীয় ক্যাম্প। সেইজন্য ইস্টবেঙ্গল কোচ ঠিক করেছেন, জুনিয়রদের নিয়ে দল গড়বেন। বিশেষ করে যারা আগামী দিনে সিনিয়র দলে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন, এমন সম্ভাবনাময় ফুটবলারদের দলে রেখে এগোতে চাইছেন অ্যান্টনি। বলেই দিলেন, ‘কন্যাশ্রী কাপে আই লিগ খেলা দলকে পাওয়া যাবে না। এমনিতেই এই দল থেকে দশজন চলে যাচ্ছে জাতীয় ক্যাম্পে। তার উপর আমি চাইব কন্যাশ্রী কাপে জুনিয়ররা খেলুক। বিশেষ করে যারা আগামী দিনে সিনিয়র দলে খেলার যোগ্য। তাই কন্যাশ্রী কাপে জুনিয়র দলকে খেলাব।’ পুরুষ দল যখন ধুঁকছে তখন মহিলা দলের উপর চাপ পড়াটা স্বাভাবিক। লাল-হলুদ জনতা তখন তাকিয়ে থাকতো মহিলা দলের দিকে। যদি এই সাফল্যকে ধরে রেখে বিতর্কের পেয়ালায় তুফান তোলা যায়। কিন্তু অ্যান্টনি জানিয়ে দিলেন, তেমন কোনও চাপ তিনি কখনও অনুভব করেননি। ‘বিশ্বাস করুন কেউ কোনও চাপ আমাকে দেয়নি।
সকলে এসে বরং উৎসাহ দিয়ে যেত। ক্লাবের কেউ যেমন দলগঠনে নাক গলায়নি। আবার কেউ এসে বলেনি, অমুক ম্যাচটা না জিতলে হবে না। তবে হ্যাঁ, আমি সবসময় চেষ্টা করে গিয়েছি দলকে একটা সাফল্যের মধ্যে ধরে রাখতে। তাছাড়া চাপের মধ্যে থাকলে ভালোটাই সবসময় আমার বেরিয়ে আসে।’ এখনও ওড়িশা ম্যাচকে ভুলতে পারেননি অ্যান্টনি। ১১ এপ্রিল সৌম্যা গুগুলথ-এর করা একমাত্র গোলে ওড়িশাকে হারিয়ে আই লিগ ঘরে তুলে নেয় ইস্টবেঙ্গল। সেই ম্যাচ জেতার পর আই লিগে আরও একটা ম্যাচ গোকুলামের সঙ্গে বাকি ছিল লাল-হলুদের। কিন্তু ওড়িশাকে হারানোর পর আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত হয়ে যায় ইস্টবেঙ্গলের। ‘আমি কিন্তু কখনও ভাবিনি আই লিগ আমরা চ্যাম্পিয়ন হব। একটার পর একটা ম্যাচ ধরে এগোনোর চেষ্টা করেছি। তাই ওড়িশাকে হারানোর পর নিশ্চিত হয়ে যাই আমাদের ঘরে আই লিগ আসছে। সেইজন্য ওড়িশা ম্যাচ আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে।’ অ্যান্টনির দু-চোখে এখন একটাই স্বপ্ন ইস্টবেঙ্গলকে বিদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত করা। সেইদিকটাই এখন পাখির চোখ করে ফেলেছেন অ্যান্টনি।