বিরাটের ১১৩ রানের পাল্টা বাটলার ১০০

রাজস্থানের কাছেও হারল আরসিবি

জয়পুর— কে সামনে থাকে! রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু নাকি বিরাট কোহলি! আরসিবি ফ্যানদের কাছে বিরাট আলাদা এক চরিত্র হলেও তাঁরা চান দলও জিতুক৷ একসঙ্গে দুটো কখনই হচ্ছে না৷ এবারের আইপিল মরশুমে বিরাট রান পেলে আরসিবি মোটেও পেরে উঠছে না৷ সাফল্যের থেকে ব্যর্থতার হার অনেক বেশি৷ তাই মেয়েদের পর ছেলেরা চ্যাম্পিয়ন হবে, এই স্বপ্ন অতি বড় আরসিবি সমর্থক এখন আর দেখছেন না৷ এবার একটা মাত্র জয় দিয়ে আরসিবি খুঁডি়য়ে চলছে৷ এই দল কখন মাথা চাড়া দিয়ে তার উত্তর কারোর কাছে নেই৷ এমন কি বিরাট নিজেও বলতে পারবেন না, পরের ম্যাচে আমরা ঠিক ঘুরে দাঁড়াব৷ এইরকম আশা নিয়ে ফ্যানরা শুরু থেকে ছুটছেন৷ কিন্ত্ত আসল গল্প কি! হার আর হার৷ এটাই এখন আরসিবি ম্যাচের মূল কাহিনি৷

তার থেকে বরং বিরাট নিয়ে কথা বলা যেতে পারে৷ পাঁচ ম্যাচের কথা না হয়ে একটু পিছন থেকে শুরু করা গেলে দোষএর কিছু নেই৷ শুরুতে বলে রাখা ভাল এই ম্যাচের পর জাতীয় নির্বাচক কমিটির প্রধান অজিত আগারকারের নোট বুকে বিরাট কোহলির নাম কি লেখা হয়ে গেল৷ মাস খানেক আগে হঠাৎ করে বোমা ফাটিয়ে দেন নির্বাচকরা৷ তাঁরা নাকি ঠিক করে ফেলেছেন যে আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে বিরাটকে বাইরে রেখে দল গড়া হবে৷ এই ভাবনা তাঁদের মাথায় আসে গত বছরের শেষদিকে৷ তাই তাঁরা দক্ষিন আফ্রিকা সিরিজে এ নিয়ে বিরাটের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথাও বলেছিলেন৷ কিন্ত্ত চূড়ান্ত না হওয়ায় সেই আলোচনা চাপা পডে় যায়৷ কিন্ত্ত খবর বাইরে আসার পর ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা জানিয়ে দেন বিশ্বকাপ দলে তাঁর বিরাটকে চাই৷ এখানেই দোটানায় পডে়ন নির্বাচকরা৷ ঠিক হয় আইপিএলে বিরাটের খেলা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ তো আরসিবি-র পাঁচ ম্যাচের পর কি সিদ্ধান্তে তাঁরা এলেন৷ বিরাট আপাতত দুটি হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে একটি সেঞ্চুরিও করে ফেললেন৷ যেমন এদিন শনিবার রাতে জয়পুরের মান সিং স্টেডিয়ামে৷ তাঁর ৭২ বল খেলে অপরাজিত ১১৩ রানের ইনিংস (১২টি বাউন্ডারি ও ৪টি ওভার বাউন্ডারি) কি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে গেল না! স্ট্রাইক রেট ১৫৮৷ এরপরও নির্বাচকরা খুশি না হলে তিনি কী করবেন৷


