রনজিৎ দাস
গত ২রা মে শুক্রবার ভুবনেশ্বরে,২০২৪/২৫ ফুটবল মরশুমের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান হলো।পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বাংলার জয়জয়কার দেখা গেল।সর্বভারতীয় ক্লাব পর্যায়ে বাংলার দলগুলো সাফল্য অর্জন করতে পেরেছে।পাশাপাশি রাজ্য ভিত্তিক সর্বভারতীয় ফুটবলেও বাংলার সাফল্য এসেছে।এছাড়াও রাজ্য ফুটবল নিয়ামক সংস্হা এবার বিভিন্ন সর্বভারতীয় টুর্নামেন্ট সাফল্যের সাথে পরিচালনা করেছে।
বাংলার সাফল্য নিয়ে আইএফএর সভাপতি অজিত ব্যানার্জি জানালেন,”একসাথে এত বিভাগে দীর্ঘদিন বাদে সাফল্যের স্বীকৃতি পাওয়া গেল।এটা নির্দিষ্ট লক্ষ্যে সকলের পরিশ্রমের ফসল। এবং এই সাফল্য বলে দেয়, আইএফএ সঠিক পথেই এগোচ্ছে।ভালো কাজের নির্দশন কাগজে কলমে স্বীকৃতি পেল।তবে দুর্বল জায়গাগুলো আলোচনার মাধ্যমেই কঠোর সিদ্ধান্তে কাটিয়ে উঠতে হবে।”
বাংলার এত সাফল্যের মাঝে ভারতীয় দলে বাংলা থেকে একাধিক ফুটবলার সুযোগ পেলেও,বাঙালি ফুটবলার তেমন সুযোগ পাচ্ছেনা।
বেশ বিষ্ময়ের সাথে আইএফএর সভাপতি বললেন, “আমাদের অনূর্ধ্ব-১৭ বাংলা দল সর্বভারতীয় স্তরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।কেন বাংলার ফুটবলাররা অন্তত ভারতীয় সাফ দলের প্রস্তুতি শিবিরে ডাক পাবেনা?যারা স্কাউটিংয়ের দায়িত্বে আছেন, তাদের কাছে যথাসময়ে কৈফিয়ত চাওয়া হবে।বাঙালি ফুটবলারদের প্রতি কোথাও অবিচার করা হচ্ছে।এই তো সর্বভারতীয় অনূর্ধ্ব -১৭এলিট লিগে বাংলার দুই ক্লাব কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গেল।বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি ভারতের সবচাইতে নামী রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ইয়ং চ্যাম্পকে গতকাল পাঁচ গোলে হারিয়ে দিল।ধীরে ধীরে চূড়ান্ত সাফল্যের পথে এভাবেই এগিয়ে যাওয়া যাবে।”
জুনিয়র ফুটবলে বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমির সাফল্য নিশ্চয়ই প্রশংসনীয়।কিন্তু আইএফএর নিজস্ব ফুটবল অ্যাকাডেমি প্রসঙ্গে আইএফএর সভাপতি খোলসা করে এখনিই কিছু না বললেও ওনার সাথে কথায় যা বোঝা গেল। তাহল,উত্তরবঙ্গের ফুটবলের প্রতি বিশেষ নজর থাকছে।পলাশীতে আইএফএ বয়সভিত্তিক অ্যাকাডেমি চালু করতে চায়।এছাড়া নার্সারি লিগ থেকে কলকাতা লিগের বয়সভিত্তিক বিভাগকে নিয়ে আইএফএর চিন্তাভাবনা আছে।এই প্রসঙ্গে আইএফএর সভাপতি বললেন,”বাচ্চাদের লিগের নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হয়।মাঠ সমস্যা,প্লেয়ার রেজিস্ট্রেশনের পাশাপাশি বাচ্চাদের স্কুলের পরীক্ষা আছে।কিন্তু সর্বভারতীয় যোগ্যতার নিরিখে গ্রাসরুটে আমরা কোথায় এবং কিভাবে পিছিয়ে থাকছি–শীঘ্রই এ নিয়ে যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।”
