বুমরা, কুলদীপ, সিরাজদের গর্জনে কেঁপে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা শিবির

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারতের তরুণ ব্রিগেড ইডেন উদ্যানে যে গর্জন দেখাল, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবির কেঁপে উঠেছে। তারপরে বোলারদের হুঙ্কারে দিশেহারা হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা। টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা দল দক্ষিণ আফ্রিকার করুণ দশা উঠে এল ইডেন উদ্যানে প্রথম টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনেই। যে আশা নিয়ে মাঠে ছুটে এসেছিলেন কয়েক হাজার দর্শক, সেই আশা পূর্ণ হল না। সবাই ভেবেছিলেন, একটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে শুক্রবার প্রথম দিনেই। সেই ভাবনা সার্থক রূপ পেল না। প্রথম দিনেই দক্ষিণ আফ্রিকা মাত্র ১৫৯ রানে প্রথম ইনিংস শেষ করল। আর তার জবাবে দিনের শেষে ভারত ২০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৭ রান করেছে। অর্থাৎ অধিনায়ক শুভমন গিলরা ১২২ রানে এখনও পিছিয়ে রয়েছেন। এদিন টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ব্যাটিংয়ে সুবিধা আদায় করার জন্য ভারতকে বল করার অনুরোধ করে। কিন্তু অধিনায়কের চিন্তাধারা সফল হল না। একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের বোলাররা বুঝিয়ে দিলেন, সাহসীকতা কাকে বলা হয়। ক্রিকেটের পরিভাষায় সবসময় একটা কথা বলা হয়, প্রথম আক্রমণ যদি সফল হয়, সেখানে প্রতিপক্ষ দলের প্রতিরোধ কখনওই দানা বাঁধতে পারে না। ঠিক তাই হল।

দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার রায়ান রেকেলটন ও এইডেন মার্করাম শুরুটা খুব একটা খারাপ করেননি। আগ্রাসী মেজাজে খেলার চেষ্টা করতে থাকেন দুই ওপেনার। ১০ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকা কোনও উইকেট না হারিয়ে ৫৭ রান স্কোরবোর্ডে তোলেন। তারপরেই ভারতের বোলারদের আগুনে বোলিংয়ে ঝলসে যান প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটাররা। ইডেন এই প্রথম টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামলেন ভারতের যশপ্রীত বুমরা, কুলদীপ যাদব, অক্ষর প্যাটেল ও মহম্মদ সিরাজ। ভারতের এই চার বোলারের দাপটে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবির লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এই চারজন বোলারই ১০টি উইকেট ভাগাভাগি করে নেন। তবে যশপ্রীত বুমরা দুরন্ত ভূমিকা পালন করে একাই মাত্র ২৭ রান দিয়ে পাঁচটি উইকেট দখল করেন। আহমেদাবাদের এই জোরে বোলার এদিন নানা রেকর্ডে উজ্জ্বল হয়ে উঠলেন।

কুলদীপ যাদবকে নিয়েও প্রশ্ন ছিল, তিনি কি প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে থাকবেন? কিন্তু কোচ গৌতম গম্ভীর চমক দেওয়ার জন্যই কুলদীপকেই দলে রেখে লড়াই করার জন্য অনুপ্রাণিত করেন। কুলদীপের ঘূর্ণিঝড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা নাজেহাল হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত তিনি ৩৬ রানে দু’টি উইকেট পান। প্রথম উইকেটটা অত্যন্ত মূল্যবান উইকেট। আর ওই উইকেটটি হল অধিনায়ক বাভুমার। দ্বিতীয় উইকেটি পান উইয়ান মুলডারের। মহম্মদ সিরাজ ৪৭ রান দিয়ে দু’টি উইকেট পেয়েছেন। আর একটি উইকেট পান অক্ষর প্যাটেল। মধ্যাহ্নভোজের বিরতি পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা ১০৫ রান করে। আউট হন রিকেলটন ২৩ রানে, মার্করাম ৩১ রানে ও বাভুমা আউট হন ৩ রানে। মধ্যাহ্নভোজের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটাররা আর বেশিক্ষণ উইকেটে টিকে থাকতে পারেননি।


পরপর আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে পা বাড়াতে থাকে একে একে মুল্ডার ২৪, টনি ডি জর্জি ২৪, কাইল ভেরেন ১৬ রানে আউট হয়ে যান। বেশ চাপে পড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা দল। মাঝেমধ্যেই তারা অবিবেচক ভূমিকা নিয়ে ডিআরএস চাইতে থাকে। কিন্তু সেখানেও তাদের পিছিয়ে পড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত তিনটি আউটের ক্ষেত্রে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া কোনও পথ ছিল না। শেষ পর্যন্ত ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন ট্রিস্টান স্টাবস।

