হারের হ্যাটট্রিকে নাম লেখাল চেন্নাই

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ঘরের মাঠে লজ্জার হারে পড়ল চেন্নাই সুপার কিংস। দিল্লি ক্যাপিটালসের কাছে ২৫ রানে হারতে হয়েছিল চেন্নাইকে। চেন্নাই ঘরের মাঠে ১৫ বছর বাদে হার স্বীকার করল, তাও আবার দিল্লি ক্যাপিটালসের মতো দলের কাছে। ধোনিদের যে সময়টা খারাপ যাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠল এই ম্যাচের মধ্যে দিয়ে। এই নিয়ে তৃতীয়বার ঘরের মাঠে হারল চেন্নাই। মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাটিং দেখে অনেকেই ভেবেছিলেন, হয়তো দিল্লির বিরুদ্ধে ম্যাচটা জিতে যাবে। কিন্তু তা হলো না। সবসময় বলা হতো, চিপক বলতেই চেন্নায়ের জয়ের ডেরা। তাই এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, অন্যান্য মাঠের মতোই চিপকের উইকেট কথা বলবে? যেমন চলতি মরশুমে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু প্রায় ১৭ বছর পরে চেন্নাই সুপার কিংসে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়ে দিয়েছে। চেন্নাই দল হারের হ্যাটট্রিকে নাম লিখিয়ে ফেলল। যে দলটা পাঁচবার আইপিএল খেতাব জিতেছে, তাদের কাছ থেকে এই পারফরম্যান্স আশা করা যায়নি।

দিল্লি ক্যাপিটালস প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ১৮৩ করে। টসে জিতে দিল্লি ক্যাপিটালসের অধিনায়ক প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। এই মরশুমে প্রথমবার ওপেনার ব্যাটসম্যান হিসেবে মাঠে নামেন কে এল রাহুল। আর অন্যদিকে ব্যাট করতে আসেন জ্যাক ফ্রেজার। প্রথম ওভারেই চেন্নাইয়ের খলিল আহমেদ পরপর দুটো উইকেট তুলে নেন। স্বাভাবিকভাবে সতর্ক হয়ে পড়েন অভিষেক পোড়েল। রবীন্দ্র জাদেজার বলে তাঁর ছন্দপতন হয়। অভিষেক ২০ বলে ৩৩ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। অন্যদিকে কে এল রাহুল বেশ ধীরেসুস্থে খেলেছেন। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ৭৭ রানে আউট হয়ে যান রাহুল। তিনি খেলেছেন ৫১টি বল। এইভাবেই রাহুল জবাব দিলেন সমালোচকদের। দলের হয়ে অক্ষর প্যাটেল ২১, সুনীল রিজভি ২০, ট্রিস্টান স্টাপস ২৪ রান করেন। খলিল আহমেদ দুটো উইকেট পেলেও রবীন্দ্র জাদেজা, নুর আহমেদ ও মাথিশা পাথিরানা একটি করে উইকেট পান। তবে ব্রিপজ নিগমের ঝুলিতে দুটো উইকেট গিয়েছে।

১৮৪ রান টার্গেট নিয়ে চেন্নাই দল জেতার জন্য মাঠে নামে। কিন্তু দিল্লির বোলারদের কাছে বার বার পরাস্ত হতে হয় চেন্নাইয়ের ব্যাটসম্যানদের। মাত্র ৭৪ রানের মধ্যে পাঁচটি উইকেট হারাতে হয় তাদের। রাচিন রবীন্দ্র ৩, ডেভন কনওয়ে ১৩ ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ৫, শিবম দুবে ১৮ ও রবীন্দ্র জাদেজা মাত্র ২ রান করে আউট হয়ে যান। তবে বিজয় শংকর বেশ কিছুটা সময় উইকেটে দাঁড়িয়ে দলের অবস্থান পরিবর্তন করতে চেষ্টা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ৬৯ রানে আউট হয়ে যান। আবার মহেন্দ্র সিং ধোনি ৫ উইকেট পতনের পর মাঠে আসেন। কিন্তু ধোনি সেইভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি।


