আইপিএল ক্রিকেটে খেতাব জয়ী বেঙ্গালুরু দলকে নিয়ে বিজয় উৎসবে সামিল হওয়ার কথা ছিল, সেই বিজয় উৎসব কান্নায় ভেসে গেল। রাজপথে পড়ল রক্তের দাগ। চারদিকে কান্নার শব্দ। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় ভিতরে প্রবেশ করার জন্য। সফল ক্রিকেটারদের সঙ্গে একেবারে কাছ থেকে দেখার চেষ্টায় কে আগে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করবে, তা নিয়ে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। সেই সময় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য ছুটে আসে পুলিশ। লাঠিচার্জ শুরু হতেই দর্শকরা ভয়ে এদিক-ওদিক ছুটতে গিয়ে অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। পদপিষ্টে বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। আহত হন প্রচুর। আহতদের শিবাজী নগরের বাউরিং হাসপাতাল ও লেডি কার্জন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁদের দেখার জন্য কর্নাটক সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারা হাসপাতালে হাজির হন। বর্তমান কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া আহতদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন। হাসপাতালে উপস্থিত হন কর্নাটকের বিজেপি সভাপতি বিউ বিজেয়ন্দ্র। তিনি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য কংগ্রেস সরকারকেই নিশানা করেছেন। তিনি বলেন, ১১ জন ক্রিকেটপ্রেমী প্রাণ হারিয়েছেন। এর জন্য সরকারই দায়ী। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এই ঘটনাকে জুডিশিয়াল তদন্তে পাঠানো উচিত। গোটা দেশ এবং কর্নাটক যখন বেঙ্গালুরু দলের জয়ের উল্লাসে মাতছে, তখন ঠিকভাবে সরকারপক্ষকে এই বিজয় উৎসব পরিকল্পনা নিয়ে সংগঠিত করা উচিত ছিল। তাহলে এই দুর্ভোগ তৈরি হত না। মানুষের কথা না ভেবে নিজেদের প্রচারে সবাই ব্যস্ত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনা যখন ঘটেছে, তখন সেই মুহূর্তে কোনও পুলিশের দেখা পাওয়া যায়নি। ছিল না কোনও অ্যাম্বুলেন্স। কর্নাটক সরকারের বিরোধী দলনেতা চালাবাদি নারায়ণস্বামীর কথায় একই সুর শোনা গিয়েছে। স্পষ্টভাবে কেউই ধারণা দিতে পারছেন না, ঠিক কতজন এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহতদের জন্য কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে কর্নাটকের উপমুখ্যমন্ত্রী ডিকে শিবকুমার বলেন, শুরুতেই হাসপাতালে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তার প্রধান কারণ চিকিৎসায় ডাক্তারদের কোনও কাজ যাতে ব্যাহত না হয়, তার জন্য।পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে বিজয় উৎসবের সময় কমিয়ে দেওয়া হয়। লক্ষাধিক মানুষের ভিড় হয়েছিল। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা যায়, তার চেষ্টা করা হয়েছে। আসলে কোহলিদের একঝলক দেখার জন্য প্রচুর মেয়েরাও ভিড় করেছিলেন। তাঁরাও গেট ঠেলে মাঠে ঢোকার চেষ্টা করেছিলেন। কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার পক্ষ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাঁদের কাছে বৈধ টিকিট আছে, তাঁরাই স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে পারবেন। কিন্তু এত মানুষের ভিড় হওয়ার ফলে কেউই নিষেধ মানতে চাননি।
এদিকে জানা গিয়েছে, পদপিষ্টের ঘটনার পরেও চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে কোহলিদের ট্রফির জয়ের অনুষ্ঠান চালু রাখা হয়েছিল কেন, তার ব্যাখ্যা চেয়েছে বিসিসিআই। এই দুর্ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে রাজনীতির মধ্যে প্রবেশ করতে চাইছে না বিসিসিআই ও আইসিসি কর্তৃপক্ষ। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর সার দেশে ছড়িয়ে পড়ার পরেও কেন অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হল না, এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। আইপিএল চেয়ারম্যান অরুণ ধুমল বলেছেন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আরসিবি কর্তৃপক্ষ বাইরের ঘটনা নিয়ে কোনও কিছুই জানতেন না। যখনই খবর পেয়েছেন, তখনই বিজয় উৎসব বন্ধ করে দেওয়ার অনুরোধ করে দেওয়া হয়। বিসিসিআইয়ের সহসভাপতি রাজীব শুক্ল বলেছেন, অত্যন্ত মর্মান্তিক ব্যাপার। আমরা কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। কর্নাটক ক্রিকেট সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। বোর্ডের সচিব দেবজিৎ সাইকিয়া বলেছন, অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আরসিবি-র আইপিএল জয়ের উৎসব ভালোভাবে করা উচিত ছিল। এই ঘটনার সঙ্গে বিসিসিআইয়ের কোনও যোগ নেই। তবে আগামী দিনে এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। এদিনের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য কর্নাটক টেস্ট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগে যে এসে লাইন দেবেন, তাঁদের জন্য পাসের ব্যবস্থা থাকছে। এদিন সকাল থেকেই স্টেডিয়ামের সামনে প্রচুর মানুষের ভিড় দেখতে পাওয়া গিয়েছে। আবার কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, মৃতদেহের উপরে বসে কেন এই বিজয় উৎসব করা হলো? এই বিজয় উৎসব অবশ্যই বন্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কর্ণাটকের চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে আইপিএল জয়ী বেঙ্গালুরু দলের বিজয়োৎসবকে কেন্দ্র করে পদপৃষ্টে ১১ জন ক্রিকেট ভক্ত প্রাণ হারানোয় শোকজ্ঞাপন করেছেন। আহতদের তিনি দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।