ঘরের ছেলেরা জানতো বিদেশি ফুটবলারদের রুখে দিতে হবে: সমীর

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ডেম্পো স্পোর্টস ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলার ও বর্তমান দলের কোচ সমীর নায়েক-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে রণজিৎ দাস।

প্রশ্ন : সুপার কাপের প্রথম ম্যাচেই অঘটন।ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে রুখে দেওয়ার কোন বিশেষ পরিকল্পনা কাজে দিল?

সমীর নায়েক : ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শক্তি জানতাম। ওদের শক্তি নিয়ে বিশেষ চিন্তা ছিল না। নিজেদের স্বাভাবিক খেলায় মন ছিল। ভালো ফুটবল উপহার দেওয়া লক্ষ্য ছিল। ওদের রুখে দেওয়া গেছে। এবং আমরা ভালো খেলেই পয়েন্ট অর্জন করেছি। পিছিয়ে থেকেও ছেলেরা গোল শোধ করে দিয়েছে।


প্রশ্ন : ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে যে দল নামিয়েছিলেন, সেটাই কি এই মরশুমে আপনাদের আইলিগের টিম?

সমীর নায়েক : এটা আমাদের আইলিগের টিম নয়। আমাদের আইলিগের প্রস্ততি এখনো সেই অর্থে শুরু হয়নি। আমরা সবে মাঠে নেমেছি। ভারতীয় ফুটবলারদের নিয়ে প্র্যাকটিস শুরু হয়েছে। সুপার লিগে আমাদের খেলার কথা ছিল না। শেষমুহুর্তে রিয়েল কাশ্মীর যোগ না দেওয়াতে আমাদের খেলতে হচ্ছে। মাত্র ১৯জন ফুটবলার নিয়ে সুপার কাপ খেলছি। ৬জন অ্যাকাডেমির ফুটবলারকে স্কোয়াডে নিতে হয়েছে। এছাড়া এই দলে আরো ৫জন জুনিয়র ফুটবলার আছে। সম্পূর্ন জুনিয়র দল।

প্রশ্ন : ডেম্পো স্পোর্টস লোকাল প্রো-লিগে অপরাজিত দল। আপনার টিম আত্মবিশ্বাসী হয়েই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে শুরু করেছিল?

সমীর নায়েক : আত্মবিশ্বাস ছিল। কিন্তু প্রো-লিগে আমাদের সম্পূর্ন অন্য দল খেলে থাকে। আমাদের রির্জাভ টিম সেখানে খেলে। কোচ সেখানে আলাদা। যেহেতু কম সময়ের নোটিশে আমাদের সুপার কাপ খেলতে হচ্ছে। তাই রির্জাভ টিমের খেলোয়াড়দের আমাদের এই সুপার কাপের টিমের জন্য নিতে হয়েছে। রির্জাভ টিমের ৭০% এর বেশি ফুটবলার আমাদের মেইন টিমে সবসময় সুযোগ পায়।

প্রশ্ন : আপনি ডেম্পো স্পোর্টস ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলার। লোকাল ফুটবলার তুলে আনার ক্ষেত্রে আপনাদের পরিকল্পনা কেমন থাকে?

সমীর নায়েক : আমাদের অ্যাকাডেমির ফুটবলাররাই ধীরে ধীরে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলে খেলে উঠে আসে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে লক্ষ্মণরাও রানে দ্ধিতীয় গোল করেছে। ১৫বছর বয়সে ছেলেটি আমাদের অ্যাকাডেমিতে আসে। আমাদের ক্যাম্পের ফুটবলার রজত, একদিন ওর গ্রামের এই ছেলেটিকে ট্রায়ালে নিয়ে আসে। গত ৬বছর ধরে লক্ষ্মণরাও আমাদের ক্লাবে আছে। খুব প্রতিভাবান ফুটবলার। ডাংঙ্গেলের পরিবর্তে মাঠে নামে। এবং গোল করলো। সে আমাদের অ্যাকাডেমির ফুটবলার। দু’জন দিল্লির ও একজন মনিপুরের ফুটবলার প্রথম একাদশে ছিল। এছাড়া সবাই লোকাল ফুটবলার। স্কোয়াডে মাত্র ৫জন ভিন্নরাজ্যের ফুটবলার।

প্রশ্ন : আপনার সময়ে ডেম্পো স্পোর্টস ক্লাব এএফসি ‘এশিয়ান ক্লাব কাপে’র সেমিফাইনালে খেলেছে।হঠাৎ ক্লাব সেই মূলস্রোত থেকে ছিটকে গেল কেন?

