ডায়মন্ডকে চূর্ণবিচূর্ণ করে আবার ডুরান্ড খেতাব তুলে নিল নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রত্যাশার ফানুস উড়িয়ে বৃষ্টি মাথায় হাজার হাজার সমর্থক ছুটে এসেছিলেন যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে শনিবারের বারবেলায়। তাঁরা অপেক্ষা করেছিলেন, ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের খেতাব জয়ের আশায়। কিন্তু ডুরান্ড কাপ ফুটবল ফাইনালে ডায়মন্ড হারবারের প্রতিদ্বন্দ্বী উত্তর ভারতের সেরা দল নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের সঙ্গে দুরন্ত লড়াই করবে। সব আশা ছত্রখান হয়ে গেল নর্থ-ইস্টের দাপটে। নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ৬-১ গোলে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের জ্যোতিকে ম্লান করে দিয়ে ডুরান্ড কাপ জিতে নিল। দলের মালিক বলিউড তারকা জন আব্রাহাম হাত নেড়ে বারবার নর্থ-ইস্টের খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করছিলেন। আর রিজার্ভ বেঞ্চে বসে ডায়মন্ডের কোচ কিবু ভিকুনা তরুণ ব্রিগেডকে বারবার অঙ্ক কষে খেলার জন্য হুঙ্কার দিচ্ছিলেন। কিন্তু পাল্টা আক্রমণে নর্থ-ইস্টের খেলোয়াড়রা তছনছ করে দিয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের রক্ষণভাগকে।

অনেকেই ভেবেছিলেন, হীরকজ্যোতি আছড়ে পড়বে ফুটবল মাঠে। কিন্তু তার কোনও জ্যোতি চোখে পড়ল না। বরঞ্চ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠলেন নর্থ-ইস্টের ফুটবলাররা। এককথায় বলা যায় খেলার প্রথমার্ধে নিজের আয়ত্তে খেলা নিয়ে বিরতির আগেই ২ গোলে এগিয়ে গেল তারা। নর্থ-ইস্টের সবচেয়ে বড় ভরসা আলাদিন যেভাবে আক্রমণে গতি বাড়িয়ে ডায়মন্ড হারবারের দুর্গে বারবার হানা দিচ্ছিলেন, তাতেই বোঝা গিয়েছিল জবি জাস্টিন, স্যামুয়েল ও কার্তোজারা একেবারে ছন্নছাড়া। কোনও সময়ের জন্য প্রতিপক্ষ নর্থ-ইস্টের রক্ষণভাগে ফাটল ধরাতে পারেননি ডায়মন্ড হারবারের ফুটবলাররা। নর্থ-ইস্টের সংঘবদ্ধ আক্রমণে কোনও ঠিকানাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না কোচ কিবু ভিকুনার ফুটবলাররা।

খেলার প্রথমার্ধে নর্থ-ইস্টের ফুটবলাররা আধিপত্য বিস্তার করে পরপর দু’টি গোল করেন। প্রথম গোলটি করেন আশির আখতার। খেলা তখন গড়িয়েছে ৩০ মিনিট। পার্থিব বলটি টেনে নিয়ে প্রথমে আজারাইকে ঠেলে দিয়েছিলেন। বাঁ পায়ে তিনি শট নিলে ডায়মন্ডের মিরশাদ রুখে দিয়েছিলেন। ফিরতি বলে আশির গোল করে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডকে এগিয়ে দেন। এগিয়ে থাকা নর্থ-ইস্টের ফুটবলাররা যেভাবে আক্রমণে গতি বাড়িয়েছিলেন, সেখানে ডায়মন্ড হারবারের ফুটবলাররা কিছুতেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি। প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় নর্থ-ইস্ট দল। দলের হয়ে প্রথমপর্বে শেষ মুহূর্তে দ্বিতীয় গোলটি করেন পার্থিব গগৈ।


