তিন বছর বাদে কলকাতায় আইএফএ শিল্ড ফুটবল অনুষ্ঠিত হল। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই গেল শিল্ডের যে গরিমা তা কি দেখতে পাওয়া গিয়েছে। অনেকেই হয়তো আইএফএ সচিবের পারিষদরা গদগদ করে বলবেন, শিল্ডের খেলা তো হল! তাঁরা কি জোর গলায় বলতে পারবেন এই শিল্ড খেলার মধ্যে দিয়ে কী খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। আইএসএল ফুটবলে খেলা বাংলার দুই প্রধান মোহনবাগান সুপার জায়ান্টস ও ইস্টবেঙ্গল ছাড়া কোনও দলকে তো পাওয়া গেল না। আর আইলিগে খেলা যে দল তিনটি খেলতে এল, তাদের অবস্থান সম্পর্কে আইএফএ কর্মকর্তাদের কি ধারণা ছিল? যে তিনটি দল এসেছিল, তার মধ্যে শুধু গোকুলাম কেরল ছাড়া অন্য দু’টি দল সুপার কাপ খেলার যোগ্যত্য অর্জন করেনি। আর এই দলটা সুপার কাপে অংশ নেওয়ার আগে কলকাতায় এসে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে গেল।
পাশাপাশি বলতে হয় শ্রীনিধি ও নামধারি দল দু’টির থেকে কলকাতা লিগে খেলা দলগুলি অনেক বেশি এগিয়ে রয়েছে। আবার বলতে হয়, ছ’টি দলকে নিয়ে দুই গ্রুপে খেলিয়ে মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলের ডার্বি ম্যাচ করা হল। হয়তো সচিব সহ অন্যান্য কর্মকর্তারা ভাবলেন এই ডার্বি ম্যাচে প্রচুর দর্শক মাঠে আসবেন। ভাবনা ভাবনাই থাকল।
আইএফএ শিল্ডের খেলা দেখার জন্য দক্ষিণ ও উত্তর কলকাতায় ট্যাবলো বের করে প্রাক্তন খেলোয়াড়দের দিয়ে সবার কাছে অনুরোধ করা হল মাঠে আসতে। কিন্তু খেলার দিন খুব জোর ৩০ হাজার দর্শক মাঠে এসেছিলেন। তাহলে কি বলতেই হয়, ফুটবলের প্রতি আসক্তি কমে আসছে দর্শকদের। এদিকে বলা হল, ডার্বি ম্যাচের টিকিট বিক্রি থেকে যে অর্থ আসবে, তা উত্তরবঙ্গের দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। কিন্তু ঢাকঢোল পিটিয়ে যখন শিল্ডের খেলা দেখার জন্য প্রচার করার জন্য যে অর্থ ব্যয় করা হল, তা যদি ওই দুর্গত মানুষের জন্য বরাদ্দ করা হত, তাহলে অবশ্যই মানবিক দিকটা প্রকাশ পেত।
শিল্ডের ডার্বি ম্যাচের জন্য ক্লাবগুলির বরাদ্দ হিসেবে যে টিকিট ধার্য করা হয়েছিল, তা সময়মতো পৌঁছায়নি। এমনকি, নির্দিষ্ট টিকিট নিতে আসেননি দুই সহসভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস ও সৌরভ পাল। মাঠেও যাননি দুই সহসভাপতি। কিন্তু কেন, এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি তাঁদের কাছ থেকে।
তবে জানতে পারা গেছে, খেলার একদিন আগের রাতে তাঁদের কাছে ফোন গিয়েছিল, বরাদ্দ টিকিট আইএফএ অফিসে রয়েছে, তা নিয়ে যেতে। এমনকি দুই প্রাক্তন সচিব উৎপল গাঙ্গুলি ও জয়দীপ মুখার্জির কাছে কোনও টিকিট পৌঁছায়নি। অবশ্যই সম্মান জানিয়ে তাঁদের কাছে টিকিট পৌঁছে দেওয়া উচিত ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। এমনকি তাঁদের সঙ্গে ফোনেও যোগাযোগ করা হয়নি। অবশ্য আগে সব প্রাক্তন সচিবদের কাছে নিজে গিয়ে টিকিট পৌঁছে দিতেন কার্যরত সচিবরা।
এদিকে নতুন সচিব পদে আসার পরেই অনির্বাণ দত্ত বাংলাদেশে গিয়েছিলেন আইএফএ শিল্ডের খেলা আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য। সেখানকার দু’টি দলকে এই প্রতিযোগিতায় খেলানো যায় কিনা। চ্যাম্পিয়ন দলকে ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এই অঙ্কটা অনেক স্থানীয় এলাকার টুর্নামেন্টে দেওয়া হয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তিন বছর আগেও এই অর্থমূল্যই দেওয়া হয়েছিল শিল্ডের চ্যাম্পিয়ন দলকে।
কিন্তু মনে রাখতে হবে, সেই সময় সারা ভারতবর্ষ জুড়ে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে ছিল, তখন শিল্ডের খেলা করা কঠিন ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। বর্তমানে এই আর্থিক পুরস্কার আরও বেশি অঙ্কের হওয়া উচিত ছিল।