ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাত্তাই দিচ্ছে না ভারত

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

এশিয়া কাপ ক্রিকেটে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন খেতাবটা ভারতের ঘরে শোভা পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আত্মবিশ্বাসী ও চনমনে ভারতীয় ব্রিগেড। তারপরে ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট খেলাটা অধিনায়ক শুভমন গিলদের কাছে অন্য লড়াইয়ের কথা বলেছে। ভারতীয় দলে তরুণ গ্রিকেটারদের দাপটে এখন যে কোনও প্রতিপক্ষ দলকে চাপেু রাখে। তার অন্যথায় হল না। প্রথম টেস্টে টসে জিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয়। খেলার শুরু থেকেই ভারতীয় বোলারদের আক্রমণের কাছে তাসের ঘরের মতোই একের পর এক উইকেট ভেঙে পড়ে। মাত্র ১৬২ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শিবিরে ধস নেমে আসে। ভারতের যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ এবং কুলদীপ যাদবের দুরন্ত বোলিংয়ের মোকাবিলা করতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটাররা মুখ থুবড়ে পড়েন। কেউই ভাবতেই পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন দৈন্যদশা হবে। তাই গত বৃহস্পতিবার প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৬২ রানে থমকে যেতে হয়।

শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে ভারত একেবারে চালকের আসনে। দিনের শেষে ভারত ৫ উইকেটে ৪৪৮ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কোণঠাসা করে দিয়েছে। এক কথায় বলা যায় ভারত সারাদিন রাজত্ব করে ২৮৬ রানে এগিয়ে রয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলা করলেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা। দর্শকরা ভারতের তিন ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল, ধ্রুব জুরেল ও রবীন্দ্র জাদেজার সাহসী শতরানকে উপভোগ করলেন। বোলারদের পাশে ভারতের ব্যাটসম্যানদের শাসন দেখা গেল উইকেটে।

এই মুহূর্তে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যে ছন্দে খেলছেন, তাতে জোর গলায় বলতে পারা যায় শুভমন গিল ব্রিগেড দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে চাইবেন না। একটা বিরাট অঙ্কের রানের মাথায় হয়তো দান ছেড়ে দিতে পারেন। সেই লক্ষ্যে ভারতীয় দল এগিয়ে চলেছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। দ্বিতীয় দিনে অধিনায়ক শুভমন গিল ঝুঁকি না নিয়ে নিজের স্বাভাবিক খেলা খেললে হয়তো শতরান করতে বড় পদক্ষেপ রাখতেন। শেষ পর্যন্ত একটু ভুলে শুভমন ৫০ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। শুভমনের উইকেট হারানোর পরে ভারতের তিন ব্যাটসম্যান লোকেশ রাহুল, ধ্রুব জুরেল ও রবীন্দ্র জাদেজা যেভাবে প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের চাপে রাখলেন, তা অবশ্যই প্রশংসা করার মতো।


লোকেশ রাহুলের শতরান করে আউট হন। রাহুল ৩২১১ দিন পর দেশের মাটিতে সেঞ্চুরি করলেন। ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর চেন্নাইয়ের মাঠে ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে ১৯৯ রান করেছিলেন। আট বছর নয় মাস পর দেশের মাটিতে রাহুলের ব্যাট থেকে শতরান এলো। টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর ১১তম শতরান তাঁর। লোকেশ রাহুল ১০০ রান করতে ১৯৭টি বল খেলেন। ছক্কা না মারলেও, ১২টি বাউন্ডারি মেরেছেন।

অন্যদিকে, উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান ধ্রুব জুরেল তাঁর ক্রিকেট জীবনে টেস্টে প্রথম শতরান করার কৃতিত্ব দেখালেন। তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ১২৫ রান। এই রান করতে তিনি ২১০টি বল খেলেছেন। ১৫টি বাউন্ডারির পাশে তিনবার ছক্কা মেরেছেন। তাঁর স্বচ্ছন্দ ব্যাটিং সবাইকে মুগ্ধ করেছে। ধ্রুব জুরেল কোনও সময় বুঝতে দেননি ঋষভ পন্থের অভাব। তাঁর উজ্জ্বল ব্যাটিং অন্যদের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। উত্তরপ্রদেশের ২৪ বছরের ধ্রুব জুরেল নিজেকে প্রমাণ করেছেন তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

আর অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাকে নিয়ে নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না। তাঁর ব্যাট থেকে এখনও পর্যন্ত ১০৪ রান এসেছে। রয়েছেন উইকেটে। এই রান করার ফাঁকে ৬টি বাউন্ডারির পাশে ৫টি ছক্কা মেরে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি কী চরিত্রের ক্রিকেটার। রবীন্দ্র জাদেজার এটি টেস্ট ক্রিকেটে ষষ্ঠ শতরান। রবীন্দ্র জাদেজার সঙ্গী হিসেবে তৃতীয় দিনে ব্যাট করতে নামবেন ওয়াশিংটন সুন্দর। সুন্দর ৯ রানে নটআউট রয়েছেন। তাই বলতে পারা যায় তৃতীয় দিনে ভারতীয় দল বড় অঙ্কের রানের দিকে ঝাঁপাবে। পরবর্তী ভারতের খেলোয়াড়রাও চাইবেন রানের ব্যবধানকে বাড়িয়ে রাখতে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা কোনও দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না। ভারতের ব্যাটসম্যানদের দাপটের কাছে নিজেদের অস্তিত্বকে হারিয়ে ফেলেছেন। প্রথম দিন ভারতীয় দলের দু’টি উইকেট হারাতে হয়েছিল। আর দ্বিতীয় দিনে ভারতের তিনটি উইকেট পায় প্রতিপক্ষ দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলার চেজ পেয়েছেন ৯০ রানের বিনিময়ে। তাঁদের কোনও অঙ্কই রণকৌশলে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এক কথায় বলতে পারা যায়, ভারতের জয় এখন সময়ের অপেক্ষায়।

এদিন রবীন্দ্র জাদেজা শতরান করলেন না— গড়লেন নজির। টেস্টে তাঁর ৩০০টি উইকেট আছে। লাল বলের টেস্টে ৬টি বা তার বেশি শতরান ও ৩০০টি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বে রবীন্দ্র জাদেজা কপিলদেব, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, ইমরান খান, ইয়ান বোথাম ও ড্যানিয়েল ভেত্তোরিদের পাশে নাম লিখিয়ে ফেললেন।

আবার ক্রিকেট জীবনে প্রথম শতরান করে ধ্রুব জুরেল বাবাকে গার্ড অব অনার দিলেন। কার্গিল যুদ্ধে বাবা একজন ভারতীয় সেনা হিসেবে লড়াই করেছিলেন। সেনাকর্মীরা যেভাবে বন্দুক দিয়ে গার্ড অব অনার করেন— ঠিক সেইভাবে ব্যাট দিয়ে গার্ড অব অনার দিয়ে সেনাবাহিনীকে স্যালুট করলেন।

ভারতীয় ব্রিগেড যেভাবে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে আমেদাবাদ উইকেটে রাজত্ব করে চলেছে, তাতে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল দিশেহারা। আসলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে কোনও ক্রিকেটার নেই, যিনি ভারতীয় দলের সঙ্গে টক্কর দিতে পারেন! সেই কারণে ভারতীয় ব্রিগেড একতরফা খেলে ইনিংস জয়ের লক্ষ্যে বড় পদক্ষেপ রাখতে বদ্ধপরিকর।