জয়পুরে টস হেরে অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসিকে নিয়ে ওপেন করতে নেমে একদিকে বিরাট য়ে অসাধারণ ইনিংস খেললেন তার জবাব কে দেবেন! ১৪ ওভারে দলের ১২৫ রানের মাথায় ফাফ (৪৪) যখন আউট হলেন, তখন মেন হয়েছিল আরসিবি হয়তো দুশো রানের গন্ডী পার করে যাবে৷ কিন্ত্ত একদিক থেকে উইকেট পড়তে তার আগে থেমে যেতে হল আরসিবি-কে৷ রান পেলেন না ম্যাক্সওয়েল (১), সৌরভ চৌহান (৯)৷ গ্রিন ৫ রানে অপরাজিত থাকলেন৷ এখানে বিরাট একা কী করবেন৷ অনেকেই বলছেন স্ট্রাইক রেট ১৮০ থেকে ২০০ করতে না পারলে আজকের ক্রিকেটে এই ফরম্যাটে লাভ নেই৷ তাই নাকি বিরাটকে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷ তা হলে রানের থেকে স্ট্রাইক রেট বড় হয়ে গেল৷ ১০ বল খেলে ৩০ রান করে আউট হয়ে গেলে তখন কি বিরাট নিয়ে কথা উঠত৷ তখন বলা হত রান কোথায়! স্ট্রাইক রেট তখন আলোচনা থেকে হারিয়ে যেত৷ আসলে এই সব কথা বলে লাভ নেই৷ বিরাটের মতো ব্যাটসম্যানদের নিতে হলে এমনিতে নেওয়া হবে৷ না হলে ওই সব স্ট্রাইক রেটের ধোঁয়া তুলে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলবে৷

তবে আরসিবি এদিন জিতলে কি কথা ঘুরে যেত৷ না, সেটাও হত না৷ এই ম্যাচে বিরাটের পাল্টা দিয়ে সেরার পুরস্কার নিয়ে গেলেন জোস বাটলার৷ এই মরশুমে রান পাচ্ছিলেন না৷ যেমন রান পাচ্ছেন না যশ্বসী জয়সওয়াল৷ এদিনও পেলেন না৷ বরং তিনে এসে স্যামসন খেলে গেলেন ৬৯ রানের ইনিংংস৷ শুরুতে কিপিং করছিলেন না৷ কিন্ত্ত ভুল বুঝতে পেরে জুরেলকে সরিয়ে তিনি কিপিংয়ে চলে গেলেন৷ জুরেল খেলছেন ব্যাটসম্যান হিসেবে৷ তিনিও আলোচনায় নেই৷ তাঁর ব্যাটে রান নেই৷ তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যোগ হল ১৪৮ রান৷ ১৪.২ ওভারে৷ ওভাার প্রতি দশ রানের কিছু বেশি৷ সেখান থেকে ম্যাচ হারার ব্যাপার ছিল না৷ অপেক্ষা ছিল বিরাটের মতো বাটলার কি সেঞ্চুরি পাবেন৷ পেলেন৷ গ্রিনকে মাঠের বাইরে ফেলে দলকে জেতানোর পাশাপাশি নিজের সেঞ্চুরি করে ফেললেন৷

১৮৩ রান করেও ম্যাচ জিততে না পারার পিছনে নিজেদের দোষ দিচ্ছেন ফাফ৷ তিনি বলছেন আরও কুডি় রান আমাদের বেশি করা উচিত ছিল৷ কিন্ত্ত বোলারদের নিয়ে একটা কথাও তিনি বলেননি৷ জাতীয় দলে খেলা সিরাজ কবে ভাল বল করবেন৷ ভাল মানে উইকেট কবে পাবেন৷ এদিনও এক উইকেট নিয়ে সন্ত্তষ্ট থাকতে হল৷ সব থেকে বড় ব্যাপার এটাই যে দলের দুই বোলার হিমাংশু শর্মা ও মায়াঙ্ক দাগারের জন্য যে ম্যাচ হাতছাড়া হল সে কথা কেউ বলছেন না৷ তাঁদের বোলিং পরিসংখ্যান একবার দেখে নেওয়া যেতে পারে৷ দাগার দু’ওভারে দিলেন ৩৪ রান৷ আর হিমাংশু দু ওভারে ২৯ রান৷ তা হলে দুই বোলার মিলে চার ওভারে দিলেন ৬৩ রান৷ ম্যাচ তো এই জায়গায় বেরিয়ে গেল৷ এটা কে বলবে!