রবিবার ছুটির দিনে ভারতের জয় দেখার অপেক্ষায় ইডেন

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

এখন শুধু অপেক্ষা ভারতের জয় দেখার জন্য। শনিবারের বারবেলায় যেভাবে দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে ধস নেমে এল, তা দেখে মনে হয়েছে, ভারতের জয়ের পতাকা তুলতে আর কিছুটা সময় বাকি রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে ১৫৯ রানের জবাবে, ভারত দ্বিতীয় দিনে ১ উইকেটে ৩৭ রান নিয়ে খেলতে নেমে ইনিংস শেষ করে ১৮৯ রানে। অর্থাৎ ভারত মাত্র ৩০ রানে এগিয়ে থাকে। হয়তো তখনই ভারতের জয়ের বার্তা পৌঁছে গিয়েছে সবার কাছে। তবুও, ক্রিকেট সবসময়ই অঘটনের খেলা। তাই অবশ্যই অপেক্ষা করতে হবেসেই জয়ের ধ্বনি শুনতে। প্রথম ইনিংসে যশপ্রীত বুমরার আগুনে বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শিবির তছনছ হয়ে গিয়েছিল। আর দ্বিতীয় ইনিংসে রণংদেহি মনোভাব নিয়ে বল করতে নেমে রবীন্দ্র জাদেজা অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ব্রিগেডকে চাপে ফেলে দিলেন। দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার সাতটি উইকেট পড়ে গিয়েছে মাত্র ৯৩ রানে। এই মুহূর্তে তারা মাত্র ৬৩ রানে এগিয়ে রয়েছে। আর হাতে রয়েছে তিনটি উইকেট। সারাদিনে ১৫টি উইকেট পড়েছে। ভারতের আটজন খেলোয়াড় সরাসরি আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরত গিয়েছেন। আর অধিনায়ক শুভমন গিল চোটের কারণে অবসৃত হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরত যান। অবশ্য তিনি আর মাঠে নামতে পারেননি। আর তারপরেই দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইন একের পর এক ভূপতিত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে।

এখন প্রশ্ন হল, ইডেনের পিচ যেভাবে চরিত্র বদল করছে, তাতে রবিবার ছুটির দিনে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারতীয় দলের বোলাররা ওই তিনটি উইকেট তুলে নিতে পারলে ভারতের সামনে খুব সহজেই জয় চলে আসবে। তাই এই পিচে ভারতকেও রান তাড়া করতে হবে। সেই কারণেই কোচ গৌতম গম্ভীর এখনও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না, ইডেনের উইকেট কী কথা বলবে। তার প্রধান কারণ হল, দ্বিতীয় দিনে ভারতের ব্যাটসম্যানরাও খুব একটা সুবিধা আদায় করে নিতে পারেননি। এই উইকেট দেখে আশা করা গিয়েছিল, বড় রানের অঙ্ক দেখতে পাওয়া যাবে ভারতীয় স্কোরবোর্ডে। কিন্তু সেই আশা পূর্ণ হয়নি। তাই কোচ গৌতম গম্ভীর চিন্তামুক্ত নন। কখন যে উইকেটে ঘূর্ণিঝড় উঠবে, তা আগাম বলা যাবে না। আর তারপরেই অধিনায়ক শুভমন গিলের চোট নিয়েও ভারতীয় শিবির বেশ চিন্তার মধ্যে রয়েছে। এদিন রবীন্দ্র জাদেজা টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে নতুন অধ্যায় রচনা করলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলা চলাকালীন এই নজিরটা গড়লেন জাদেজা। টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ৪০০০ রান ও ৩০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করলেন। এই দিনটি শুধু ভারতের নয়, বিশ্বক্রিকেটে তাঁর নাম উঠে এল। এখনও পর্যন্ত এই নজিরে মাত্র তিনজন বিশ্বক্রিকেটার রয়েছেন। তাঁরা হলেন কপিল দেব, ইয়ান বথাম ও ড্যানিয়েল ভেত্তরি। এই মুহূর্তে জাদেজার উইকেট ৩৩৮ এবং রানের সংখ্যা ৪০০০।

ভারতীয় দল প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৮৯ রান করে ৩০ রানে এগিয়ে ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলার জানসেন তিনটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। আর হার্মারের দখলে যায় চারটি উইকেট। সেই কারণেই বুঝতে হবে, দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতীয় দলকে সতর্কতার সঙ্গে খেলতে হবে। যখন বলা হচ্ছিল, ইডেনের পিচ বিশ্বমানের থেকেও সেরা, সেই জায়গায় ভারতকেও কাত হতে হয়েছে। ব্যাটসম্যানরা দুরন্ত গতিতে রান তুলতে পারেননি। কিন্তু এই উইকেটেই আবার দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করতেই বিপদে পড়ে যায়। ইনিংসের সপ্তম ওভারে কুলদীপ যাদবের বলে এলবিডব্লু হন রায়ান রিকেলটন। তিনি করেন মাত্র ১১ রান। এরপরেই আঘাত হানেন রবীন্দ্র জাদেজা। জাদেজার বল খেলতে গিয়ে আইডেন মার্করাম ক্যাচ তুলে দেন ধ্রুব জুরেলের হাতে। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৪ রান। তারপরেই জাদেজার বলে মুল্ডার ক্যাচ তুলে দেন ঋষভ পন্থের হাতে। মুল্ডার আউট ১১ রানে। একের পর উইকেট পড়তে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকার। আবার জাদেজার শিকার হন টনি ডে জর্জি ও ত্রিস্তান স্টাবস।


টনি করেন ২ রান আর স্টাবস করেছেন মাত্র ৫ রান। বোলার বদল করার পরেই আবার উইকেট। বল করছিলেন, অক্ষর প্যাটেল। অক্ষর প্যাটেলের বলে আউট হন কাইল ভেরেনি। আর কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণিতে স্লিপে ক্যাচ তুলে দেন জানসেন। লোকেশ রাহুল নিজের আয়ত্তে বলটি হাতে তুলে নিয়ে জানসেনকে ড্রেসিংরুমে পাঠিয়ে দেন। জানসেনের ব্যাট থেকে এসেছে ১৩ রান। দিনের শেষে খেলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা ২৯ রানে আর সি বসচ ১ রানে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ভারতীয় দল এখন দক্ষিণ আফ্রিকা শিবির শাসন করছে।