সম্প্রতি একাধিক রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপর যেভাবে অবমাননার ও হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ওড়িশা, অসম, হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্র সহ অন্যান্য রাজ্যে বাঙালি শ্রমিকদের উপরে যেভাবে অত্যাচার করা হচ্ছে এবং তাঁদের বাংলাদেশি তকমা দেওয়া হচ্ছে, তা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন, ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। বিভিন্ন জায়গায় বাঙালি শ্রমিকদের বিদ্যুতের লাইনও কেটে দেওয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। সৌরভের মতে, এই ধরনের ঘটনা শুধুমাত্র বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাষার উপরে আঘাত করা নয়, একটা বৃহত্তর সামাজিক ও জাতিগত হেনস্থা।
সৌরভ বলেছেন, বাঙালি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে অবমাননাকর আচরণ মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে বাংলার মালদহ, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর ও দক্ষিণ দিনাজপুর অঞ্চলের মানুষকে লক্ষ্য করে এই ধরনের কাজ চলছে। একটি শুধুমাত্র বাঙালি জাতির বিরুদ্ধেই এই ষড়যন্ত্র সাধারণ মানুষকে সংকটে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে প্রতিবাদ তীব্র থেকে তীব্রতর করছেন। ভাষা আন্দোলনকে সামনে এনে এক নতুন প্রতিবাদের ডাক দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মতে এই ধরনের হেনস্থা শুধু বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশের ঐক্য, বহুত্ববাদ ও পারস্পরিক সম্মানে মূল নীতি নষ্ট করার চেষ্টা চলছে। আগামী ২৭ জুলাই নানুর দিবস থেকে শুরু হবে এই ভাষা আন্দোলন। তাই সৌরভ গাঙ্গুলি এই বিষয়টি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলায় বড় হয়েছি, সম্মান পেয়েছি, এই বাংলার সংস্কৃতিকে কোনওভাবেই নষ্ট করা চলবে না।’ সৌরভ মুখ্যমন্ত্রীর আন্দোলনকে একটা ভাষাগত প্রতিবাদ হিসেবে দেখতে চান না। বরঞ্চ বৃহত্তর সামাজিক সংগ্রামের অংশ হিসেবে দেখতে চান। একজন সাধারণ মানুষকে হেনস্থার শিকার হতে হয়, তখন শুধু এক ব্যক্তি বা জাতির সমস্যা নয়। পুরো দেশটির নৈতিকতার প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়। এর জন্য দরকার সমাজের সকল স্তরের মানুষ এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে একত্রিত হওয়ার। এদিকে ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার আলভিটো ডি’কুনহা বলেছেন, জন্মসূত্রে গোয়ার বাসিন্দা হলেও প্রায় ২০ বছরেরও বেশি কলকাতায় রয়েছি। এই শহরটা আপন করে ফেলেছি। কলকাতার ভালোবাসায় মজে গিয়েছি। ফুটবল ছাড়লেও কলকাতা ছাড়িনি। কলকাতা তথা বাংলায় যে সম্মান পেয়েছি, সেটা কোনওদিনই অন্য রাজ্যে পেতাম না। নিজেকে কলকাতার ছেলে বলেই মনে করি। হিন্দু, মুসলিম, ক্রিশ্চান সবাই এক এই রাজ্যে। কোনওদিনই কোনও বিষয়ে অসুবিধা হয়নি। আমি বাঙালি হয়ে গিয়েছি।