কলকাতার অশান্তির পর হায়দরাবাদে কড়া নিরাপত্তায় মেসি

ছবি: এএনআই

কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে বিশৃঙ্খলার ঘটনার পর এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন ছবি ধরা পড়ল হায়দরাবাদে। কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে তেলেঙ্গানার রাজধানীতে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেন বিশ্বকাপজয়ী আর্জেন্টাইন ফুটবলের কিংবদন্তি লিয়োনেল মেসি। কলকাতা থেকে বিশেষ বিমানে হায়দরাবাদে পৌঁছনোর পর ঐতিহাসিক ফালাকনুমা প্যালেসে তাঁকে স্বাগত জানান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এ রেবন্ত রেড্ডি।

কলকাতার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে হায়দরাবাদ পুলিশ আগে থেকেই নিরাপত্তা বলয় আরও কঠোর করে। কোনওরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মেসির সঙ্গে ছবি তোলার অনুষ্ঠানে মাত্র ২৫০ জন অতিথিকে অনুমতি দেওয়া হয়। কিউআর কোডের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত প্রবেশ ব্যবস্থা চালু করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতিটি প্রবেশপথে একাধিক স্তরের নজরদারি ছিল এবং গোটা আয়োজনকে ‘ঝুঁকি শূন্য’ পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হয়।

প্রসঙ্গত, এ দিনই হায়দরাবাদে পৌঁছন লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি ও কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁকে স্বাগত জানান। মেসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পাশাপাশি উপ্পল স্টেডিয়ামে আয়োজিত প্রদর্শনী ম্যাচ দেখতেই রাহুলের এই সফর। ওই ম্যাচে মুখ্যমন্ত্রীর দল ও মেসির দলের মধ্যে প্রীতি লড়াই অনুষ্ঠিত হয়। স্টেডিয়ামে প্রায় পঞ্চাশ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ‘মেসি মেসি’ ধ্বনিতে মুখর হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায় দর্শকদের জন্য আয়োজন করা হয় আলো ঝলমলে লেজার শো-য়ের।


অনুষ্ঠানের দিন সকালে সমাজমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডি লেখেন, ‘রাজনীতি দূরে রেখে আজকের দিনের আবহ শুধুই খেলা। আমরা সবাই ফুটবলের মহান খেলাটার প্রেমিক এবং জিওএটি-র ভক্ত।’ তাঁর এই মন্তব্য ঘিরেই রাজনৈতিক বিতর্ক দানা বাঁধে।

বিরোধী ভারত রাষ্ট্র সমিতি এই আয়োজনকে ‘অপব্যয়’ বলে কটাক্ষ করেছে। দলের নেতারা মনে করিয়ে দেন, এই অনুষ্ঠানের অন্যতম স্পনসর ছিল আদানি গোষ্ঠী। বিআরএস নেতা টি হরিশ রাও আরও তীব্র ভাষায় মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন। তাঁর অভিযোগ, সরকারি স্কুলের দুইটিতে খাবারে বিষক্রিয়ার ঘটনায় প্রায় ষাট জন পড়ুয়া অসুস্থ হলেও কোনও মন্ত্রী তাঁদের দেখতে যাননি, অথচ মুখ্যমন্ত্রী ফুটবল খেলায় ব্যস্ত।

হরিশ রাও আরও বলেন, ‘রাজ্যের গুরুতর সমস্যার সময় মুখ্যমন্ত্রী ফুটবল কিট পরে অনুশীলনে ব্যস্ত ছিলেন।’ যদিও কংগ্রেসের পাল্টা বক্তব্য, এই আয়োজন হায়দরাবাদের আন্তর্জাতিক পরিচিতি আরও জোরদার করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে, শহরটি বিশ্বমানের ক্রীড়া তারকাদের নিরাপদে আতিথ্য দিতে সক্ষম।

উল্লেখ্য, কলকাতার অশান্তির রেশ কাটতে না কাটতেই হায়দরাবাদের সুশৃঙ্খল আয়োজন নজির সৃষ্টি করেছে। তুলনা টানা হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। একদিকে কড়া নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রিত প্রবেশ, অন্যদিকে রাজনৈতিক তরজা— সব মিলিয়ে মেসির সফর ঘিরে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন হায়দরাবাদ।