সমীর নায়েক : ভারতীয় ফুটবলের কাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের তা মানতে হয়েছে। কিন্তু ফুটবল থেকে ডেম্পো স্পোর্টস পিছিয়ে থাকেনি। আইলিগের তৃতীয় বিভাগ থেকে আমরা আইলিগের মূলপর্বে উঠে এসেছি। অনভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের নিয়ে গত মরশুমে খেলতে হয়েছে। ছেলেরা একবছর আইলিগ খেলে কিছুটা অভিজ্ঞ হয়েছে। আশাকরা যায়, এই মরশুমে আমরা ভালো ফুটবল উপহার দিতে পারবো। আইলিগে চ্যাম্পিয়ান হলে আমরা আবার দেশের সর্বচ্চো লিগে খেলতে পারবো।

প্রশ্ন : ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার হিসেবে,বর্তমান ভারতীয় ফুটবলের মান সম্পর্কে আপনার অভিমত কেমন?

সমীর নায়েক : বিদেশি ফুটবলারদের সাথে খেলতে খেলতে আমাদের ছেলেদের খেলার মান বেড়েছে। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আমাদের ভারতীয় ছেলেরা কি খারাপ খেললো? ধীরে ধীরে আরোও উন্নতি হবে। ইয়ুথ ডেভলপমেন্টের উপর নজর বাড়ানো দরকার।

প্রশ্ন : ইস্টবেঙ্গল বিদেশি ফুটবলার ও বিদেশি কোচ নিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে কেন? কোথায় পরিবর্তন দরকার?

সমীর নায়েক : অস্কার ব্রুজোঁ তো কোচ। অস্কার ব্রুজোঁকে বাদ দিয়ে যে কোচিং স্টাফ আছে,তাদের জন্য যে বেতন খরচ হয়, সেই বাজেট আমাদের ডেম্পো ক্লাবের নেই। কিন্তু তাদের ইয়ুথ ডেভলপমেন্টের বাজেট কত? পরিকাঠামো কি আছে? বড় বাজেটের টিম করে আপনি ট্রফি পাবেন। কিন্তু ফুটবলার তুলে আনতে ইয়ুথ ডেভলপমেন্টের উপর জোর দিতে হবে। তারপরে এই সিস্টেমে প্রথম একাদশে ৬জন ফুটবলার বিদেশি এবং ১জন গোলকিপার থাকছে। আর ক’জন ভারতীয় ফুটবলারকে আপনি তাহলে দলে সুযোগ দিতে পারবেন?

প্রশ্ন : ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট পেয়ে আপনারা গ্রুপে থেকে পরের রাউন্ডে যেতে কতটা আত্মবিশ্বাসী হলেন?

সমীর নায়েক : ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান— দুটো দলই শক্তিশালী দল। গ্রুপে তারাই ফেভারিট। ভালো ফুটবল খেলে যতটা ভালো হয়, সেই রেজাল্ট করাই আমাদের লক্ষ্য আছে। এই ফলাফল ভালো হলে, আগামী সময়ের খেলায় আমাদের অনেক ভালো রেজাল্টে সাহায্য করবে। সুপার কাপে এখন ম্যাচ বাই ম্যাচ ভাবছি। এরমধ্যেই সবাইকে সুযোগ করে দিতে হবে। সুপার কাপে খেলার সুযোগ পেয়ে আমাদের তরুন ফুটবলারদের অনেক উপকার হবে। ওরা অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে।