লাল হলুদে ভিন রাজ্যের ফুটবলারদের মান নিয়ে প্রশ্ন

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রনজিৎ দাস

নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘের পর কলকাতা কাস্টমস ক্লাবের কাছেও ইস্টবেঙ্গল আটকে গেল। প্রথম ম্যাচে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব ৭-১ গোলে মেসারার্স ক্লাবকে হারানোর পর টানা দুটো ম্যাচে জয়ের মুখ দেখতে পারলো না।

ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রথম পর্বে কলকাতা কাস্টমস ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে জয় তুলে নিতে পারলো না। এক্ষেত্রে কাস্টমস ক্লাবের ফুটবলারদের অনভিজ্ঞতাকে উল্লেখ করা হলো। ম্যাচের শেষে কাস্টমস ক্লাবের কোচ বিশ্বজিৎ ভট্রাচার্য ভূমিপুত্র ফুটবলারদের উপর ক্লাবকর্তাদের নজর দেওয়ার কথা বললেন। অপরদিকে ম্যাচ ড্র হওয়ার পরে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে তাদের কোচ বিনো জর্জ ক্ষমা চেয়ে নিলেন।


এবারের কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের শুরুতেই ভূমিপুত্রদের খেলানো নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। একপ্রকার বাধ্য হয়েই আইএফএ প্রত্যেক দলের ক্ষেত্রে প্রতি ম্যাচে সর্বক্ষণ ৬ জন বাঙালি ফুটবলার খেলানো বাধ্যতামূলক করেন। প্রসঙ্গত বলা যায় বাংলার তিন বড়দল ও ভারতীয় দলে বাঙালি ফুটবলারের সংখ্যা আতসকাঁচ দিয়ে দেখতে হয়। আইএফএ প্রিমিয়র লিগে প্রত্যেক দলের স্কোয়াডে ১৫ জন ভূমিপুত্র ফুটবলারের নাম নথিভুক্ত করাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে কেন ম্যাচের ক্ষেত্রে প্রতি দলে ভূমিপুত্র ফুটবলারদের কোটা সিস্টেম করতে হবে, এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এই কোটা সিস্টেমে খেলার মান কমে যাওয়ার আশাঙ্খা করা হয়। ভারতীয় ফুটবলার তুলে আনার প্রয়োজনে লোকাল লিগে বিদেশী ফুটবলার খেলানোর নিয়ম নেই। এরপর ভিন্নরাজ্যের ফুটবলার খেলানোর ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ করলে লিগে প্রতিযোগিতার মান হ্রাস পাওয়ার প্রসঙ্গ উঠে আসে। শেষ পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগের প্রতি ম্যাচে, প্রত্যেক দলের প্রথমে ৫ জন ভূমিপুত্র ফুটবলার খেলানো বাধ্যতামূলক করা হলেও, রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রীর অনুরোধে পরবর্তী ক্ষেত্রে আইএফএ সংখ্যাটা ৬ জন করেন। তাহলে ভাবতে অবাক হয় ভূমিপুত্ররা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে।

প্রিমিয়র লিগের শুরুতেই যেহেতু ভূমিপুত্রদের খেলানো নিয়ে ময়দান সরগরম ছিল, তাই প্রত্যেক ম্যাচ শেষেই ভূমিপুত্র ও ভিন্নরাজ্যের ফুটবলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল ও কাস্টমস ম্যাচ ড্র হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই ভূমিপুত্রদের বেশি করে দলে রাখার প্রসঙ্গ উঠেছে। কোচ বিশ্বজিৎ ভট্রাচার্যের কাস্টমস দল তাদের প্রথম একাদশে ৯ জন ভূমিপুত্রদের নিয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে লড়াই করে। পক্ষান্তরে নিয়মানুযায়ী ৬ জন ভূমিপুত্রদের দলে রেখে কাস্টমস দল খেলতে নেমেছিল। ৫ জন পরিবর্তিত ফুটবলারের সংখ্যা ধরলে প্রতি ম্যাচে একটা দল ১৬ জন ফুটবলার ব্যবহার করতে পারে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কোচ বিনো জর্জ তার ১৬ জন ফুটবলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ৭ জন বাঙালি ফুটবলার ও ৯ জন ভিন্নরাজ্যের ফুটবলার ব্যবহার করেন। পক্ষান্তরে কাষ্টমস ক্লাবের কোচ বিশ্বজিৎ ভট্রাচার্য তাদের দলে ১৬ জন ফুটবলার ব্যবহারের ক্ষেত্রে ১৩ জন বাংলার ফুটবলার ও ৩ জন মাত্র ভিন্নরাজ্যের ফুটবলার ব্যবহার করেন। অর্থাৎ কাষ্টমস কোচ যেখানে ম্যাচের নির্ধারিত সময়ে ১৩ জন বাঙালি ফুটবলার ব্যবহার করলেন, সেখানে কাস্টমসকাস্টমস কোচ মাত্র ৭ জন বাংলার ফুটবলার ব্যবহার করলেন। ইস্টবেঙ্গল কোচ যে ৯ জন ভিন্নরাজ্যের ফুটবলার ব্যবহার করলেন তার মধ্যে ৭ জনই কেরল রাজ্যের ফুটবলার।

নিশ্চয়ই সবার জানা আছে ইস্টবেঙ্গল কোচ নিজেও কেরলের বাসিন্দা। এবং কৌশলে একটা ম্যাচে ৭ জন বাঙালি ফুটবলারের পাশাপাশি ৭ জন কেরলের ফুটবলার ব্যবহার করলেন। সেক্ষেত্রে বাংলার ফুটবলার বেশি সংখ্যায় খেলানোর দাবি অন্যায্য নয়। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাদের দলে এবারের সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে খেলা একাধিক কেরল ও বাংলার ফুটবলার খেলালেন। সেখানে কাষ্টমস ক্লাবের হয়ে এবারের সন্তোষ ট্রফি বাংলা বা ভিন্নরাজ্যের কোনও ফুটবলার ম্যাচে ছিলেন না। ইস্টবেঙ্গল দলে একাধিক ফুটবলার গত তিনবছর ধরে দলের প্রথম একাদশে নিয়মিত খেলছেন। কিন্ত কাস্টমস দলে মাত্র ২জন ফুটবলার গত মরশুমেও তাদের দলে ছিলেন। অর্থাৎ ইস্টবেঙ্গল ক্লাব অভিজ্ঞতায় কাস্টমস ক্লাবের চাইতে অনেক এগিয়ে। কিন্ত অভিজ্ঞ ফুটবলারদের নিয়েও বিনো জর্জ ম্যাচ বার করতে পারলেন না। খেলায় যেকোন একটা ম্যাচে অঘটন ঘটাতে পারে। কিন্ত ইস্টবেঙ্গল ক্লাব পরপর দুটো ম্যাচেই জয় পেলো না। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এই পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে প্রশ্ন উঠেছে, তবে ভিন্নরাজ্যের ফুটবলারদের উপর নির্ভরশীল হতে গিয়ে ভূমিপুত্রদের বঞ্চিত করা হচ্ছে কেন এই উত্তরটা কে দেবেন? কোচ না কর্মকর্তারা মুখ খুলবেন!