আজ ইডেনে প্রথম টেস্ট ম্যাচ

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ক্রিকেটের স্বর্গোদ্বার ইডেন এখন ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম টেস্ট ম্যাচকে ঘিরে উত্তাল। আজ কলকাতা শহর ইডেনমুখী। ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বলতেই কলকাতার নামটা সবার আগে এসে যায়। তবে ক্রিকেট নিয়ে এই মুহূর্তে বাঙালির প্রাণে সেইভাবে বড় রেখাপাত না ঘটলেও, ক্রিকেটপ্রেমীরা অবশ্যই ছড়িয়ে ছিটিয়ে ইডেন আসবেন, এ বিশ্বাস রয়েছে। টিকিটের চাহিদা বলতে যা বোঝায় সেই উচ্চমার্গে পৌঁছয়নি। আসলে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মারা ভারতীয় দলে না থাকায় ক্রিকেটপ্রেমীরা সেই উচ্ছ্বাসটা ছড়িয়ে দিতে পারছেন না। তবে ভারতীয় তরুণ ব্রিগেড যেভাবে ভারতীয় দলকে উদ্বুদ্ধ করছে, সেটা অবশ্যই বড় প্রাপ্তি। বিশেষ করে নতুন অধিনায়ক শুভমন গিল পুরো দলটাকে উৎসাহিত করছেন। ইংল্যান্ড সফরে অধিনায়ক হিসেবে শুভমনের অভিষেক হয়। ওই সিরিজে শুভমন দুরন্ত ভূমিকা নিয়ে ইংল্যান্ডের সঙ্গে সিরিজ ড্র করে।

স্বাভাবিকভাবে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পুরো দলটা খেলতে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুই দলের ক্রিকেটাররা বেশ কিছুক্ষণ অনুশীলন করেছেন দুই দফায়। প্রত্যেকেই অত্যন্ত সিরিয়াস ছিলেন। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে দেখা গেল সব খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলছেন। হয়তো তিনি বলতে চেয়েছেন, এই ইডেন উদ্যানে প্রচুর ইতিহাস আছে। দক্ষিণ আফ্রিকার খেলোয়াড়রা এই ইডেনকে অন্য চোখে দেখেন। সেই কারণে প্রতিটি মুহূর্ত আলাদা ভাবে দেখতে হবে। অধিনায়ক বাভুমা মনে করেন, ইডেনের উইকেট সবসময় বোলারদের জন্য সহায়ক হয়।

তবে, ব্যাটসম্যানরাও যে বাড়তি সুবিধা পান না, এটা সঠিক তথ্য নয়। ইডেন বলতেই ইতিহাসের সাক্ষী। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক মনে করেন, পাকিস্তান থেকে সিরিজ জয়ের পরে প্রত্যেকেই দারুণ ছন্দে রয়েছেন। যে কোনও মুহূর্তেই তারা অঘটন ঘটিয়ে দিতে পারে। শুধু অপেক্ষা করতে হবে এই উইকেটে যদি সুইপ, রিভার্স ও পেসারদের জন্য উইকেট ভাঙা থাকে, তাহলে খেলার চেহারা একেবারেই বদলে যাবে। খেলোয়াড়রা তৈরি রয়েছেন বড় শট নেওয়ার জন্য। কেউই ভয় পাচ্ছেন না। এদিন উইয়ান মুন্ডার, রায়ান রিকলটন, এডেন মার্করাম ও স্টার্ফরা অত্যন্ত আক্রমণাত্মক প্র্যাকটিস করলেন নেটে। তাঁরা প্রত্যেকেই জানেন, ভারতীয় দলে বেশ কয়েকজন ভালো বোলার রয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে মোকাবিলা করতে গেলে যে সাহসী ভূমিকা নিতে হয়, সেটা কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার। শুধু আবেগে ভাসলে হবে না, ক্রিকেট খেলার মধ্যে একটা ধ্রুপদী ব্যাপার থাকে। সেই জায়গায় পৌঁছতে গেলে যে মানসিকতার প্রয়োজন হয়, তা অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা চেষ্টা করবে, দুই টেস্ট সিরিজে এগিয়ে থাকতে। তার জন্য চ্যালেঞ্জিং মুড নিয়ে মাঠে নামতে হবে।


এদিকে ভারতীয় শিবিরে দেখা গেল একেবারে খোলামেলা পরিবেশ। প্রত্যেকেই অপেক্ষা করছেন শুক্রবারের সকালটা যেন তাদের জন্য বরাদ্দ হয়ে থাকে। অর্থাৎ টসে জেতাটা একটা ভাইটাল পয়েন্ট। ইতিমধ্যেই ভারতের অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর ছেড়ে দিয়েছেন নীতীশকুমার রেড্ডিকে। সেই জায়গায় উইকেটরক্ষক হিসেবে ধ্রুব জুরেলকে দেখতে পাওয়া যাবে। আবার ঋষভ পন্থ চোট সারিয়ে দলে ফিরেছেন এবং খেলার জন্য প্রস্তুত। সেই কারণেই কলকাতার দর্শক ধ্রুব জুরেল ও ঋষভ পন্থের উপরেই চোখ রাখবেন বেশি। তার প্রধান কারণ উইকেটরক্ষক হিসেবে ধ্রুব জুরেলকে দেখা যাবে। তিনি দারুণ ফর্মে রয়েছেন। কোনওভাবেই তাঁকে বাদের তালিকায় রাখা সম্ভব নয়। অর্থাৎ স্বপ্নের ছন্দে তিনি নিজেকে তৈরি করে ফেলেছেন। সেই কারণেই জুরেলের উপরেই অনেক ভরসা রয়েছে কোচ গৌতম গম্ভীরের। তবে কি ঋষভ পন্থকে একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখতে পাওয়া যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজেই পাওয়া যায়। হ্যাঁ।

এদিন উইকেটের চরিত্র দেখে মনে করা হচ্ছে স্পিনাররা অনেক বেশি সুবিধা আদায় করে নিতে পারবেন। যে দলে কুলদীপ যাদব থেকে শুরু করে মহম্মদ সিরাজ রয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে ভালো বল আশা করা যেতেই পারে। লোকেশ রাহুল ওপেনার হিসেবে মাঠে নামবেন, এটাই স্বাভাবিক। তবে তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য উইকেটে আসবেন, যশস্বী জয়সওয়াল। যশস্বীও ভালো ফর্মে রয়েছেন। আশা করা যেতেই পারে, তাঁর ব্যাট থেকে ভালো রান দেখতে পাওয়া যাবে ভারতীয় স্কোরবোর্ডে। লোকেশের উপরে ভরসা করতেই পারা যায়। অত্যন্ত ধীর স্থির এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে খেলে থাকেন। তিনি নিজে ভাবেন দেশের জন্য খেলাটা আমার কাছে একটা বড় লড়াই। সেই লড়াইয়ে জিততেই হবে। কোচ গৌতম গম্ভীর নিশ্চয়ই ২২ গজে রণনীতি কী হবে, তা নিয়ে গোপন অঙ্ক কষবেন।