কল্যাণী স্টেডিয়াম এখন খেলাপ্রিয় মানুষের কাছে অন্য জায়গা করে নিয়েছে। এইতো কয়েকদিন আগে হয়ে গেল কলকাতা ফুটবল লিগের ডার্বি ম্যাচ। এই কল্যাণী স্টেডিয়ামের রূপকার প্রাক্তন পুরপ্রধান ও অধ্যাপক শান্তনু ঝা-র সঙ্গে কথা বললেন রণজিৎ দাস।
প্রশ্ন: কল্যাণী স্টেডিয়ামের ভাবনা কিভাবে শুরু হলো?
শান্তনু ঝা: কল্যাণী শহর জুড়েই অনেক মাঠ ছিল,যা অন্য শহরে পাওয়া অসম্ভব। এই মাঠগুলোকে খেলাধুলার কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা শুরু হয়।কল্যাণীতে সেসময় যেসব ক্রীড়া সংগঠন বা ক্লাব ছিল,তাদের খেলাধূলার কাজে উৎসাহ দেওয়া শুরু হয়।পাশাপাশি মাঠগুলোর রক্ষণাবেক্ষনে হাত দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে কল্যাণী শহরের খেলাধুলার চর্চা বাড়তে শুরু করে। সেই সময়ে শহরের ক্রীড়া সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত মানুষরা এই স্টেডিয়াম গড়ার জন্য আমাদের কাছে অনুরোধ করেন।
প্রশ্ন: ফুটবল স্টেডিয়াম গড়ে তোলার মত বৃহৎ পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নেওয়া একটা পৌরসভার পক্ষে সেসময় কতটা ঝুঁকি ছিল? কল্যানী পুরসভা কলকাতা শহর থেকে বেশ দূরে।
শান্তনু ঝা: কঠিন কাজ ছিল। তৎকালীন জেলাশাসক প্রয়াত অর্ণব রায়কে আমি এখনও স্মরন করি। আমাদের স্টেডিয়াম কমিটির সভাপতি হিসেবে ওনার উদ্যোগ ও সহযোগিতা ছাড়া একাজ হতো না। তাড়াতাড়ি এতোখানি এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতো না।ফিফার গাইডলাইন অনুযায়ী বিজ্ঞানসন্মত ভাবেই সে স্টেডিয়াম তৈরি হবে। কিন্ত চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট মাঠের ভাবনাকেও অস্বীকার করা হয়নি। পুরসভার পরিচালনায় ফুটবল, ক্রিকেট ও টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমি প্রথমে শুরু হয়। ফুটবলে চিন্ময় চট্র্যেপধ্যায় ও ক্রিকেটে রুসি জিজিবয় শুরু থেকেই দীর্ঘদিন অ্যাকাডেমির দায়িত্বে ছিলেন। কলকাতা ও জাতীয় স্তরে বহু খেলোয়াড় কল্যাণী স্টেডিয়াম অ্যাকাডেমি থেকে প্রতিনিধিত্ব করেছে।
প্রশ্ন: ফিফার গাইডলাইন অনুযায়ী কল্যাণী স্টেডিয়ামে সবরকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয়?
