পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী
গোঁজামিলে অঙ্কের উত্তর মিলিয়ে দিলে, সেই অঙ্কে নম্বর পাওয়া যায় না। ঠিক এমনই হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের কোচ গৌতম গম্ভীরের অবস্থা। হয়তো তিনি কাউকে কাউকে জবাব দেওয়ার জন্য এমন দল গঠন করেছিলেন, যা একেবারেই ব্যর্থ হয়েছে। আসলে ইডেন উদ্যানে প্রথম টেস্টের ম্যাচে যে লজ্জার হারে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে মুখ লুকিয়েছিল ভারতীয় ব্রিগেড। সেই জায়গা থেকে কেন কোচ কোনও শিক্ষা নিলেন না, তার উত্তরটা তাঁর পক্ষে দেওয়া সম্ভব হবে না। তিনি সবসময়ই বলে থাকেন, তরুণ ব্রিগেড নিয়ে যে কোনও লড়াইয়ে বাজিমাত করা সম্ভব। অর্থাৎ তিনি চাইছেন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দলটাকে এমন জায়গায় দাঁড় করাবেন, তখন তিনি বুক বাজিয়ে বলতে পারতেন, এই দেখো আমাদের সফল ব্রিগেড। কিন্তু সেই জায়গা থেকে একেবারেই তিনি ছিটকে গেলেন। নিজেকে কখনওই ভুল সিদ্ধান্ত বলে মেনে নিতে চান না। কি করুণ অবস্থা হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট দলের, তা আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এল গুয়াহাটিতে দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে। এই লজ্জার কোনও ব্যাখ্যা হবে না। এত বড় অঙ্কের ব্যবধানে ভারতকে হারতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে, সেটা লজ্জা থেকেও আরও লজ্জাজনক। ইডেন উদ্যানে পিচকে দোষ দিয়ে নিজেকে রেহাই দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন কোচ। কিন্তু এবারে গুয়াহাটির ম্যাচে হারের পিছনে কী কারণ আছে, তার মূল্যায়ন করবেন কি কোচ? দক্ষিণ আফ্রিকা একেবারে হোয়াইট ওয়াশ করে সিরিজটা পকেটে তুলে নিয়ে আনন্দে উৎফুল্ল হয়েছে। ভারতকে হারতে হয়েছে ঘরের মাটিতেই ৪০৮ রানে। এতো বীভৎস ব্যাপার!
এই উইকেটে যদি দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার ও ব্যাটসম্যানরা চোখে আঙুল দিয়ে খেলতে পারেন, তাহলে ভারতের এই দৈন্যদশা কেন হল, তার চুলচেরা বিশ্লেষণ করতেই হবে। টসে জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে যে কোনও ভুল করেনি, তা প্রমাণিত। দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার হেইডেন মার্করাম থেকে শুরু করে রায়ান, রিকেলটন, ট্রিস্টান স্টাবসরা যদি অর্ধ শতরনের কাছে পৌঁছতে পারেন, তাহলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা তার ধারে কাছে পৌঁছতে পারলেন না কেন? শুধু তাই নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা প্রয়োজনীয় সময় ৪১ রান উপহার দিয়েছেন। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে চলে গেলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার সেনুরান মুথুস্বামী। তাঁর ব্যাট থেকে এল ১০৯ রান। অপরদিকে কাইল ভেরেইনের ঝুলিতে জমা পড়ল ৪৫ রান। আর মার্কো জানসেন অল্পের জন্য শতরান থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৯৩ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৪৮৯ রানে। একমাত্র কুলদীপ যাদবের দখলে ছিল চারটি উইকেট। তার জবাব দিতে গিয়ে ভারতীয় দল একেবারে কোণঠাসা। একের পর এক ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নের দিকে শুধু পা বাড়িয়েছেন। যশস্বী জয়সওয়াল ৪৮ রান ছাড়া কারওর ব্যাট থেকে বড় অঙ্কের রান আসেনি। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ২০১ রানে। ইচ্ছে করলে দক্ষিণ আফ্রিকা ভারতকে ফলোঅন করতে পারত, কিন্তু তাদের বদান্যতায় ভারত সেই জায়গা থেকে রেহাই পেয়েছে। শুধু ব্যাটে নয়, বোলিংয়েও নজর কাড়লেন দক্ষিণ আফ্রিকার মার্কো জানসেন। তাঁর নামের পাশে লেখা হয়েছে ৬টি উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাট করতে নেমে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ২৬০ রান তোলার পরেই ভারতকে দান ছেড়ে দেয়। ওই রান করার ফাঁকে ট্রিস্টাল স্টাবস রাজকীয় ইনিংস খেললেন। তিনি ৬ রানের জন্য শতরানের হাসিটা হাসতে পারলেন না। পাশাপাশি, টনি ডি জর্জি ৪৯ রান করে আউট হয়ে যান। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা চারটি উইকেট পান। বিরাট অঙ্কের রানে পিছিয়ে থেকে ভারতীয় দলের সেই দৈন্যদশা আবার ফুটে উঠল। চতুর্থ দিনের শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ভারত ২৭ রান করেছিল। সবাই অপেক্ষা করেছিলেন, হয়তো ম্যাচের চরিত্র বদলে যেতে পারে, তাই ভারতীয় দল ৮ উইকেট হাতে নিয়ে দুরন্ত ক্রিকেট খেলবে, আশা করা গিয়েছিল। সেই আশা পুরোপুরি ব্যর্থ। ম্যাচ ড্র করার ভাবনাটা ভারতীয় দলের কোচ গৌতমের পাশে অধিনায়ক ঋষভ পন্থের কাছে ছিল না। আসলে হারের আতঙ্কে পুরো ভারতীয় দলটাই মানসিক দিক দিয়ে একেবারে ভেঙেচুরে একাকার হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় দলে সর্বনাশ ডেকে আনেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাইমন হারমার। হারমার একাই ৬টি উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জয়কে নিশ্চিত করে দিয়েছেন। নীতীশ কুমার রেড্ডি, ধ্রুব জুরেল, সাই সুদর্শন ও অধিনায়ক ঋষভ পন্থদের ব্যর্থতাই ভারতীয় দলকে একেবারে কোণঠাসা করে দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ৪০৮ রানে ভারতীয় দলকে উড়িয়ে দিয়ে গুয়াহাটির মাঠে তারাই জয়ের পতাকা উড়িয়েছে। আর তখন ভারতীয় দলের ক্রিকেটারদের মুখে শুধুই হতাশা আর হতাশা।
তাই ক্রিকেটের এই লজ্জার হার ভারতীয় দলকে কতদিন দিশেহারা করে রাখবে?