চোট সারিয়ে টেস্ট দলে আবার ফিরে এসে ঋষভ পন্থ ইডেনে সবার মন জয় করে নিলেন। খেলতে নামার আগে ঋষভ যেভাবে অনুশীলনে নিজেকে আত্মস্থ করে নিয়েছেন, তাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল তিনি পুরোপুরি ফিট। হয়তো সেই কারণেই সতীর্থ বোলারদের জানিয়ে দিয়েছিলেন, ইডেনের এই উইকেটে কীভাবে বল করতে হবে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। ঋষভের কথা শুনে বুমরা থেকে শুরু করে কুলদীপ যাদবরা সাহসী ভূমিকা নিয়ে একেবারে লেনথে বল করতে থাকেন। যার ফলে একাধিকবার উইকেট পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। আর ওই ফাঁদে পা দিয়ে আউট হন বাভুমা ও মুল্ডার। দিনের শেষে ভারত ১ উইকেট হারিয়ে ৩৭ রান করেছে। উইকেটে রয়েছেন লোকেশ রাহুল ১৩ রানে আর ওয়াশিংটন সুন্দর ৬ রানে। যশস্বী জয়সওয়ালের হাতে ভালো রান এলো না। সপ্তম ওভারে ভারতের ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালকে ফিরিয়ে দেন জেনসন। যশস্বী মাত্র ১২ রান করেন।

অনেকেই আলোচনায় মুখর হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া সফরের পর যশপ্রীত বুমরা কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন? কিন্তু সেই কথা উড়িয়ে দিয়ে ইডেন উদ্যানে বুমরার ভয়ঙ্কর রূপ দেখতে পাওয়া গেল। বুমরা যখন একের পর এক উইকেট নিচ্ছেন, তখন ইডেনের দর্শকরা চিৎকার করে ওঠেন বুম বুম বুমরা। এই মুহূর্তে ১৬ বার পাঁচটি উইকেট নিলেন টেস্টে। বুমরা ভারতীয়দের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। আর শীর্ষে রয়েছেন, ভারতের কপিল দেব। সাংবাদিকদের সঙ্গে মুখোমুখি হতেই বুমরা বলেন, ইডেনের উইকেট আমাকে দারুণভাবে সহযোগিতা করেছে। ভালো উইকেট পেলে বল করে আনন্দ পাওয়া যায়। দলের প্রয়োজনে সবসময় বল করার ইচ্ছে হয়। আমি সবসময়ই খেলতে চেষ্টা করি। শরীর ফিট থাকলে কোনও অসুবিধে হয় না। আমি সব ফর্ম্যাটেই খেলতে চাই এবং সেরা খেলা উপহার দিয়ে দেশকে জেতানোই আমার লক্ষ্য। বুমরা আরও বলেন, ধৈর্য ধরে থাকতে হয়। আর এই ধৈর্যই হল টেস্ট ক্রিকেটের প্রধান মন্ত্র।

যদি নিজেকে সংযত রাখা যায়, তাহলে সাফল্য আসবে। প্রথম ওভারে বোলিং বিভিন্নরকম হচ্ছিল। কারণ বল শক্ত ছিল। তারপরেই যখন বলটা নরম হয়ে গেল, তখন নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে বল করতে আর কোনও অসুবিধাই হয়নি। টেস্ট ক্রিকেটে সবসময়ই একটা চ্যালেঞ্জিং মুড থাকে। ইংল্যান্ডে যেরকম পরিবেশ, সেই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা হল আসল কাজ। ঠিক এইভাবেই যে কোনও উইকেটে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য সেই পরিবেশকে হাতিয়ার করতে হয়। সেই কারণে রিভার্স সুইং করে প্রতিপক্ষ দলকে চাপের মধ্যে রাখার চেষ্টা করেছি।

এখন দেখার বিষয় দ্বিতীয় দিনের সকালটা যদি ভারতের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান সামাল দিয়ে দিতে পারেন, তাহলে স্কোরবোর্ডে বড় রান তোলাটা খুব একটা কঠিন হবে না। আর যদি বড় রানের অঙ্ক ভারত প্রথম ইনিংসে করতে পারে, তাহলে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানো কোনও ব্যাপারই হবে না। তাই জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপাতে হবে ভারতের তরুণ ব্রিগেডকে।