রনজিৎ দাস
এক ম্যাচ বাকি থাকতেই আইলিগ দ্বিতীয় বিভাগে ডায়মন্ড হারবার এফসি চ্যাম্পিয়ন হলো। গতকাল মিজোরামের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে মিজোরামের চানমারি এফসিকে তারা ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষে পৌঁছে গেল। ৮৫মিনিটে তাদের পরিবর্তিত ফুটবলার রবিনসন খোঙ্গসাই জয়সূচক গোলটি করেন। আইলিগের তৃতীয় ও দ্ধিতীয় বিভাগে মিজোরামের চানমারি এফসির সাথে তিনবার ডায়মন্ড হারবার এফসি খেললো। তিনবারই ডায়মন্ড হারবার এফসি পরাজিত হয়। আইলিগের ১৫টা ম্যাচ খেলে এখনও ডায়মন্ড হারবার এফসি অপরাজিত আছে।লিগের শেষ ম্যাচ তারা ঘরের মাঠে এফসি বেঙ্গালুরু ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলবে।
মাত্র ৩ বছর আগে কলকাতা লিগে ডায়মন্ড হারবার এফসি আত্মপ্রকাশ করে। কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনে অংশগ্রহণ করেই তারা লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশনে প্রমোশন পায়। মোহনবাগান ক্লাবকে আইলিগ চ্যাম্পিয়ন করা কোচ কিবু ভিকুনাকে তারা দলের দায়িত্ব দেয়। কোচ কিবু ভিকুনার প্রশিক্ষণে মাত্র ৩বছরেই কলকাতা লিগ থেকে আই লিগের মূলপর্বে ডায়মন্ড হারবার এফসি পৌঁছে গিয়ে অনন্য নজির গড়ে তুললো।
২০২৪/২৫ মরশুমে তারা কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের খেলা শুরু করে। গ্রুপ পর্যায় থেকে তারা চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইয়ে পৌঁছে গেছে। লিগে ১৫টা ম্যাচ খেলে এখনও তারা অপরাজিত থেকে লিগ টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে। অমিমাংসিত কলকাতা লিগের পরেই তারা আইলিগের তৃতীয় বিভাগের গ্রুপ পর্যায়ে খেলার সুযোগ পায়। গ্রুপ পর্যায় থেকে ফাইনাল রাউন্ডে পৌঁছে তারা আইলিগের তৃতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হয়। আইলিগের তৃতীয় বিভাগে খেলার পরে একই মরশুমে আইলিগের দ্বিতীয় বিভাগে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। আইলিগে দ্বিতীয় বিভাগে অংশগ্রহণ করে সেখানেও ডায়মন্ড হারবার এফসি চ্যাম্পিয়ন হলো। গত মরশুমের ডায়মন্ড হারবার এফসি আইলিগের তৃতীয় বিভাগে অংশগ্রহণ করেছিল।কিন্তু গোলপার্থক্যে তারা গ্রুপ পর্যায় থেকে ছিটকে যায়। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের লিগের প্রতিটি পর্যায়ে তারা সর্তক ছিল।
এই মরশুমে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ৩৯টা ম্যাচ খেলে ডায়মন্ড হারবার এফসি ১০০পয়েন্ট অর্জন করলো। এবারের মরশুমে তারা মাত্র ১টি ম্যাচেই পরাজিত হয়।
প্রসঙ্গত বলা যায়, ডায়মন্ড হারবার এফসির ৬জন ফুটবলার এবার সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের সদস্য ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে এক মরশুমে এত ম্যাচ জয়ের নজিরও দেশের কোন ক্লাবের নেই।কলকাতা লিগের বিতর্কিত ঘটনার প্রেক্ষিতে ডায়মন্ড হারবার এফসিকে আদালতের লড়াই পর্যন্ত করতে হচ্ছে।
কোচ কিবু ভিকুনার প্রশিক্ষণে ডায়মন্ড হারবার এফসি উপভোগ্য ফুটবল উপহার দেয়। টিমের শৃঙ্খলার প্রশ্নে কোনোরকম আপোষ তিনি করেননি। কোনো ম্যাচের প্রথমহাফে রক্ষনভাগের ফুটবলার হলুদ কার্ড দেখলেই তিনি বিরতিতে সেই ফুটবলার কৈ পরিবর্তন করে নেন। গতকালের চানমারি এফসির বিপক্ষে খেলতে নামার আগেই তার দল আইলিগের মূলপর্বে পৌঁছে গেছিল। তথাপি অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে তিনি দলের প্রথম একাদশে একাধিক পরিবর্তন নেননি। শক্তিশালী দল হিসেবে ডায়মন্ড হারবার এফসি তাদের পারফরম্যান্স দিয়েছে। দলে একাধিক ফুটবলার গোল করার পারদর্শীতা দেখিয়েছে। এক মরশুমেই ইতিমধ্যে তারা ৯০টা গোল করেছে। ম্যাচ প্রতি গড়ে ২য়ের বেশি গোল করেছে। গোল করে গোল ধরে রাখার কৃতিত্ব তারা দেখিয়েছে। মরশুমের ৩৯টা ম্যাচে তারা মাত্র ২৪টা গোল খেয়েছে। অর্থাৎ কোচ কিবু ভিকুনার দল আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলেও রক্ষনভাগের মজবুত রেখেছেন।
বাংলার একমাত্র দল হিসেবে ডায়মন্ড হারবার এফসি আগামী মরশুমে আইলিগের মূলপর্বে খেলবে। আইলিগের মূলপর্বে এমনিই ধারাবাহিকতা দেখিয়ে তারা দেশের সর্বোচ্চ আইএসএল লিগে খেলতে চায়।