মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে ইনভেস্টরের সম্পর্ক ছেদ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাব তাবু (ছবিঃএসএনএস)

এত কথাবার্তা। এত আলােচনা সবকিছুই ভেঙ্গে গেল। বিনিয়ােগকারী সংস্থা শ্ৰী সিমেন্ট ই-মেল করে সােমবারই জানিয়ে দিয়েছে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে তাদের আর সম্পর্ক নেই। যার ফলে আইএসএল ফুটবলে ইস্টবেঙ্গলের অংশ নেওয়া নিয়ে সংশয় তৈরি হল। অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা দারুণভাবে হতাশ।

আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ট্রান্সফার উইন্ডাে খােলা থাকবে। সেই কারণে আর মাত্র সাতদিনের মধ্যে নতুন করে কোনও ইনভেস্টরকে আনা বেশ কঠিন হয়ে যাবে ইস্টবেঙ্গলের কাছে। শুধু তাই নয়, দল গঠন নিয়ে নতুন করে সমস্যা তৈরি হল। কলকাতা ফুটবল লিগে ইস্টবেঙ্গল খেলছেনা, তা আগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু আইএসএল ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল খেলবে না, তা নিয়ে সংশয়ের আকাশটা কালো মেঘে ঢেকে গেল। তবে, ইনভেস্টরের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, খেলার স্পাের্টিং রাইটস ইস্টবেঙ্গলকে। ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।


এই ইমেল শুধূ ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে এসেছে তাই নয়, নবান্নেও পৌঁছে গেছে সেই ই-মেল। নবান্নে শ্রী সিমেন্ট ও ইস্টবেঙ্গলের সম্পর্ক ছেদ হওয়ার ব্যাপার নিয়ে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছে, এটা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে ইনভেস্টর এই রকম ব্যবহার করবে, তা জানা ছিল না। তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, আইএসএল ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল খেলুক, আমি চাইব। আমি খুশিই হ ইস্টবেঙ্গল খেললে। হাতে অল্প সময় রয়েছে। এই সমস্যাটা কীভাবে দূর করা যায়, তা সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে।

মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, কিছুক্ষণ আগেই আমি জানতে পেরেছি, ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্ট কোনওভাবেই আর ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে সহযােগিতা করতে পারছে না। এটা খুবই খারাপ খবর। এতদিন ধরে ক্লাবকে ঝুলিয়ে রাখার কোনও কারণ ছিল না। তারপরে একেবারে শেষ মুহূর্তে কিছু করবে না। সবাই অখুশি বিরক্ত প্রকাশ করেছে। তাহলে এতদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখার কী কারণ ছিল? প্রায় এক বছর আলােচনা, কথাবার্তা চলল, তখন কেন এমন মত প্রকাশ করা হল না?

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ইনভেসরদের পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে দেখা করে বলেছিল যে সমস্যা তৈরি হয়েছে ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে তা মিটে যাবে। তাই তাে খেলা হবে দিবসে বলেছিলাম যে ছােটখাটো সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা মিটে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় আইএসএল ফুটবলে ইস্টবেঙ্গল খেলবে।

কিন্তু এমনও শুনেছিলাম এই বছর আগস্টের মধ্যে সমস্যা সব মিটে যাবে। এমন কী হল, ইনভেস্টরের মত পরিবর্তন করতে হল? ওরা ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তা মানতে পারছি না। শুধু আমি নয়, বাংলার ক্রীড়াপ্রেমিকরাও এই ব্যাপারটা সহজভাবে নিতে পারছেন না। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের একটা ঐতিহ্য আছে।

আমরা চাই মােহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ও মহামেডান স্পাের্টিং এই তিন প্রধান আইএসএল ফুটবল খেলুক। ইতিমধ্যেই মােহনবাগান খেলছে। গত মরশুমে ইস্টবেঙ্গলকে খেলানাের ব্যাপারে সহযােগিতা হয়েছিল। তাও শেষ মুহূর্তে ইনভেস্ট পাওয়াতে ইস্টবেঙ্গল খেলতে আইনজীবী পার্থ সেনগুপ্তের সঙ্গেও কথাবার্তা বলা পেরেছে।

সত্যিই যদি ইস্টবেঙ্গল না খেলতে পারে এবারে, তাহলে খুবই দুঃখ পাব। আমি ইনভেস্টরকে জানাব। চেষ্টা করব ওদের সঙ্গে আবারও কথা বলতে। তবে সময় খুব কম, এটাও মনে রাখতে হবে সবাইকে অনুরােধ করব, ইস্টবেঙ্গলের পাশে থাকতে ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তাদের কাছে এই খুবর আসার পরেই কিছুটা বিমাের্ষ হয়ে পড়েছেন প্রত্যেকেই।

মধ্যস্থতাকারী ব্যক্তিদের কাছেও এই খবর পৌঁছে গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ইনভেস্টরের চিঠি নিয়ে অবশ্যই কার্যকরী সমিতির সভায় আলােচিত হবে। আসলে বেশ কয়োর চুড়ান্ত চুক্তিপত্র সংশােধিত হওয়ার পরেও শ্রী সিমেন্ট সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ক্লাব বেশ কিছু নতুন নতুন বিষয়ে উল্লেখ করতে থাকে। এমনকি হয়েছে। তখনও এই ব্যাপারগুলির উল্লেখ করা হয়েছে।

ক্লাব তবু কীভাবে ব্যবহার করা হবে এবং সভাপতি ও সচিবের ঘর নিয়েও কথা হয়। আবার ক্লাব সদস্যরা কীভাবে ক্লাবে প্রবেশ করবেন, সেই বিষয়ে নজর দিতে বলা হয়। কার্যকরী সমিতির সদস্যদের কি আলাদা ঘর থাকবে? সে বিষয়েও করা হয়।

তারা বলেন, ডাইরেক্টর বাের্ডের যে ১০ জন সদস্য রয়েছে , তাঁরা এই বিষয়টি বিকেনা করলে। ওই দশজনে ক্লাবের পক্ষ থেকে মাত্র দু’জন প্রতিনিধিত্ব করার সুযােগ আছে। সেই কারণেই ইনভেস্টরের উপরেই নির্ভর করতে হবে ক্লাব তাবুর ব্যাপারে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্টবেঙ্গল ক্লারে ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত, তা তার কথাবার্তায়ই প্রকাশ পেয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরাও এখন অপেক্ষায় রয়েছেন শেষ পর্যন্ত ইস্টবেঙ্গলের জন্য কীভাবে এগিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী।

প্রাক্তন ফুটবলার প্রশান্ত ব্যানার্জি বলেছেন, ইনভেস্টরের একটু নরম হওয়া উচিত ছিল। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব্বে ঐতিহ্যের উপরে আঘাত আসুক আমরা চাই না। শতাব্দী প্রাচীন ইস্টবেঙ্গল ক্লারে সুনাম কোনওভাবেই ক্ষুগ্ন হয়, তা আমাদেরও দেখতে হবে।