চেন্নাইকে টপকে শীর্ষে মুম্বই, কিং খানের ডেরায় বিদায় কলকাতা নাইট রাইডার্সের

কেকেআর-এর উইকেটের পতনের পর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স-দের উচ্ছাস (Photo: IANS)

‘নিজের পায়ে নিজেই কড়ল মারা’, এই প্রবাদ বাক্যটার সঙ্গে আমার ওতপ্রােতভাবে জড়িয়ে। এটা আলাদা করে কাউকে বলে দিতে হবে না। আর সেই চিত্রটাই দেখা গেল রবিবার দ্বাদশতম আইপিএলের রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে।

শনিবার আরসিবির কাছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ হেরে যাওয়ায় প্লে-অফে যাওয়ায় অনেকটাই পথ খুলে গিয়েছিল নাইটদের কাছে। সেখানে শেষ ম্যাচে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে হারালেই প্লে-অফ নিশ্চিত ছিল। এই জায়গায় রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে খেলতে নেমে নাইটদের চুড়ান্ত ব্যাটিং বিপর্যয়, আর টিম ম্যানেজমেন্টের ভুল সিদ্ধান্তের রােষে পড়ে কিং খানের দল এবারের মতন প্রতিযােগিতা থেকে পঞ্চমস্থানে খেলা শেষ করে বিদায় নিল।

টসে হেরে প্রথম ব্যাট করতে নেমে নাইটরা কোনরকমে মুম্বই বােলারদের সামলে সাত উইকেটে ১৩৩ রান তােলে। জবাবে সহজ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে রােহিতরা এক উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ১৩৪। রাউন্ড রবিন লিগের শেষ ম্যাচে শুধু জয়টা নয়, সেইসঙ্গে ভালাে রানরেটের সুবাদে চেন্নাই সুপার কিংসকে পিছনে ফেলে মুম্বই দল দ্বাদশতম আইপিএলে প্রথম স্থানে খেলা শেষ করল। আর বল হাতে অসাধারণ বােলিং করে সকলের নজর কেড়ে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া।


যেখানে নাইটদের কাছে ম্যাচটা জিতলেই সহজেই কোয়ালিফায়ারে যাওয়ার রাস্তা খােলা ছিল, সেখানে নাইটরা না পারল ব্যাটিংয়ে না পারল বােলিংয়ে। আর ঘরের মাঠে রাউন্ড রবিন লিগের প্রথম খেলায় হারার প্রতিশােধটা ভালােভাবে নিয়ে নিল মুম্বই। আর আইপিএল ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে কখনােই নাইটরা ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে জয় তুলে নিতে পারেনি, এবং এবারেও সেই ফ্ল্যাশব্যাকটা দেখা গেল।

ঘরের মাঠে সহজ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে প্লে-অফে প্রথম হয়ে খেলতে নামার সুযােগটা ছিল মুম্বইয়ের কাছে। আর সেটা ভালােভাবে কাজে লাগাল রােহিতরা। ডি ককের ৩০, রােহিতের অপরাজিত ৫৫ ও সুৰ্য্যকুমারের অপরাজিত ৪৬ রানের উপর ভর করে মুম্বই তেইশ বল বাকি থাকতে এক উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ১৩৪।

টসে হেরে প্রথম ব্যাট করতে নেমে সেভাবে নজর কাড়তে পারল না শুভমান গিল। পর পর দুটি ম্যাচ ব্যাক টু ব্যাক অর্ধশতরান করে সকলের নজর কেড়েছিল নাইটদের তরুণ প্রতিভা। কিন্তু, এদিন ওয়াংখেড়ের পিচে কিছুটা থমকে গিয়েছিল গিলের ব্যাট। প্রথম ছয় ওভারে দুজনে মিলে উনপঞ্চাশ রান যােগ করে দিয়ে বেশ ভালাে কাজটা করে দিয়ে যায়। তবে, সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই হার্দিক পান্ডিয়ার পেস ও সুইংয়ের সংমিশ্রণ বুঝতে না পেরে গিল ষােলাে বলে নয় রান করে এলবিডব্ল আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান।

তবে সকলকে হতবাক করে আবারও বড় শট মারতে গিয়ে লিন ব্যক্তিগত একচল্লিশ রান করে হার্দিকের বলে প্যাভিলিয়ানে ফিরে যান। সাত রানের মধ্যে দু’টি উইকেট হারিয়ে ফেলে রীতিমতন চাপে মধ্যে পড়ে যায় নাইটরা। এই অবস্থায় নাইট অধিনায়ক দায়িত্ব নিয়ে নিজে ব্যাটিং করতে চলে আসেন। কিন্তু, ব্যাটিংয়ে নেমে কোনও কাজের কাজ করতে পারেননি কার্তিক। সেখান থেকে মালিঙ্গার বলে বড় শট মারতে গিয়ে স্লোয়ার বলে ক্যাচ দিয়ে বসেন নাইট অধিনায়ক। অবশ্য এই উইকেটকা মালিঙ্গার নয় এটা পুরােপুরি ক্রুণাল পান্ডিয়ার। একটা অসাধারণ ক্যাচ নিয়ে সকলে দেখিয়ে দেন তারা ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই মাঠে নেমেছে।

কার্তিকের পর ব্যাট করতে আসেন নাইটদের দলের ‘ওয়ানম্যান আর্মি’ হয়ে ওঠা আন্দ্রে রাসেল। কিন্তু গােটা মরশুমে রাসেলের ব্যাট চললেও, শেষ ম্যাচে চলল না। যেখানে তার ব্যাটে রান আসা অত্যন্ত প্রয়ােজনীয় ছিল। মালিঙ্গার করা হাল্কা বাউন্স বল ছাড়ব কি ছাড়ব না এই দ্বিধার মধ্যে পড়ে গিয়ে একেবারে শেষ সময়ে রাসেলের ব্যাটের কানায় বল লেগে সােজা ডি ককের হাতে ধরা পড়ে রাসেলের আউট হওয়ার পর গােটা মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের ক্রিকেটাররা যেমন খুশিতে মাতােহারা হয়ে পড়েন সেইসঙ্গে গােটা স্টেডিয়াম ও মুম্বইয়ের মালকিন নীতা আম্বানির চোখে মুখে খুশির ভাব।

তিয়াত্তর রানের মধ্যে চার উইকেট হারিয়ে ফেলার পর দলের হাল ধরেন নীতিশ রানা, চাপটা কমিয়ে কিছু বড় শট খেলতে থাকেন। কিন্তু রবিন উথাপ্পা অন্যদিকে দাড়িয়ে সেভাবে রান করতে না পেরে শুধুই বল নষ্ট করে যান। রানার দাপুটে ব্যাটিংয়ে নাইটরা ৯২ বলে একশাে রানের গন্ডি টপকাতে পারে। কিন্তু নাইট সমর্থকরা আশা করেছিলেন হয়তাে শেষদিকে রবিন উথাপ্পা হয়তাে হাত খুলে বড় শট নেবেন। টি-টোয়েন্টি খেলার টেস্ট ম্যাচের ব্যাটিং করার যে খেলাটা খেলে গেলেন উথাপ্পা তা সত্যিই লজ্জাজনক। সাতচল্লিশ বলে চল্লিশ রান করে শেষপর্যন্ত আউট হন। মরণবাচন ম্যাচে নাইটরা সাত উইকেট হারিয়ে ১৩৩ রান তোলে। নাইটদের পরাজয়ে উথাপ্পাকে নিয়ে যে প্রশ্ন উঠল তার জবাব দেবে কে?