আজ থেকে শুরু ভারত ও ইংল্যান্ডের চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারতের তরুণ অধিনায়ক শুভমন গিলের কাছে চতুর্থ টেস্ট ম্যাচ শুধু মর্যাদার প্রশ্ন নয়, চ্যালেঞ্জ। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আজ, বুধবার খেলতে নামছে ভারতের তরুণ ব্রিগেড। ক্রিকেটারদের অফুরন্ত সংগ্রামী মনোভাব এবং জেদ ইংল্যান্ড শিবিরকে ধাক্কা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন কীভাবে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়ে আনা যায়। যতই বলুক ভারতীয় শিবিরে চোট-আঘাত একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে, তাতে বিচলিত নন তরুণ অধিনায়ক। নিজে ড্রেসিংরুমে অনুশীলন শেষে অনবরত কথা বলেছেন সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে। প্রত্যেককেই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এবারের লড়াইটা একেবারে মরণ-বাঁচন। এই ম্যাচটা জিততেই হবে। এবং শুধু তাই-ই নয়, এই ম্যাঞ্চেস্টার শহরে যতবারই খেলা হয়েছে, ততবারই ভারত জয়ের মুখ দেখতে পায়নি। সেই রেকর্ডটা শুভমনরা করতে চাইছেন।

১৯৩৬ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৯টি টেস্ট ম্যাচ হয়েছে। তার মধ্যে পাঁচটি ম্যাচ ড্র হলেও চারটি ম্যাচে হারতে হয়েছে ভারতকে। সেই বেদনা থেকে আরও জেদ বেড়ে গিয়েছে ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে। আবার ব্যক্তিগতভাবে সবচেয়ে বড় অঙ্কের রান করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক মহম্মদ আজহারউদ্দিন। তিনি ১৭৯ রান করেছিলেন। আর বোলার হসেবে নজর কেড়েছিলেন দিলীপ দোশী ১৯৮২ সালে। তখন ভারতের অধিনায়ক ছিলেন সুনীল গাভাসকার। দোশী ৬টি উইকেট পেয়েছিলেন ১০২ রানের বিনিময়ে। আর ভারত এই মাঠে সর্বোচ্চ রান করেছে ১৯৯০ সালে। স্কোরবোর্ডে ভারতের রান ছিল ৪৩২। আর এই মাঠেই সবচেয়ে কম রানে ভারতের ইনিংস শেষ হয়েছিল ১৯৫২ সালে। ভারতের রান ছিল মাত্র ৫৮। আর অধিনায়ক ছিলেন বিজয় হাজারে। স্বাভাবিকভাবেই এবারের চতুর্থ টেস্ট ম্যাচটি ভারতের কাছে অন্য মাত্রায় পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে। গত সোমবার পর্যন্ত ভারতের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থকে নিয়ে চিন্তা ছিল। তিনি কি মাঠে নামতে পারবেন? এই জিজ্ঞাসা সবার মুখে মুখে ঘুরছিল। তা থেকে স্বস্তি পাওয়া গিয়েছে এবং মাঠে নামবেন ঋষভ পন্থ।

অন্যদিকে অধিনায়ক শুভমন গিল জানিয়েছেন, আকাশদীপ চোটের কারণে ছিটকে গেছেন। সেই জায়গায় নতুন বোলার হিসেবে ভারতীয় দলে অভিষেক হতে চলেছে অংশুল কম্বোজের। কোচ গৌতম গম্ভীর অংশুলের উপরে ভরসা রাখছেন। অনেকেই ভেবেছিলেন, ভারতের নির্ভরযোগ্য বোলার যশপ্রীত বুমরাকে বিশ্রাম দেওয়া হবে। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্ট কোনওভাবেই বুমরাকে দলের বাইরে রাখতে চায়নি। তাই বুমরাকে অবশ্যই খেলতে দেখা যাবে চতুর্থ টেস্ট ম্যাচে। বুমরা এবং মহম্মদ সিরাজের পাশে ভাবা হতে পারে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে। সবকিছুই নির্ভর করছে এখানকার উইকেটের চরিত্র কেমন হবে তার উপরে। চূড়ান্ত একাদশ তাই উইকেট দেখে বুধবার সকালে ঘোষণা করা হবে ভারতীয় দলের।


বোলারদের পাশে অত্যন্ত সচেতন ভারতের ব্যাটসম্যানরাও। যশস্বী জয়সওয়াল থেকে শুরু করে অধিনায়ক শুভমন গিলকে দেখা গিয়েছে অনুশীলনে অত্যন্ত সিরিয়াস। লোকেশ রাহুল ও সাই সুদর্শনরাও বেশ কিছুক্ষণ অনুশীলন করলেন। সঙ্গে ঋষভ পন্থ ও লোকেশ রাহুল বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছেন নেটে। কঠিন সময়ে চ্যালেঞ্জার রবীন্দ্র জাদেজাকে খোলা মনে দেখতে পাওয়া গিয়েছে অনুশীলনে। স্বতস্ফুর্ত দেখতে পাওয়া গেল ঋষভ পন্থকেও। দেখে মনে হয়নি, খেলতে তাঁর সমস্যা তৈরি হচ্ছে। ঋষভ যে পুরোপুরি ফিট, তা বলতে দ্বিধা নেই। তবে ধরে নেওয়া যেতেই পারে, নীতীশ কুমার রেড্ডি প্রথম একাদশে জায়গা পাচ্ছেন না। সেই জায়গায় সাই সুদর্শন এসে যাবেন।

আর আকাশদীপের পরিবর্তে অংশুলকে রাখা হবে এমনই ভাবনা রয়েছে কোচের। অন্যদিকে ইংল্যান্ড দলও বেশ সতর্ক রয়েছে। বিশেষ করে অধিনায়ক বেন স্টোকস আত্মবিশ্বাস নিয়ে লড়াইয়ে নামবেন ভারতের বিরুদ্ধে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। তবে ভারতের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়তে হবে ইংল্যান্ডকে তা তিনি মেনে নিয়েছেন। বিশেষ করে বেন ডাকেট, ওলি পপ, জো রুট এবং হ্যারি ব্রুকরা বড় রানের অঙ্ক করতে চেষ্টা করবেন। প্রত্যেকের হাতেই ভালো রান আছে। এখন দেখার বিষয় ঘরের মাঠে তাঁরা কীভাবে লড়াই করতে পারে ভারতের বিরুদ্ধে। আবার ইংল্যান্ডের বোলার বলতে জো আর্চার আসাতে বাড়তি মনোবল ফিরে পেয়েছে ইংল্যান্ডের বোলার ব্রিগেড।

আগেই জানা গিয়েছিল ভারত সিরিজ থেকে শোয়েব বশির চোটের কারণে ছিটকে গিয়েছেন। তাই বশিরের জায়গায় আট বছর বাদে ৩৫ বছর বয়সী স্পিনার লিয়াম ডসন দলে এলেন। ২০১৭ সালে নটিংহ্যামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষবার টেস্ট খেলেছিলেন ডসন। এখনও পর্যন্ত তিনি তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন। সাতটি উইকেট পেয়েছেন এবং ৮৪ রান করেছেন। সেইভাবে টেস্ট দলে জায়গা না পেলেও বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগে খেলেছেন ডসন।

এদিকে জানা গেছে মঙ্গলবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে এই শহরে। আবহাওয়া দপ্তর থেকে বলা হয়েছে, বুধবার সকাল থেকে মেঘলা আকাশ থাকবে। দুপুরের দিকে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কখনও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেইভাবে রোদ্দুর দেখতে পাওয়া যাবে না। অন্যান্য দিনেও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।