ধোনি ৩০ রান করে আউট হয়ে যান। অনেকের অভিমত, মন্থর উইকেটে ব্যাটসম্যানরা সেইভাবে রান করতে পারেননি।
চেন্নাইয়ের ইনিংস থমকে যায় ১৫৮ রানে। ২৫ রানে হার স্বীকার করে লজ্জায় চেন্নাকে মুখ লুকাতে হয়। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, কয়েকদিন আগে চেন্নাই সুপার কিংসের অধিনায়ক ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের কনুইয়ে চোট ছিল। তাই তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় ছিল। তবে টস করতে নামার পরেই বোঝা গিয়েছিল ঋতুরাজ আজ প্রথম একাদশে থাকছেন। দিল্লির অধিনায়ক জয় পাওয়ার পরে বলেন, খুব ভালো লাগছে চেন্নাইকে হারাতে পেরে। এদিন ফাফ ডুপ্লেসির জায়গায় প্রথম একাদশে দিল্লি দলে রাখা হয় সমীর রিজভিকে। অন্যদিকে চেন্নাই দলে ওভারটনের জায়গায় ডেভন কনওয়ে এবং রাহুল ত্রিপাঠীর জায়গায় মুকেশ চৌধুরীকে জায়গা দেওয়া হয়েছে।

এই খেলার পরে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, চেন্নাই দলের প্রাক্তন অধিনায়ক এমএস ধোনি কি আইপিএল ক্রিকেটের পর অবসর নেবেন? যেমন হঠাৎ করে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন ধোনি। তেমনই কি আইপিএল ক্রিকেট থেকে এই মরশুমের পরে ঘুরে দাঁড়াবেন?

আইপিএল ক্রিকেটের কথা উঠলেই চেন্নাই সুপার কিংসের নামটা যেমন উঠে আসে, পাশাপাশি চেন্নাইয়ের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে এমএস ধোনির নামটা সবার মুখে মুখে ঘোরে। তাই তো ধোনির খেলা দেখতে ছুটে আসেন সমর্থকরা। তাঁর খেলার মধ্যে আলাদা একটা ঘরানা আছে। যা দেখে মুগ্ধ হতে হয়। তারপরে তাঁর ব্যাট যদি ঝলসে ওঠে, তা যে কত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে অনেকেরই জানা আছে। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে তিনি ওস্তাদ। তাঁর ব্যাট থেকে যখন ছক্কা ও বাউন্ডারি উড়ে আসে, তখন সমর্থকরা বাহবা বাহবা বলে চিৎকার করতে থাকেন। তাই ধোনি সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয় হয়ে ওঠেন। এ তো গেল শুধু ব্যাটিংয়ের কথা। তারপরে গ্লাভস হাতে নিয়ে উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে দুরন্ত ক্যাচ ধরে বা রানআউট করে ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে দেন, তখন উল্লাসে সারা গ্যালারি মেতে ওঠে। আর শনিবার চেন্নাই সুপার কিংসের সঙ্গে খেলা ছিল দিল্লি ক্যাপিটালসের। সেই খেলা দেখার জন্য সপরিবারে হাজির হয়েছিলেন।

ধোনির বাবা, মা, স্ত্রী ও কন্যা জিভা ছিলেন। এমনিতে মা-বাবা কখনওই ধোনির খেলা দেখতে সেইভাবে মাঠে আসেন না। কিন্তু ব্যতিক্রম শনিবারের দিনটা দেখতে পাওয়া গেল। গ্যালারিতে বসে ধোনির বাবা পান সিং ও মা দেবীকা দেবী দু’চোখ ভরে খেলা দেখলেন ছেলের। দিল্লি ক্যাপিটালসের সঙ্গে খেলায় দারুণ একটা রান আউট করলেন ধোনি। তখন ব্যাট করছিলেন অভিষেক শর্মা। জাদেজার থ্রোকে হাতে মুঠো করে তিনি যেভাবে অভিষেককে আউট করলেন, তা ভাবা যায় না। ৪৩ বছরের ধোনির এই রান আউটটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।