মোহনবাগান ক্লাবের নির্বাচনের দিন এখনও ঘোষণা হয়নি। খুব সম্ভবত জুন মাসের শেষ সপ্তাহে অথবা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে মোহনবাগানের নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু তার আগে শাসক গোষ্ঠী ও বিরোধী পক্ষরা নির্বাচনী প্রচারে ঝড় তুলেছেন। সাধারণ নির্বাচনের মুখে কোনও রাজনৈতিক নেতা যেমন দল বদল করে অন্য দলে চলে যান, ঠিক সেইভাবেই মোহনবাগান নির্বাচনে দলবদলের খেলা চলছে এখন। শুধু তাই নয়, নির্বাচনের প্রচারে দুই পক্ষই কথার ফুলঝুরিতে সভা মাতিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। একেক দিনে তিন-চারটি করে সভার আয়োজন করা হচ্ছে। শাসক গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে আবার সচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন দেবাশিস দত্ত। আর বিরোধী পক্ষের সচিব পদপ্রার্থী হচ্ছেন, সৃঞ্জয় বসু।
বর্তমান সচিব দেবাশিস দত্ত গ্রুপ মিটিং করে সদস্যদের কাছে বার্তা দিচ্ছেন মোহনবাগান ক্লাবের সাফল্যে কারওর একক কৃতিত্ব নয়। সমবেত প্রয়াসে আমরা সাফল্য পেয়েছি। সেই কারণেই ‘আমরা মোহনবাগান’ এই পরিচয় আমাদের পরিচয় হবে। কিন্তু সচিব পদপ্রার্থী সৃঞ্জয় বসু ‘আমাকে চাই’ বলে বড় বড় ফেস্টুন তৈরি করেছেন। মোহনবাগান ক্লাব যে একার নয়, সেটা বোঝানোর চেষ্টা করছে শাসক গোষ্ঠী, তেমনই আবার বিরোধী পক্ষ বলতে চাইছে, কাজ করার সুযোগ পেলে মোহনবাগানের নামকেই বড় করে দেখানো হবে। গত শনি ও রবিবার দুই পক্ষেরই নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উত্তর কলকাতায় একটি নির্বাচনী সভায় দেখা গেল সৃঞ্জয় বসুর সমর্থনে গায়ক ও বাচিক শিল্পীরা উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু মজার ব্যাপার গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তী স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন আমি মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল কোনও দলেরই নই। আমি সৃঞ্জয় বসুর দলে। তাহলে মোহনবাগানর কোনও পরিচয় নেই। তিনি এসেছেন একজনের ডাকে। আবার বাচিক শিল্পী জগন্নাথ বসু ও ঊর্মিমালা বসু বেশ কিছুটা সময় শোভাবর্ধন করে মঞ্চে ছিলেন। আবার যখন সৃঞ্জয় বসু সভাস্থলে আসছিলেন, তখন ব্যান্ড পার্টি সহ তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে আসা হয়। ক্লাব নির্বাচনে এই ধরনের প্রয়াসের প্রয়োজন আছে কি? এখন দেখা যাচ্ছে পদপ্রার্থীদের সমর্থনে এমন কথা বলা হচ্ছে, যা স্বাভাবিক নয়।
অন্যদিকে শাসক গোষ্ঠীর পক্ষে সচিব দেবাশিস দত্ত জানিয়্ছেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য সৌজন্যবোধ। কাউকে এমন কোনও কথা বলা ঠিক নয়, যা কাউকে ব্যথিত করে। আমরা যে সভা করছি, তা শুধু সদস্যদের নিয়ে করছি। কোনও বৃহদ আকারে সভা করে লোকদেখানো পক্ষপাতি নই। সদস্যরাই তো ভোট দেবেন? গায়ক, বাচিক শিল্পী বা অন্য ব্যক্তিত্বরা মোহনবাগান ক্লাবে ভোট দিতে আসবেন না। তাই তাঁদের দিয়ে সভায় ভিড় করিয়ে লাভ কী? কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন, শাসক গোষ্ঠী থেকে বেশ কয়েকজন বিরোধী গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছেন। তার উত্তরে সচিব দেবাশিস বলেন, যে দল সাফল্য পায়, সেই দলের ভালো প্লেয়ারকেই অন্য দল নেওয়ার চেষ্টা করে। তাহলেই তো স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বর্তমান প্রশাসক মণ্ডলী মোহনবাগান পরিবার হয়ে সাফল্যের ভিত গড়েছে। সেই কারণে সাফল্যের নিরিখে নির্বাচনে শাসক গোষ্ঠী এগিয়ে থাকবে। কেন অন্য দলে যাচ্ছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন। সবচেয়ে বড় কথা হল, কারওর বাবা যদি কোনও ভালো কাজ করে থাকেন, তাহলে সেই কৃতিত্ব ছেলের উপর বর্তাবে? সুনীল গাভাসকারের ছেলেও তো বলতে পারতেন, আমি ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হবো। আবার শচীন তেণ্ডুলকর কি বলবেন আমি বাবার জায়গা নেব। সেটা কি সম্ভব? কাজের মাধ্যমেই নিজেকে পরিচিত করতে হয়।