মেয়েদের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নতুন অধ্যায় রচনা করে ভারতীয় ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক মঞ্চে নজির গড়েছে। ক্রিকেটের পরিভাষায় বলা যায়, ভারতের মেয়েরা যে জাগরণের ডাক দিলেন, তা আগামী দিনের জন্য বড় হাতিয়ার। বিশ্ব খেতাব জয়ের পরে ভারতীয় দল এখন যে কোনও দলের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে বলতে পারে, আমরা সেরা। এতদিন ধরে যে স্বপ্ন দেখছিলেন ভারতের মেয়েরা, সেই স্বপ্নের কারিগর হয়ে এক নতুন ইতিহাস রচনা করলেন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থাও খুঁজে পেল এক নতুন চ্যাম্পিয়ন দলকে। যে দলটার নাম ভারত। ভারতের জয়গানে সাড়া বিশ্ব আজ মুখর।
গত ২৫ বছর ধরে ভারতের মেয়েরা যে লড়াই চালিয়ে আসছিলেন, তার পূর্ণতা এতদিন খুঁজে পাননি। হয়তো দু-দু’বার ফাইনালে খেলার সুযোগ পেলেও, খেতাব ঘরে তুলে আনতে পারেনি। সেই কারণে তৃতীয়বারে যখন ভারত ফাইনালে পৌঁছে গেল, তখন থেকেই ভারতের মেয়েরা যেন বিপ্লবী ভূমিকা নিয়ে একের পর এক ম্যাচে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। হয়তো সেখানে কোনও কোনও খেলায় ধাক্কা খেতে হয়েছে। তবুও তাঁদের অদম্য সাহস এবং লক্ষ্যকে জয় করার ইচ্ছা থেকে সরে দাঁড়াননি। তাই তো রবিবারের রাতটা ভারতের কাছে ছিল বাজিমাত করার দিন। গভীর রাতে যখন খেলা শেষ হয়েছে, তখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের মেয়েরা আনন্দে শুধু উৎফুল্ল নয়, তারা যেন কত দিনের হারিয়ে যাওয়া সম্পদটাকে দু’হাত ভরে আদরে ভরিয়ে দিয়েছিলেন। সে এক অকল্পনীয় দৃশ্য। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে মুম্বই শহরের আকাশে তখন হঠাৎই ভেসে উঠল পূর্ণিমার চাঁদ। চারদিকে আলো ঝলমল। রঙ মশালের আলোয় সবাই মাখামাখি। এ এক অনন্য পরিবেশ। সত্যি স্বপ্নপূরণের দিন।
দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার জয়। যে প্রত্যয় নিয়ে এতদিন ভারতের মেয়েরা ক্রিকেট অঙ্গনকে মাতিয়ে রেখেছিলেন, সেই মেয়েরাই ভারতকে গর্ব করে বলতে পারলেন, আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। খেতাব জয়ের রাতের দিনটাকে কখনওই মনে হয়নি, এ রাতে হারিয়ে যাওয়াই তো আজ সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। খেলা শেষ হতেই অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌর হয়তো ছুটে যেতে চেয়েছিলেন সেই স্বপ্নের হৃদয়পুরে। হরমনপ্রীতকে ধরতে ছুটছেন রিচা ঘোষ, স্মৃতি মান্ধানা, শেফালি বর্মা, অমনজ্যোত সিং, জেমিমা, দীপ্তি শর্মা, রাধা যাদব, ক্রান্তি গৌড়, রেণুকা সিংরা ছুটছেন। কারওর মনে ক্লান্তি নেই। জয়ের আনন্দে প্রত্যেকেই ভেসে যেতে চান।
এই দিনটার রঙটা তো আলাদা। ইতিহাসের পাতায় সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে জগৎ সভায় ভারত আলোর দিশারী। হয়তো অনেক স্মৃতি কথা বলবে এই ভারতের মাটিতে। একদিন যেমন মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে মেতে উঠেছিল সারা মুম্বই শহর, ঠিক তেমনই ঐতিহাসিক ২ নভেম্বর জাগরণের দিন বলে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।