দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে মহিলা বিশ্বকাপ জিতল ভারত

টানা বৃষ্টিতে দুই ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়েছিল ম্যাচ। কিন্তু বৃষ্টি থামতেই ডি ওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে শুরু হল ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের সোনালি অধ্যায়। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নারী বিশ্বকাপ জিতল ভারত। আর এই ঐতিহাসিক দিনে আলো ছড়িয়ে দিলেন মাত্র একুশ বছরের শেফালি বর্মা— ইনিংসের সেরা ৮৭ রান করে দলের ভিত গড়ে দেওয়া এই তরুণীর ব্যাটিং আজ হয়ে রইল স্মরণীয়।

শুরুতেই চাপে প্রোটিয়ার বোলাররা
নকআউট পর্বে চোটের পরে দলে ফেরা শেফালি প্রথম বল থেকেই আক্রমণের সুর চড়ান। অপর ওপেনার স্মৃতি মান্ধানার সঙ্গে শতরানের জুটি গড়ে ভারতকে ছ’ওভারে পঞ্চাশ রানের দৌড় দেখান। আঠারো ওভারেই দলের স্কোর একশো পেরিয়ে যায়। স্মৃতি আউট হন ৪৫ রানে, কিন্তু ততক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের উপর চাপ স্পষ্ট।

দীর্ঘদিন পরে পাওয়া অর্ধশতরান— শেফালির ব্যাট থেকে মাত্র উনপঞ্চাশ বলে সাতটি চার ও দুইটি ছয়ের দাপটে তাঁর ৭৮ বলে ৮৭ রানের ইনিংস দর্শকদের মুগ্ধ করে দেয়। আয়াবোঙ্গা খাখার বলে সুনে লুজের অসাধারণ ক্যাচে শেষ হয় তাঁর ইনিংস, কিন্তু ভারতের ভিত্তি তখন দৃঢ়।


মধ্য ওভারে দ্রুত উইকেট এলেও দীপ্তি শর্মার শান্ত ব্যাটিং ভারতকে স্থিতি দেয়। তাঁর ৫৩ বলে ৫৮ রানের ইনিংসে আসে এক দাপুটে ছয়ও। অধিনায়ক হরমনপ্রীত কৌরের ২০ এবং ঋচা ঘোষের ২৪ বলে ৩৪ রানের ঝড় ভারতকে পঞ্চাশ ওভারে নিয়ে যায় ২৯৮–এ।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দমবন্ধ করা চাপ দক্ষিণ আফ্রিকার
টস জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথমে বোলিং নেয়— আবহাওয়া ও শিশিরকে কাজে লাগাতেই এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু ভারতের ব্যাটিংই ম্যাচের রং পালটে দিয়েছিল। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা সতর্ক হলেও বেশি দূর এগোতে পারেনি প্রোটিয়ারা।

তাসমিন ব্রিটজকে সরাসরি দুরন্ত থ্রোয়ে আউট করেন অমনজ্যোত কৌর। শ্রী চরনির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন অ্যানেক বোশ। অধিনায়ক লরা ভল্ভার্ট নিজের সেমিফাইনালের উজ্জ্বল ফর্ম ধরে রাখার চেষ্টা করলেও ম্যাচের গতি পালটে দেয় ভারতীয় অধিনায়কের এক সাহসী পদক্ষেপ— শেফালিকে বল হাতে আনা।

ব্যাটিংয়ের পরে বোলিংয়েও নায়িকা শেফালি
পার্ট–টাইম বোলার হিসেবেই পরিচিত— কিন্তু হরমনপ্রীতের বিশ্বাসের মর্যাদা রাখলেন শেফালি। প্রথম বলেই তুলে নিলেন সুনে লুজকে। কয়েক ওভার পরে মারিজান কাপকেও ফেরান তিনি। তাঁর হাতে জ্বলে ওঠে ভারতের কৌশলগত পরিকল্পনা।

ভারতের ধারাবাহিক ফিল্ডিং, নির্দিষ্ট জায়গায় বল রাখা, এবং বোলারদের পরিকল্পিত আক্রমণে দক্ষিণ আফ্রিকা কোনও সময়ই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ভারতের মেয়েরা দাপুটে জয়ে ইতিহাস গড়ে বিশ্বকাপ ঘরে তোলে।

একটি দিন— ইতিহাসের, সাহসের আর শেফালির উজ্জ্বলতার
দীর্ঘদিন পরে অর্ধশতরান, তাতে ভারতকে বিজয়ের পথে এগিয়ে দেওয়া, তার পরে বোলিংয়েও সাফল্য— শেফালির জন্য এই দিন হয়ে রইল জীবনের সেরা অধ্যায়গুলির একটি। ভারতের মহিলা ক্রিকেটও নতুন গৌরবে মুড়ে গেল।