দক্ষিণ আফ্রিকার ঘূর্ণি ঝড়ে লন্ডভণ্ড হয়ে গেল ভারত

নিজস্ব চিত্র

পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী

নিজের ফাঁদে পা আটকে গিয়ে বিপদ ডেকে আনল ভারত। সব আশা স্বপ্ন বিফলে চলে গেল। ভুল অংকের কোনও সমাধান হয় না। তাই তো রবিবার ছুটির দিনে যে ভাবনায় দর্শকরা ছুটে এসেছিলেন, তার বিপরীত ছবিটা দেখে হতাশায় মাথায় হাত দিয়ে গ্যালরিতে নিশ্চুপ হয়ে বসে থাকলেন। কেউই ভাবতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে এমন লজ্জার হারে ভারতীয় ব্রিগেড বিদ্ধ হবে! যেখানে ১২৪ রান করলেই ভারতের মুঠোয় ম্যাচটা চলে আসবে-সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে পারল না। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয়ে গেল মাত্র ৯৩ রানে।

ভারতের ব্যাটসম্যানদের ভরাডুবিতে ইডেন কেঁদে উঠল। কোনও ব্যাটসম্যানই বুক চিতিয়ে খেলবার সাহস দেখাতে পারলেন না। তাসের ঘরের মতন ভেঙে পড়ল ভারতীয় শিবির। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার সিমন হারমাবের ঘুর্ণিতে ছিটকে গেলেন ঋষভ পন্থরা। ভারতকে প্রথম টেস্ট ম্যচে হার স্বীকার করতে হল ৩০ রানে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। এখানে বলতে দ্বিধা নেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ভারত প্রথম ইনিংসে ৩০ রানে এগিয়ে ছিল। সেই রানে ভারতকে হার মেনে নিতে হল। দক্ষিণ অফ্রিকার প্রথম ইনিংসের ১৫৯ রানের জবাবে ভারত ১৮৯ রান করে ৩০ রানে এগিয়ে থাকে। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে দ্বিতীয় দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে ৯৩ রান করায় তৃতীয় দিনে জয়ের বাজনায় মুখর হয়ে উঠবে সারা ইডেন। এটাই তো স্বাভাবিক! কিন্তু খেলার ছবি অনেক সময় একেবারে বদলে যায়। আর তখনই অঘটনের রাস্তাটা বড় করে দেখা দেয়। সত্যি তাই হল। ইডেন তা প্রত্যক্ষ করল।


দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা সাহসী ভূমিকা নিয়ে খেললেন এবং সতীর্থ ক্রিকেটার দের লড়াই করবার জন্যে অনুপ্রাণিত করলেন। তাঁর ব্যাট থেকে ৫৫ রান আসে। বাভুমার উইকেটটা ভাঙতে পারেননি। ভারতের কোনও বোলার। অপরাজিত থেকে গেলেন। তাদের ইনিংস শেষ হলো ১৫৩ রানে। ভারতের জয়ের লক্ষ্য গিয়ে দাঁড়ায় ১২৪ রান। কিন্তু ভারতের ব্যাটসম্যানরা দিশেহারা হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকার ১২৩ রানের ধারে কাছে পৌঁছাতে পারলেন না। ইডেন সাক্ষী হয়ে রইল ৩০ রানে ভারতের হারের লজ্জা। যেখানে ভারত গর্ব করে বলে থাকে স্পিনাররা আক্রমণের বড় হাতিয়ার। যে দলে চারজন স্পিনারদের পাশে যশপ্রীত বুমরা ও মহম্মদ সিরাজ যাবেন, সেই দলের সঙ্গে লড়াই করাটা বেশ কঠিন প্রতিপক্ষ দলের। কিন্তু কেউই ভাবতে পারেননি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা দলে জাদু দেখাতে পারেন এডেন হারমার, মার্কো জানসেন ও কেশব মহারাজরা। আর অবিশ্বাস্য ও অভাবনীয় জয়ের নায়ক হয়ে গেলেন হারমার। বিকেল না গড়াতেই ভারতীয় ক্রিকেট দলকে অস্তাচলে চলে যেতে হল। তাই হয়তো ইডেনের আকাশে কিছু সময়ের জন্যে মেঘলা আকাশ উঁকি দিয়েছিল।

ভারতের এই হারের জন্যে যতই ইডেনের উইকেটকে দায়ী করা হোক না কেন, এই উইকেটে দাঁড়িয়ে মাটি কামিড়িয়ে টেম্বা বাভুমা যে লড়াইটা করলেন এবং ম্যাচ বের করে আনলেন তার জন্যে কুর্নিশ তোলা থাকল। দুই ইনিংস মিলিয়ে কেউই অর্ধশত রান করতে পারেননি। কিন্তু বহুরূপী ইডেন উইকেটে বাভুমার ব্যাট থেকে এসেছে অর্ধ শতরান। তাহলে এর ব্যাখ্যা কী হবে? চোট পাওয়া অধিনায়ক শুভমন গিলের অনুপস্থিতিতে ঋষভ পন্থ দলকে নেত্রীত্ব দিয়ে ব্যর্থ হলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতের ওয়াশিংটন সুন্দর (৩১) ছাড়া অন্য কোনও ক্রিকেটার ২০ রানের ঘরে পা রাখতে পারেননি। এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট হয়ে যায় ভারতের ব্যাটসম্যানদের কী করুণ অবস্থা! দেশের মাটিতে ১৫ বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টেস্ট ক্রিকেট হারতে হল ভারতকে।
তিনদিনের টেস্ট ক্রিকেটের এই হাল দেখে সবাই হতবাক। হয়তো অনেকেই বলছেন ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীরের অতি আত্মবিশ্বাসী হওয়ার কারণে এই হার মেনে নিতে হয়েছে। কোচ তাঁর ইচ্ছা মতো উইকেট তৈরি করেছেন। শুষ্ক পিচে ভারতের স্পিনাররা বাড়তি সুযোগ পাবেন এবং প্রতিপক্ষ দলকে চাপে রাখা যাবে।

কোচের সেই ভাবনা পুরোপুরি নস্যাৎ হয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার আক্রমণের কাছে। প্রথম টেস্ট ম্যাচ হারের ফলে ভারতকে পিছিয়ে পড়তে হন সিরিজ জয়ের স্বপ্ন থেকে একদিকে জঘন্য পিচ আর হতশ্রী ব্যাটিং ভারতীয় শিবিরে অন্ধকার ডেকে আনে। অন্যপাশে ভারতের ব্যাটসম্যানদের অধৈর্য্য ও মর্জি মতো খেলার চেষ্টায় হারের দরজাটা খুব তাড়াতাড়ি খুলে গিয়েছিল। সেই দরজাটা বন্ধ করবার মতো কোনও ক্রিকেটারকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একশো রানের নিচে ভারতীয় দলে ধস নেমে আসে তা নিয়ে সাজঘরে কারোওর মুখে টু শব্দটা শোনা যায়নি। সবাই নীরাবতা পালন করে নিজেদের মনকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, এই হারের সাক্ষী কেন হলাম? কোনও সান্ত্বনা বাক্য চার দেওয়ালে প্রতিধ্বনি হয়নি।