রনজিৎ দাস
মোহনবাগান ২০১৯-২০ সালে আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। সেই সময় মোহনবাগান ক্লাবের কোচ ছিলেন কিবু ভিকুনার ও গোলকিপার কোচ ছিলেন দীপঙ্কর চৌধুরী। পরবর্তী সময় মোহনবাগান ক্লাবের আইএসএলের ক্লাব এটিকের সঙ্গে সংযুক্তিকরন ঘটে। তারপরে দীপঙ্কর চৌধুরী মোহনবাগান ক্লাব ছেড়ে পাঞ্জাবের তৎকালীন আইলিগের রাউন্ডগ্লাস পাঞ্জাব ক্লাবে যোগদান করেন। বর্তমান সময়ে বয়েজ গার্লসের বিভিন্ন পর্যায়ের ভারতীয় দলের গোলকিপার কোচের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রাক্তন ফুটবলার ও গোলকিপার-বি ডিপ্লোমাধারী দীপঙ্কর চৌধুরীর কোচিং জীবনে একেরপর এক সাফল্য এসেছে।বাঙালি কোচ এবং মোহনবাগানের দায়িত্ব পেয়ে সফল হওয়া,তার কোচিং জীবনের সবচাইতে বড় পাওনা।সদ্য অনুর্ধ্ব-১৯ সাফ গেমস জয়ী ভারতীয় দলের গোলকিপার কোচ তিনি ছিলেন। প্রথমবার অনুষ্ঠিত ‘সুপার লিগ কেরল’ চ্যাম্পিয়ন দলের গোলকিপার কোচের দায়িত্বেও তিনি ছিলেন। আইএসএলের নর্থইস্ট দলের গোলকিপার কোচের দায়িত্ব পালনে তার সর্বভারতীয় ফুটবল আঙ্গিনার বৃত্ত নিশ্চয়ই সম্পন্ন হয়েছে।
দীপঙ্করের সাঙ্গে কথা বলতেই তার একরাশ অভিমান চোখে পড়ল। আইলিগ জয়ী মোহনবাগান দলের গোলকিপার কোচ হয়েও পরবর্তী সময়ে বাংলার কোনও ক্লাব দলের কোচিং করানোর ডাক তার আসেনি। সদ্য সাফ গেমস জয়ী ভারতীয় দলের গোলকিপার কোচকে এখন পর্যন্ত ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএর পক্ষে নূন্যতম সৌজন্যমূলক অভিনন্দন জানানো হয়েছে বলে জানা যায়নি।
উত্তর ২৪পরগনার নৈহাটিতে বেড়ে ওঠা দীপঙ্কর চৌধুরীর ফুটবলার জীবনের অধিকাংশ সময় রাজ্যের বাইরেই কেটেছে। ফুটবলকে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কোচিং জীবনেও তাকে অধিকাংশ সময় বাইরেই কাটাতে হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে দীপঙ্কর চৌধুরী জানালেন, ‘পেশাদারিত্বের যুগে আবেগের স্থান নেই। তবে ঘরের মাঠে নিজের কাজের স্বীকৃতি পেতে কার না ভালো লাগে? নিদেনপক্ষে একটা ফোনের শুভেচ্ছা বার্তা যথেষ্ট।এছাড়া বাংলার প্রতি আলাদা টান থেকেই যায়। বিশেষ করে, যেখানে বাংলায় ঐতিহ্যশালী তিন বড়ক্লাব সর্বভারতীয় লিগের সবোর্চ্চ পর্যায়ে খেলে থাকে।’
সন্তোষ ট্রফি বাংলা দলকে সরকার সংবর্ধনা দিয়েছে।সদ্য সাফ গেমস জয়ী ভারতীয় দলের কোচ ও খেলোয়াড়দের তাদের নিজ নিজ রাজ্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থা সংবর্ধনা দিচ্ছে। ভারতীয় দলের বাঙালি কোচ নিজের রাজ্যের কাছে অবহেলিত হলেন।
ভারতীয় দলের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বাঙালি ফুটবলারদের সুযোগ না পাওয়া তাকে যথেষ্ট কষ্ট দেয়। তবে,অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বললেন, ‘বাংলায় প্রতিভাবান ফুটবলারদের অভাব নেই। দলগুলোর ফুটবলার বাছাই ঠিক মতো হয় না। ফলে,গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্কাউটিংয়ের মাপকাঠির নিরিখেই বাংলার ফুটবলারদের বাদ পড়তে হচ্ছে। আমাদের সাফ গেমসে জয়ী দলের গোলকিপার সুরজ সিং, এলিট ইয়ুথ লিগে ক্লাসিক্যাল ফুটবল একাডেমির হয়ে খেলেই ভারতীয় দলের জন্য নির্বাচিত হয়। সাফ গেমসের সেরা গোলকিপার হয়ে,সুরজ সিং অনূর্ধ্ব-২৩ ভারতীয় দলেও ডাক পেয়েছেন।অর্থাৎ ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার বিভিন্ন প্রক্রিয়াতেই বাঙালি ফুটবলাররা পিছিয়ে পড়ছে।তাই, সর্বভারতীয় স্তরে যে ক্লাবগুলো অংশগ্রহণ করে,তাদের দলগঠনে সর্তক থাকা উচিত।’
আগামী ১লা জুন থেকে কলকাতায় অনূর্ধ্ব-২৩ ভারতীয় দলের প্রস্তুতি শুরু হবে।অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপের প্রস্তুতিতে ভারতীয় দল দুটো ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলবে।গোলকিপার কোচ হিসেবে দীপঙ্কর চৌধুরী কলকাতার শিবিরে যোগদান করবেন। সাফ গেমস জয়ী বাঙালি গোলকিপার কোচ এই শিবিরে কাজ করার জন্য মুখিয়ে আছেন। ‘দেশের প্রতিভাবান ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করা সবসময় চ্যালেঞ্জিং।সাফ গেমসে সুরজের পারফরম্যান্স দারুন প্রসংশিত হয়েছে।অনূর্ধ্ব-২৩এর এই ক্যাম্পেও বেশ ভালো ভালো ছেলে আছে।এদের সেরা পারফরম্যান্সে ভারতীয় দলকে সমৃদ্ধ করবে।’