দ্বিতীয় পর্বের খেলা শুরু হতেই নর্থ-ইস্ট দলের ফুটবলাররা ঝোড়ো আক্রমণ শুরু করে দেন। আলাদিন একের পর এক সেন্টার করতে থাকেন সতীর্থ খেলোয়াড়দের। ৫০ মিনিটের মাথায় নর্থ-ইস্টের তৃতীয় গোলটি করেন থই সিং। স্বাভাবিকভাবেই তিন গোলে এগিয়ে থাকা নর্থ-ইস্টের ফুটবলাররা কিছুটা হালকা চালে খেলার চেষ্টা করতে থাকেন। তারই মধ্যে আলাদিন একটা বল নিজের দখলে রেখে বক্সের মধ্যে প্রবেশ করলেও গোলে রাখতে পারেননি। ৬৮ মিনিটে ডায়মন্ড হারবারের স্যামুয়েল ও গিরিক নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া নেওয়া করে নর্থ-ইস্টের বক্সের মধ্যে প্রবেশ করেন। এগিয়ে এসে জাবাকো বলটি মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন। ডায়মন্ড হারবার কর্নার পায়। জবি জাস্টিন কর্নার থেকে বল তুলে দেন বক্সের মধ্যে জটলার মধ্যে থেকে মায়াচেনের মুখে বল লেগে গোলের জালে জড়িয়ে যায় (১-৩)। গোলের ব্যবধান কমাতে ডায়মন্ড হারবারের ফুটবলাররা নতুন ছকে খেলার চেষ্টা করতে থাকেন।

নর্থ-ইস্টের সেরা ফুটবলার আলাদিনের পায়ের জাদুতে প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলাররা দাঁড়াতেই পারছিলেন না। তাঁরা ভেবে পাচ্ছিলেন না, কীভাবে সামাল দেবেন নর্থ-ইস্টের আক্রমণকে। রক্ষণভাগ বলতে যা বোঝায় তা একেবারে এলোমেলো হয়ে যায়। সেই সুযোগে ৮১ মিনিটের মাথায় নর্থ-ইস্টের নতুন ফুটবলার জাইরো বুস্তারা গোল (৪-১) করেন। সেন্টার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবারও আক্রমণে উঠে আসেন উত্তর ভারতের ফুটবলাররা। আলাদিন যেভাবে আক্রমণ গড়ে তুলছিলেন, তা সামাল দেওয়ার মতো কোনও ফুটবলার ডায়মন্ড হারবার দলে ছিল না। আলাদিন একেবারে সাজিয়ে বল তুলে দেন বক্সের মধ্যে গাইতানকে। ডায়মন্ড হারবারের গোলরক্ষক মিরশাদ সামনে এগিয়ে এলেও তাঁর কোনও কিছু করার ছিল না।

বলতে দ্বিধা নেই, ফাঁকা গোলে বল (৫-১) রাখলেন গাইতান। ডায়মন্ড হারবারের এই অবস্থা হবে তা কেউই ভাবতে পারেননি। খেলা থেকে ডায়মন্ড হারবারের দূরত্ব বাড়তেই থাকে। খেলার ৯০ মিনিটের মাথায় নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড পেনাল্টি পায়। আলাদিনের দুরন্ত ভূমিকার কাছে বার বার হার মানতে থাকে ডায়মন্ড হারবারের ফুটবলাররা। বক্সের মধ্যে থেকে জোরালো শট নেন আলাদিন। সেই শটটি পোস্টে আঘাত করলে, ফিরতি বলে গোল করার চেষ্টার সময় পিছন থেকে আলাদিনকে ফাউল করেন। রেফারি সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির নির্দেশ দেন। বলটি সাজিয়ে নিজেই আলাদিন পেনাল্টি থেকে (৬-১) গোল করে নর্থ-ইস্টে ইউনাইটেডকে খেতাব তুলে দেন। এই নিয়ে পরপর দু’বার নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ডুরান্ড কাপ জয় করে নতুন অধ্যায় রচনা করল। তারা বুঝিয়ে দিল ভারতীয় ফুটবলে তারা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সেরা দলের স্বীকৃতিটা তুলে নিতে জানেন।