‘বঙ্গভূষণ’ সম্মান জানিয়ে রিচাকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব চিত্র

আলোয় ঝলমল কলকাতার নন্দনকানন ইডেন উদ্যান। বিশ্বজয়ী বাংলার সোনার মেয়ে রিচা ঘোষ প্রবেশ করতেই সারা ইডেন উদ্যান একেবারে অন্য চেহারায় মেতে গেল। কয়েক হাজার দর্শক রিচাকে অভ্যর্থনা জানাতে গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করেন, তুমি আমাদের গর্ব। ভারতের গৌরব। বাংলার সোনার মেয়ে তোমাকে কোনওদিনই ভুলতে পারব না। ইডেনে তখন চাঁদের হাট। সোনার মেয়েকে বরণ করে নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি, সিএবি-র সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি, ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী সহ প্রাক্তন ক্রিকেটাররা। বাংলায় প্রথম কোনও বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটারকে পেয়েছে। তাই রিচাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য অনেকেই ছুটে এসেছেন শনিবারের সন্ধ্যায়। দেবীবরণে সবাই অভিভূত এবং আপ্লুত।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রিচার ক্রীড়া নৈপুণ্যকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন। শুধু তাই নয়, বাংলার সর্বোচ্চ সম্মান ‘বঙ্গভূষণ’ –এ রিচাকে সম্মানিত করা হল রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি, রিচাকে রাজ্য পুলিশের ডিএসপি পদে নিয়োগ করার কথা ঘোষণা করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন বাংলার মেয়েরা যেভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে ক্রীড়াক্ষেত্রে বাংলাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তা আমাদের কাছে অত্যন্ত গর্বের। আগামী দিনে বাংলার মেয়েরাও রিচাকে আদর্শ হিসাবে দেখবেন। এদিকে সিএবি-র পক্ষ থেকে ফুলের স্তবকে ক্রিকেটার রিচা ঘোষকে অভ্যর্থনা জানানার পরে তাঁর হাতে ৩৪ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়। রাজ্য সরকার ও ক্রীড়া দপ্তরের পক্ষ থেকে রিচার গলায় পরিয়ে দেওয়া হয় সোনার চেন। এই মঞ্চ থেকেই বিশ্বজয়ী রিচার হাতে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের ডিএসপি’ পদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার। সিএবি-র পক্ষ থেকে সোনার ব্যাট ও বল তুলে দেওয়া হয় রিচার হাতে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। একই মঞ্চে রিচার বাবা ও মা-কে সংবর্ধনা জানানো হয়।

মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, খেলাধুলোয় বাংলা সবসময়ই এগিয়ে। বাংলার মেয়েরাও যেভাবে সাফল্যের ইতিহাস গড়েছে, তা অবশ্যই গর্বের। হয়তো অতীতে সেইভাবে গুরুত্ব দেওয়া হত না। কিন্তু বর্তমানে তা প্রমাণ করে দিয়েছে বাংলা খেলাধুলোয় সবসময় এগিয়ে থাকে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালে যখন কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রীড়ামন্ত্রী হয়েছিলাম, সেই সময় দ্রোণাচার্য সম্মান পেয়েছিলেন নঈমউদ্দিন ও শচীন তেণ্ডুলকারের কোচ রমাকান্ত আর্চারকর। ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্যকে অর্জুন পুরস্কারে সম্মানিত করেছিলাম। অলিম্পিকে যখন ভারত হেরে গেল, সেই সময় আমি নিজে ইন্ডিয়ান পলিসি করেছিলাম স্পোর্টসের। প্রাইভেট সেক্টর ও পাবলিক সেক্টর নিয়ে স্পোর্টস একাডেমি করেছিলাম। ঝুলন গোস্বামীরা মেয়েদের বিশ্বকাপে ফাইনালে খেললেও অল্পের জন্য চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু বাংলার রিচা পেরেছেন। রিচার সতীর্থ খেলোয়াড়দেরও অভিনন্দন জানাচ্ছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি দারুণ খুশি। আমাদের মেয়েরা আরও এগিয়ে যাক। ফুটবল থেকে সাঁতার, তিরন্দাজি সহ অন্যান্য ইভেন্টে বাংলার ছেলেমেয়েদের কৃতিত্বকে আমি অবশ্যই প্রশংসা করতে চাই। রিচার থেকে আরও বেশি প্রত্যাশা আমরা নিশ্চয়ই চাইব। কিন্তু কখনওই মানবিক চাপ দেব না। আইসিসি-র সভাপতি হিসাবে আবার সৌরভ গাঙ্গুলিকে দেখতে পেল ভালো লাগত। তবে, আবারও বলছি, রিচার সাফল্য আরও বড় জায়গায় পৌঁছে যাক, আশা করব।


কথা প্রসঙ্গে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ঝুলন গোস্বামী বলেন, ২০১৩ সালে বিশ্বকাপ ফাইনালে ভারতীয় দল সেইভাবে ভালো খেলতে পারেনি। পাশাপাশি, বাংলার ক্রিকেটাররা সেইভাবে বড় জায়গায় পৌঁছতে পারেননি। তখন সিএবি-র সচিব ছিলেন বিশ্বরূপ দে। সচিবের সঙ্গে গৌতম দাশগুপ্ত ও বাবলু কোলেকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমরা যদি জেলায় ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম করতে পারি, তাহলে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড়কে খুঁজে পাওয়া যাবে। প্রথমেই শিলিগুড়িতে গিয়ে অনুর্ধ্ব ১৫ ও ১৬-র দলে রিচাকে দেখতে পেয়েছিলাম। সেখান থেকে বাংলা দলে নির্বাচিত হয়। তারপরে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেওয়ার পিছনে সামান্য প্রয়াস ছিল আমাদের। সেই রিচাই আজ বিশ্ব দরবারে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।

সৌরভ গাঙ্গুলি যেভাবে মেয়েদের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন, তা অবশ্যই অভিনন্দন যোগ্য। আগামী দিনে রিচাকে ভারতীয় দলে অধিনায়ক হিসেবে দেখলে অবশ্যই খুশি হব।
ইডেন উদ্যানে রিচার সংবর্ধনা মঞ্চ থেকে সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, আগামী দিনে আরও বেশি করে মেয়েরা ক্রিকেটে আসুক, তার জন্য সবরকম পরিকাঠামো তৈরি করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। একটা নতুন একাডেমি তৈরি করার জন্য জায়গা বাছাই করা হয়ে গেছে। ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে একটা নতুন আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট একাডেমি তৈরি করা হবে। ৯০ দশকে দিল্লিতে পুরুষ ও মহিলা সাংসদদের নিয়ে একটা ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।