সর্বভারতীয় বিভিন্ন টুর্নামেন্টে দায়িত্ব পেয়ে সাফল্যের সাথে পরিচালনা করা গেছে।এই প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা আইএফএ বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চায়।লোকাল প্রশাসনের সহযোগিতার কথাও বলতে হবে।সভাপতির অজিত ব্যানার্জির কথায়,’রাজ্য সরকার বাংলার ফুটবলের উন্নতির কথাই বলে থাকে।ছেলেদের ফুটবলের পাশাপাশি মেয়েদের ফুটবলের পরিকাঠামো বদলে গেছে।এখন মেয়ের প্রিমিয়ার লিগে দুটো গ্রুপ হয়েছে।দুই গ্রুপের মধ্যে ওঠানামা প্রথা চালু হয়েছে।চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার সময়ে ‘ফ্রী প্লেয়ার’ সিস্টেম চালু আছে।সেক্ষেত্রে এক ক্লাবের ফুটবলার অন্য ক্লাবে যোগদান করতে পারবে।কলকাতা মহিলা লিগ,অর্থাৎ কন্যাশ্রী কাপে ভালো ফলাফল করতে পারলে সর্বভারতীয় মহিলা লিগে খেলার সুযোগ আছে। মহিলা লিগের টিম পরিচালনায় নানা প্রতিকূলতা ক্লাব ও এ্যাসোসিয়েশন উভয়ক্ষেত্রেই আছে।তথাপি বাংলার মহিলা ফুটবল সাফল্যের সাথে এগিয়ে চলেছে।বাঙালি মহিলা কোচ সুজাতা কর দেশের সেরা কোচের সন্মান পেল।সময়ের সাথে মহিলা লিগের কম্পিটিশন আরও বাড়বে।”
ইষ্টবেঙ্গল ক্লাব এই মরশুমে সর্বভারতীয় মহিলা লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।ভারতীয় মহিলা ফুটবল দলের প্রস্তুতি শিবিরে ইষ্টবেঙ্গলের ১০জন ফুটবলার সুযোগ পেয়েছে। দেশের বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলার সৌমা গুগুলোথা ও বর্ষসেরা গোলকিপার পানথৌ চানু ইষ্টবেঙ্গল ক্লাব থেকে নির্বাচিত হয়েছে।প্রমিসিং মহিলা ফুটবলার হিসেবে শ্রীভূমি ক্লাবের রক্ষনভাগের ফুটবলার থৈবাসানা চানু পুরস্কার পায়।
আইএসএলের শিল্ড ও কাপে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মোহনবাগানের অধিনায়ক শুভাশীষ বোস বর্ষাসেরা পুরুষ ফুটবলারের পুরস্কার পায়।মোহনবাগানের গোলকিপার বিশাল কাইথ বর্ষসেরা গোলকিপার হিসেবে বিবেচিত হয়।
পুরুষ ও মহিলা ফুটবলে বাংলার ক্লাবগুলো সাফল্য পেয়েছে।রাজ্য ফুটবল নিয়ামক সংস্হা হিসেবে তার ক্লাবগুলোর এই সাফল্য বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষেত্রে গাত্রদাহ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আইএফএ বাংলার ক্লাবগুলোর সাফল্যে গর্ব অনুভব করে।বাংলার ক্লাবগুলোর সাফল্য প্রসঙ্গে আইএফএর সভাপতির অকপট স্বীকারোক্তিতে,”মোহনবাগান ও ইষ্টবেঙ্গলের মতন বড়দলগুলোর সাফল্যের পাশাপাশি ডায়মন্ড হারবার এফসি আইলিগের দ্ধিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে সাফল্য পেয়েছে।সন্তোষ ট্রফিতে বাংলা দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। অর্থাৎ বাংলার জুনিয়র ও সিনিয়র পুরুষ কিংবা মহিলা দলের উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে।আইএফএর অন্তগর্ত ক্লাবগুলো নিয়ে লিগের এত খেলার আয়োজনে কাজের পরিধি বেড়েছে।
অনেককেই এই কাজের সাথে যুক্ত করতে হচ্ছে।সীমিত আয়ের মধ্যে এমন ভিন্নতার কাজে স্বাভাবিক ভাবেই খরচ বেড়েছে।তাই,জটিলতা আছে কিংবা বির্তক আছে।কিন্তু এরপরেও সকলের মিলিত সাফল্যে বাংলার মুখ উজ্জ্বল হয়েছে।”