শান্তনু ঝা: না, এভাবে ছোট পরিসরে আন্তর্জাতিক মাঠ গড়ে তোলা সম্ভব ছিল না। কিন্তু ফিফার গাইডলাইন মেনে সংক্ষিপ্ত আকারে একটা স্টেডিয়াম গড়াই আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। আমরা প্রধানতঃ ফিফার নির্দেশিকা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মাপের আয়তাকারের মাঠ করেছি।মাঠ গড়তে মাটি নির্বাচনে ও প্রাকৃতিক ঘাসের গুণগত মানে কোনোপ্রকার আপস করা হয়নি। উন্নত পরিকাঠামোয় মাঠে আন্ডারগ্রাউন্ড জল নিকাশি ব্যবস্হা করা হয়েছিল। ১টা গ্যালারি, সুইমিংপুল ও জিম করা হয়েছিল। ড্রেসিং রুমের পাশাপাশি যথেষ্ট সংখ্যায় টয়লে, ওয়াশরুম, মেডিক্যাল সেন্টার, ডোপ টেস্ট রুম, টুর্নামেন্ট চলাকালীন খেলোয়াড়দের রাখার ব্যবস্থা (স্টেডিয়ামের মধ্যেই হোটেল ও পাশেই থাকা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্টহাউস ব্যবহারের জন্য চুক্তি ছিল) করা হয়েছিলো। স্তরে স্তরে স্টেডিয়ামকে ঘিরে একটা মাষ্টার প্লান ও ডিজাইন তৎকালীন আমাদের স্টেডিয়াম কমিটি নিয়েছিল। শুধু কল্যানী স্টেডিয়াম নয়, এই স্টেডিয়ামের খুব কাছেই আরো দুটো উন্নতমানের মাঠ সেসময় পুরসভা তৈরি হয়।
প্রশ্ন: কল্যাণী স্টেডিয়াম ও তার শহরকে ঘিরে লোকাল বা জাতীয় স্তরের টুর্নামেন্টের একাধিক খেলা একদিনে একইসাথে বিভিন্ন মাঠে আয়োজন করার ব্যবস্থা কি ছিল?
শান্তনু ঝা: প্রথমতঃ আমাদের হাতে টাকা কম ছিল। কিন্তু দক্ষ লোক ছিল। কি করতে হবে তার ভিশন তৈরি করে নিয়েছিলাম। কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা যাতে বাধা সৃষ্টি না করে, সেদিকে লক্ষ্য ছিল। কল্যাণীর উন্নতমানের মাঠ তৈরি করতে পারায়, নব নির্মিত স্টেডিয়াম পরিচিতি পেতে শুরু করে।।নদিয়ার গর্ব বেলে-দোআঁশ মাটিকে আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করেছিলাম।
দ্ধিতীয়তঃ কল্যাণী শহরে খেলাধুলোর চর্চা বাড়ানোর ভাবনা কাজ করেছে। কল্যানী পুরসভার প্রধান দায়িত্ব গুলো পালন করা ছিল জরুরি। কিন্ত শহর কল্যানীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে খেলাধুলোর বিকল্প ছিলনা।
প্রশ্ন: কল্যানী শহরের নানা সমস্যার সমাধান হয়ে উঠলো তার খেলাধুলো?
শান্তনু ঝা: অবশ্যই, খেলাধুলার প্রসারে অনেক সমস্যা সহজে সমাধান হয়েছে। তবে এককভাবে পুরসভা একাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারত না।
তখন স্টেডিয়ামের সব কাজ শেষ হয়নি। এছাড়া, সেসময় ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ডার্বিতে যে দর্শক মাঠে হাজির হতেন,তা কল্যাণী স্টেডিয়ামের গ্যালারির দর্শকসংখ্যার ধারণের সঙ্গে সামঞ্জস্য ছিল না। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান ক্লাবের মধ্যে ম্যাচ হয়েছে। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের ডার্বিও হল।
প্রশ্ন: ডার্বির পর মোহনবাগানের কোচ মাঠের খারাপ অবস্হা নিয়ে সমালোচনা করলেন।
শান্তনু ঝা: আমি এখন মাঠে যাইনা। ওরা আমায় ডাকেও না।তাই নিজের চোখে না দেখে মন্তব্য করা ঠিক নয়।
প্রশ্ন: মাঠ নিয়ে আপনার পরামর্শ?
শান্তনু ঝা: তিল তিল করে এই স্টেডিয়াম গড়ে উঠেছে। এই মাঠ পরিচর্যাকে রোজকারের রুটিনে আনতে হবে। আশু কোন কোন বিষয়ে নজর দিতে হবে। বিবেচনায় রাখতে হবে। মাঠ পরিচর্যার সরঞ্জামের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। নিবিড়ভাবে এবং অত্যন্ত সর্তকতার সঙ্গে মাঠে নজর দিতে হবে।