মর্যাদার লড়াইয়ে তৃতীয় টেস্টে বাজিমাৎ করতে চান অধিনায়ক শুভমন

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ভারত ও ইংল্যান্ডের পাঁচ টেস্ট সিরিজের ইতিমধ্যেই দু’টি খেলা হয়ে গিয়েছে। প্রথম টেস্টে ভারতকে হারতে হয়েছিল ইংল্যান্ডের কাছে। আর এজবাস্টনে দ্বিতীয় টেস্টে তার জবাব দিয়ে ভারত জয় তুলে নিয়েছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ভারতের ক্রিকেটাররা যে সাহসী ভূমিকা নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছিলেন, তা অবশ্যই কুর্নিশ করার মতো। বিশেষ করে অধিনায়ক শুভমন গিলের অসাধারণ ব্যাটিং ভারতীয় দলকে এগিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি, বোলাররা যে বিধ্বংসী বোলিং করেছেন, তাও দেখার মতো।

কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে যশপ্রীত বুমরা খেলছেন না, তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভারতের বোলিং ব্রিগেড সেইভাবে দুরন্ত ভূমিক নিতে পারবে না। কিন্তু অবাক হতে হয়, আকাশদীপ ও শার্দুল ঠাকুররা যেভাবে বিধ্বস্ত করেছেন ইংল্যান্ড দলকে, তার কোনও জবাব নেই। যেভাবে দল গঠন হয়েছিল, তাতে স্পষ্ট বোঝা গিয়েছে, প্রথম সারির ব্যাটসম্যানরা যদি রান তুলে দিতে পারেন স্কোরবোর্ডে তাহলে ম্যাচ জেতাটা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। পাশাপাশি, বোলারদেরও ভূমিকা থাকবে বিপক্ষ দলের শিবিরকে ভেঙে দেওয়ার ভাবনায়। দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের ব্যাটসম্যান ও বোলাররা যেভাবে ইংল্যান্ড শিবিরে ধ্বস নামিয়েছেন, তাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, জয়ের পথটা কখনওই কঠিন হবে না। অধিনায়ক শুভমনের বুদ্ধিমত্তা এবং কৌশলগত পরিকল্পনায় ভারত বাজিমাৎ করেছে।

লর্ডসের মাঠ ভারতের কাছে খুব প্রিয়। অবশ্যই সবার মনে আছে, এই মাঠেই অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি অসাধারণ ব্যাটিং করে ভারতের জয়কে নিশ্চিত করেছিলেন। আর সেদিন সৌরভ গেঞ্জি উড়িয়ে দিয়ে দাদাগিরি দেখিয়েছিলেন। ঠিক সেইভাবেই লর্ডসের মাঠে ভারতীয় দল একটা নতুন অধ্যায় রচনা করতে চায়। তার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন ক্রিকেটাররা। অনুশীলনে জোরদার প্রস্তুতির প্রেক্ষাপট দেখা গিয়েছে ভারতীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে। তবে যশপ্রীত বুমরা আবার দলে ফিরছেন, তা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই।


যশপ্রীত বুমরা দলে আসা মানেই বোলিং ব্রিগেডে আরও একধাপ এগিয়ে থাকবে। নিঃসন্দেহে এই মুহূর্তে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন বুমরা। প্রথম টেস্টে বুমরা প্রথম ইনিংসেই পাঁচটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর ভাগ্যে কোনও উইকেট না থাকলেও ভালো বোলিং করেছিলেন। কিন্তু লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা সেইভাবে রান দিতে না পারায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। প্রথম টেস্টে উইকেট রক্ষক ঋষভ পন্থ দুটো ইনিংসেই শতরান করেছিলেন। এ বাদে যশস্বী জয়সওয়াল, লোকেশ রাহুল ও অধিনায়ক শুভমন গিল শতরান করেন। দ্বিতীয় টেস্টে রেকর্ড করে অধিনায়ক দ্বিশতরান করেন। অর্থাৎ পরপর দু’টি টেস্টেই শতরান করার কৃতিত্বে অধিনায়ক শুভমন গিল।

অধিনায়ক শুভমন গিলের কাছে অত্যন্ত মর্যাদার লড়াই হিসাবে দেখা দেবে তৃতীয় টেস্ট ম্যাচ। ইতিমধ্যেই ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে স্বপ্নের ফর্মে থাকা একের পর এক রেকর্ড ভেঙে এগিয়ে চলেছেন। তাই লর্ডসের মাঠে ভারতের অধিনায়কের ভূমিকা একেবারে অন্যরকম হবে। তার প্রধান কারণ হল, পরপর দুটো টেস্টে শতরান উপহার দিয়ে আইসিসি ক্রম তালিকায় ব্যাটসম্যান হিসেবে শুভমন প্রথম দশজেনের মধ্যে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। শুভমন ১৫ ধাপ এগিয়ে এসেছেন। ভারতীয় দল থেকে হয়তো প্রথম একাদশে থাকতে পারছেন না করুণ নায়ার।

আবার যদি পেস বোলারের সংখ্যা বাড়ানো হয়, সেক্ষেত্রে কুলদীপ যাদবকে নিয়ে আসা হতে পারে। তখন ওয়াশিংটন সুন্দরের কথা ভাবা হবে অন্যভাবে, তা নির্বাচকরা ভাবতে শুরু করেছেন। এদিকে বৃহস্পতিবার মাঠে নামার আগে ইংল্যান্ড দল প্রথম একাদশের নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। প্রথম দু’টি টেস্ট থেকে মাত্র একজন বদল হয়েছেন। দলে ফিরছেন বোলার জফ্রা আর্চার। বাদ চলে যাচ্ছেন জস তাং। দ্বিতীয় টেস্টে আর্চার দলের মধ্যে থাকলেও মাঠে নামতে পারেননি। চোট সারিয়ে তিনি দলে ফিরেছেন। আসলে ইংল্যান্ড দলের কোচ ব্র্যান্ডন ম্যাকালাম দ্বিতীয় টেস্টের হারটা ভালোভাবে নিতে পারেননি। তাই লর্ডসের মাঠে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পরে, চার বছর বাদে আবার দলে এলেন আর্চার। ২০২১ সালে ভারতের বিরুদ্ধে আহমেদাবাদের মাঠে শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলেন। তারপরে লাল বলে দেশের মাটিতে খেলতে নামবেন তিনি। কোচ মনে করছেন আর্চার দলে আসাতে খেলার চেহারা বদলে যাবে।

এদিকে সৌরভ গাঙ্গুলি শুভমন গিলকে সতর্ক করে বলেছেন, আত্মবিশ্বাস ভালো, কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাস কখনওই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। দ্বিতীয় টেস্টে ঐতিহাসিক জয়ের পরে যেভাবে প্রশংসার ঢল যেভাবে নেমেছে, তাতে অনেকেরই মানসিকতার পরিবর্তন হতে পারে। আমার দেখা অবশ্যই ভারতীয় দলে সেরা পারফরম্যান্স। তাতে এতটুকু অবাক হওয়ার কোনও কারণ নেই। সবেমাত্র অধিনায়ক হিসেবে শুভমনের এই সাফল্যকে মেনে নেওয়া উচিত। এখনও তিনটি টেস্ট ম্যাচ বাকি রয়েছে। চাপের মধ্যে থাকতে হবে। তাই সবরকম সতর্কতা নিয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।